ছোট বাইকের বড় রিভিউ লেখার নিমিত্তে RUNNER কর্তৃক কোনোভাবে অনুপ্রাণিত না হয়ে সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছায় সময় স্বল্পতায় সময় বের করে অভ্রে খোঁচাখুঁচি শুরু করছি মহান সৃস্টিকর্তার নাম নিয়ে।
.
নামঃ RUNNER DAYANG AD80-S DELUXE
সিসিঃ 85 CC
প্রস্তুতকৃত স্থানঃ চায়না
মূল্যঃ নগদ ৭৩ হাজার ( ১০ হাজার মূল্যছাড়)
তারিখঃ ১৯ মার্চ, ২০১৭
প্রথমেই বলছি এই বাইকটি কেনার কারণ।
আমার লং ট্যুর বা ট্রাভেলিং এর শখ খুবই কম, বাইকে তো নয়-ই।
বাসা-অফিস-বাসা করার জন্য মোটামুটি মাপের একটা বাইক কেনার ইচ্ছা ছিলো। দেশে খুব একটা দীর্ঘ সময় অবস্থান করার সম্ভাবনা ক্ষীণ হবার কারণে ২/৩ বৎসর আরামমতো চালানোর জন্য স্বল্পমূল্যে ভালোমানের বাইক কেনার ইচ্ছায় এই বাইক কেনা।
বাজারে ৮০/৯০ হাজারের বেশকিছু বাইক থাকলেও এটিকেই বেশি ভালো মনে হয়েছিলো আমার। আর সত্যি বলতে মনের মাঝে একটা সুপ্ত বাসনাও কাজ করছিলো। তা হলো, এমন একটা বাইক কিনবো যা বিক্রি না করে ঘরে তুলে রেখে ভবিষ্যত নাতিপুতিদের এ্যান্টিক পিস হিসেবে দেখাবো।
সেই হিসেবে হোন্ডা প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু হোন্ডার স্প্রোকেট রিম আর লাল-সিলভার রঙের মিশ্রণ পছন্দ নয় বলে ডিলাক্সকেই প্রাধান্য দিয়েছিলাম।
বাইকটার খারাপ দিকগুলো আগে বলি-
* পিকআপ বেশ কম
* ফ্রন্ট সাসপেনশন মোটামুটি মানের
*স্টক হেডলাইট টর্চলাইটের মতো
*প্রথম ১/২ হাজারের মধ্যে বাইকে বসলেই ক্যাচরক্যাচর শব্দটা রানারের হবেই হবে
*পিছনের চাকা ভয়াবহ পরিমাণে স্কিড করে
*সিটের প্রশস্ততা একটু কম
*ওডোমিটার অজানা কারণে একটানা ঘন্টাখানেক টপস্পিডে চালালে লাফালাফি শুরু করে
**রানারের জাতীয় সমস্যা- বাইক ইঞ্জিন হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়**
উপরে যেগুলো দোষত্রুটি বললাম তা নিতান্তই ছোটখাটো ত্রুটি।
এবার আসি গুণের ব্যাপারে-
*লুক কমিউটার বাইকের মধ্যে দাম ও মানের বিচারে সেরা তিনের একটি
*ইন্ডিকেটরগুলো বাজাজ মডেলের ও টেকসই
*ফুয়েল ক্যাপাসিটি ১১ লিটার( ম্যানুয়াল এ ৯ লিটার, এটা ভুল) হলেও ৫৫+ গড় মাইলেজের কারণে অনেক পথ নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
*বাইক হিসেবে ব্রেকিং ড্রাম হলেও দারুণ কার্যকরী
*টার্নিং রেডিয়াস কম হওয়ায় অল্প জায়গায় ঘোরানো যায়
*পিলিয়নসহও বাইকটি চালনা আরামপ্রদ
*সুন্দর ব্যাকলাইট মন কাড়ে
এগুলো বললাম স্বাভাবিক গুণ। এবার বলবো অস্বাভাবিক কিছু গুণের কথা যা আমার ডিলাক্সে আমি নিয়মিত পাচ্ছি
*সামনে পেছনের স্টক টায়ার ৩" /১৭" টিউবলেস করে লাগিয়েছি
