যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা, অভিরুচি পরিবর্তন হচ্ছে সেই সাথে মানুষ এখন সময় নিয়ে খুব বেশি সচেতন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য এখন অনেকেই দ্রুততম মাধ্যম খুঁজেন আর যদি সেটা নিজের ব্যাক্তিগত বাহন হয় তাহলে তো সময় ও শ্রম আরও বেঁচে যায়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোটরসাইকেলের চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সাথে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের রুচিতে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে নিত্য নতুন ডিজাইনের বাইক বাজারে সরবরাহ করছে। অনেক কোম্পানীগুলো বহুকাল ধরে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে ব্যবসায় পরিচালনা করে আসলেও নতুন নতুন কোম্পানীগুলো অত্যাধুনিক বাইক নিয়ে এসে পুরোনো ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের বাজারে নতুন আগত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হচ্ছে এফকেএম। এফকেএম এর বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক হচ্ছে স্পীডোজ লিমিটেড। স্পীডোজ লিমিটেড বাংলাদেশের বাইকপ্রেমীদের কাছে খুবই পরিচিত একটি এবং এই স্পীডোজ লিমিটেড থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা যায় যে এফকেএম হচ্ছে জার্মানি একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানী। এফকেএম বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের নতুন মোটসাইকেল এফকেএম স্ট্রিট ফাইটার ১৬৫ এসএফ। তাই আর দেরি না করে চলুন পরিচিত হই বাইকটি ও বাইকটির ফিচারসের সাথে।
ডিজাইন
এই বাইকটিতে আধুনিক আঙ্গিকে ডিজাইন করা হয়েছে যা বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য বাইকের থেকে ডিজাইন দিয়ে এর কিছুটা হলেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সামনের কালো এলয় রিম থেকে শুরু করে পেছনের হলুদ এলয় রিম পর্যন্ত রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিশেষ করে হেডল্যাম্পটি আপনার প্রথম নজর কাড়বে কারণ এখানে এলিডি হেডল্যাম্প খুব সুন্দরভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। অন্যদিকে মোটাসোটা ফুয়েল ট্যংক, স্প্লিট সিটিং পজিশন, সুন্দর কালার কম্বিনেশন এসব কিছু বাইকটির ডিজাইনে আধুনিক একটা তকমা লাগিয়েছে।
ডাইমেনশন
শুধুমাত্র একটি বাইকের ডিজাইন ভালো হলে দেখতে ভালো হয়না এই ডিজাইনের সাথে ডাইমেনশন সরাসরি জড়িত। একটি বাইকের ডিজাইন ও ডাইমেনশন যদি পারফেক্ট হয় তাহলে সেটি বাইকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলে। এই বাইকের ডাইমেনশনে রয়েছে লম্বায় ২০১৮মিম , চওড়ায় ৮০৫ মিমি, উচ্চতায় ১০৮৫মিমি। এছাড়াও বাইকের হুইলবেজ রয়েছে ১৩৬০মিমি, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৮০মিমি এবং সব কিছু মিলিয়ে বাইকের ওজন রয়েছে ১৪০কেজি।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিনকে একটি মোটরসাইকেলের হৃদয় বলা যায় কারণ বাইকের সব কিছু ঠিক থাকলেও ইঞ্জিনের যদি কোন সমস্যা গ্রাহকদের অনুভব করে তাহলে সেটি ব্যর্থতার খাতায় নাম লিখায়। এফকেএম তাদের এই বাইকটিতে ভালো মানের ইঞ্জিন সরবরাহের চেষ্টা করেছে। এখানে তারা ব্যবহার করেছে ১৬৪ সিসির এয়ার কুল্ড, ৪ স্ট্রোক, সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যা ম্যাক্স পাওয়ার ১৫ বিএইচপি@ ৮০০০ আরপিএম এবং ম্যাক্স টর্ক ১৪.৫ এনএম @ ৭৫০০ আরপিএম সরবরাহ করে। কোম্পানী দাবি করে যে তাদের এই বাইকটির ইঞ্জিন টপ স্পীড ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টা এবং ৪৫ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ সরবরাহ করতে পারবে। ইঞ্জিনের বিশেষ একটি গুন হচ্ছে এটি ইএফএই সমৃদ্ধ যার ফলে গ্রাহকদের অধিক পারফরমেন্স ও মাইলেজ পাবেন। এদিকে ইঞ্জিন চালু করার জন্য শুধুমাত্র ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন ও ৫ স্পীড গিয়ার বক্স রয়েছে।
ব্রেকিং
ব্রেকিং সিস্টেমেও রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া অর্থাৎ এটি সিবিএস ব্রেকিং সমৃদ্ধ একটি বাইক। সামনে পেছনে উভয় দিকেই রয়েছে ডিস্ক ব্রেক এবং এখানে সিবিএস প্রযুক্তি থাকার ফলে রাইডাররা অনেক ভালো ব্রেকিং অনুভব করতে সক্ষম হবেন।
সাসপেনশন
সাসপেনশন বাইকের আরামদায়ক রাইডিং অনুভতি জোগায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বাইকের সাথে ভালো মানের সাসপেনশন সরবরাহ করা খুবই প্রয়োজন এবং এফকেএম এই বাইকের সাসপেনশন নিয়ে কোন আপোষ করেনি। সামনের দিকে তারা ব্যবহার করেছে আপ সাইড ডাউন সাসপেনশন এবং পেছনের দিকে রয়েছে মনোশক সাসপেনশন। সামনের ইউএসডি সাসপেনশনের ফলে রাইডাররা রাইড করে খুব ভালো অনুভূতি পাবেন।
টায়ার
কালারফুল এলয় রিমের সাথে সামনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ১১০/৭০-১৭ সাইজের টায়ার এবং পেছনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ১৩০/৭০-১৭ সাইজের মোটা টায়ার। আশা করা যায় বাংলাদেশের রাস্তার জন্য এই টায়ারগুলো যথেষ্ট ভালো পারফরমেন্স দিতে সক্ষম হবে।
ইলেক্ট্রোনিক ও মিটার কনসোল
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্টের একটি ব্যটারী এবং এই ব্যাটারির মাধ্যমে এলিডি হেডল্যাম্প,এলিডি টেল ল্যাম্প, এলিডি সাইড ইন্ডিকেটর ইত্যাদিতে শক্তি সরবরাহ করে।
মিটার কনসোলটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল এবং এখানে রয়েছে আরপিএম ইনডিকেটর, ফুয়েল গেজ, স্পিডোমিটার সহ রাইডারের প্রয়োজনীয় সকল ফিচারস।
সবশেষে বলা যায় যে সদ্য আগত এই বাইকটিতে রয়েছে আধুনিক ফিচারসে পরিপূর্ণ যা রাইডারের চাহিদা মেটাতে অনেকাংশে সক্ষম হবে। বাইকটির ৩টি ভিন্ন রং বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো হল- হলুদ,লাল ও নীল। আশা করা যায় এই বাইকটি বাংলাদেশের রাস্তায় খুব ভালো পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।