*পেছনে টিভিএস এ্যাপাচি ফ্রন্ট টায়ার ৯০/৯০ ১৭" টিউবলেস লাগিয়েছি।
*টায়ারে জেল ব্যবহার করেছি
*থাইল্যান্ডের ইম্পোর্টেড সাইলেন্সার মাফলার লাগিয়েছি
এওকিছু করার পর ভেবেছিলাম টপস্পিড ও মাইলেজে চরম ধাক্কা খাবো। কিন্তু না, পিলিওন ( ৫০+ কেজি) ও বড় লাগেজ ( ২০+ কেজি) সহ যমুনা সেতুতে উঠার সময় একটানা ৩/৪ কিলো পথ ১০১ কিমি/ ঘন্টা আর সেতু থেকে নামার সময় ১০৪ কিমি/ ঘন্টা পেয়েছি ঢাকা-বগুড়া ট্যুরের সময়।
*একটানা ৮০/৮৫ কিলো পথ পিলিওনসহ ৯০+ স্পিডে চালানোর পর ৭/৮ মিনিটের বিরতি নয়ে পুণরায় সমপরিমাণ পথ অতিক্রম করেছি। এসময় ইঞ্জিন তেমন একটা গরম হয়নি বললেই চলে। সোজা কথায় ঢাকা-বগুড়া ২০১ কিলো পথ একবার মাত্র ৭/৮ মিনিট বিরতি নিয়ে ভ্রমণ করেছি।
*মাইলেজ ঢাকায় প্রথম প্রথম ৪০/৪৫ পেলেও এখন ৫৫+ পাই আর হাইওয়েতে ৬০+ পেয়েছিলাম উচ্চগতিতে চালানোর পরেও।
*টায়ার চেঞ্জ করায় আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। গ্রিপ, কর্ণারিং, স্পিড ও মাইলেজ সব ঠিক আছে
*৩ নং গিয়ারে মহাখালী ফ্লাইওভারে ওঠার সময় নিয়মিত ৭৫+ স্পিড পাই
*স্টক ব্যাটারীটা আসলেই অনেক ভালো। ৭ এ্যাম্পিয়ার এর ব্যাটারীটা দিয়েই একটি ৪০ ওয়াটের HID ও ১২+১২ ওয়াটের দুটো ফগলাইট দিব্যি চালাচ্ছি। সাথে ব্লিংকার তো আছেই
*স্টক হর্ণটাও দারুণ
লুকিং গ্লাসটা বাজে ছিলো। হিরো গ্ল্যামারের টা লাগিয়েছি। হ্যান্ডেলবার ও চাপা হিরো হাংকেরটা লাগিয়েছি
এয়ার ফিল্টার বা ব্রেক প্যাড এখনো পাল্টানোর প্রয়োজন মনে করছি না
ওয়্যারিং এর কাজ নিজেই করি
৫০০০ কিমি হয়ে গেছে। সার্ভিসিং ২ বার করেছি। রানারে কেনার দিনের পর একবার গিয়েছিলাম।
তারপর ওমুখো হইনি। নতুন গাড়ি মড করায় ওয়ারেন্টিও ফুড়ুৎ হয়ে গেছে।
প্রথম ২৫০০ কিলো Castrol 20/40 ব্যবহার করেছি। এখন MOTUL 20/50 pure synthetic ব্যবহার করছি
বাইকটার টান কম কেবল রেডি পিক আপের সময়। ধানমন্ডি, রামপুরা, মগবাজার এর হাটুপানিতে নিয়মিত সাঁতার কাটতে কাঁটতে পাকা সাঁতারু হয়ে গেছে বাইকটা। রাস্তায় অনেক বন্ধ ইঞ্জিনের গাড়িকে টাটা বাই বাই বলে দিব্যি আমার মতো ৮৬ কেজি মানুষটাকে নিজে ৯৬ কেজির ছোট্ট বাঘ হয়েও বয়ে নিয়ে গেছে জল কাদা ডিঙিয়ে।
হাইওয়েতে অনুভবই করিনি বাইকটির ওজন কম কিনা। আর স্পিড ৭০/৮০ তে ভাইব্রেশন যেটা পেয়েছি সেটা অন্য সব বাইকের মতোই। নিয়মিত ৬০/৬৫ তে চালানোর ফলে সম্ভবত ভাইব্রেশন অনুভব করিনা
এখন পর্যন্ত মড করা ছাড়া বাইকের কিছুই পাল্টাইনি।
অনেক বলেছি। আরও কি যেনো মিস হয়ে গেলো। বলবো সময় করে।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
সবসময় সেফটি গিয়ার ব্যবহার করুন