জিপিএক্স থাইল্যান্ডের বাজার সফলভাবে পথ পাড়ি দেবার পর, বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে এক বছর আগে। তাদের একটি ফ্ল্যাগশিপ বাইক বলা চলে, GPX Demon GR165R আমাদের দেশে বেস্ট লুকিং স্পোর্টস বাইকের মধ্যে একটি এবং সেই সাথে রয়েছে ভাল পারফরম্যান্সও। এরোডাইনামিক ডিজাইন আপগ্রেড করা থেকে শুরু করে ওয়াইডার রেডিয়াল স্পোর্টস ট্র্যাক টায়ার সবকিছুই বেশ আকর্ষনীয় এবং অন্যান্য স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইককে চ্যালেঞ্জ করেছে বেশ ভাল ভাবেই। এছাড়াও, বাজেটটাও খুব সহনীয়। যাইহোক, এত কিছু সত্ত্বেও বাইকে বেশ কিছু মডার্ন ফিচারের অভাব ছিল। সম্প্রতি GPX-এর অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর Speedoz LTD, GPX Demon-এর একটি রিফ্রেশড মডেল বাজারে নিয়ে এসেছে, নাম হচ্ছে GPX Demon GR 165RR, যা ব্যবহারকারীদের সমস্ত প্রয়োজনীয় ফিচারের সাথেই বাজারে এসেছে। এই বাইকটিতে স্পোর্টস বাইক প্রেমীদের জন্য আরও অনেক কিছু রয়েছে, সেগুলি কী তা জানতে চান, তাহলে চলুন এই বাইক সম্পর্কে আলোচনা করি।
GPX Demon GR 165RR এর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য:
নজরকাড়া স্পোর্টস লুক এবং ডিজাইন:
রেস ট্র্যাক থিমের চিন্তাভাবনা নিয়ে GPX Demon তৈরি করা হয়েছিল, তার কারন হচ্ছে এই বাইকের টার্গেটেড ইউজার হচ্ছে স্পোর্টস বাইক লাভার। GPX Demon GR 165RR বাইকের জন্যও সেই একই ফ্রেমিং এবং ডিজাইন ব্যাবহার করা হয়েছে, তবে বেশ কিছু কস্মেটিক্স পরিবর্তন এবং নতুন কালার স্কীম বাইকটিকে আরো লভনীও করে তুলেছে। সামনের দিক থেকে শুরু করলে, এর ডুয়াল স্প্লিট হেডল্যাম্প এবং লম্বাকার উইন্ডশীল্ডটি এই বাইকটিকে সম্পূর্ন স্পোর্টস বাইক লুক দেয়। মাঝের অংশের দিকে তাকালে এই বাইকের বিশালাকার ফুয়েল ট্যাঙ্কার যা স্টাইলিশ কীট যেখানে এবার দেয়া হয়েছে নতুন কস্মেটিক্স এবং আর আর লেখা গ্রাফিক্স। সেই সাথে স্পোর্টি স্প্লীট সীট এই বাইকটিকে আকর্ষনীয় করে তোলে। বাইকের ফুটপেগের জায়গাটা পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে বাইকের রাইড পজিশন আরো স্পোর্টি এবং যেকোন হাইটের রাইডারের জন্য কমফোর্টেবল হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ ফেয়ারিং এই বাইকের ডুয়াল শেডের সাথে মিলিত ডুয়াল টোন কালার শেডগুলি এই বাইককে প্রিমিয়াম লুক দেয়। প্রশস্ত ডিস্ক, স্পোর্টি এক্সহস্ট, প্রশস্ত রেডিয়াল টায়ার, থিন নম্বর প্লেট হোল্ডারের বাইকের রেয়ার ডিজাইনকে রেখেছে আগের মতই ইউনিক এবং সবকিছু মিলিয়ে চোখ ধাধানো। এই সবকিছুই তৈরী করা হয়েছে ট্রেলিস ফ্রেমে যা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে এবং বাইকটিকে যেকোন রাস্তায় চলতে বেশ সাহায্য করবে।
EFI- 4 valve ইঞ্জিন:সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই তাদের বাইকে ভাল মাইলেজ, পারফরম্যান্স এবং স্থায়িত্ব বজায় রাখতে EFI ইঞ্জিনের ব্যাবহার দেখতে চান। জিপিএক্স ডিমোনে সেটার কমতি ছিল না। তবে সবার অভিযোগ ছিল বাইকের ২ ভাল্ব নিয়ে। এবার জিপিএক্স কোন আপোষ করেনি ডিমোন জিআর ১৬৫ আর আর এর ক্ষেত্রে। সেই সাথে সর্বচ্চো পারফরম্যান্সের জন্য লিকুইড কুলড সিস্টেমের ব্যাবহারও রয়েছে এই ইঞ্জিনে। আমরা যদি ইঞ্জিনটির স্পেসিফিকেশন দেখি তাহলে সেখানে রয়েছে, ১৬৪.৪ সিসি ৪-স্ট্রোক, ১ সিলিন্ডার, ৪ ভালভ, এসওএইচসি ইঞ্জিন সেই সাথে লিকুইড কুলিং সিস্টেম এবং EFi টেকনোলোজি। এই ইঞ্জিনটি ১৯.২ Bhp @ ১০৫০০ rpm সর্বোচ্চ শক্তি এবং ১৫.০ Nm @ ৭৫০০ rpm সর্বাধিক টর্ক উৎপাদন করতে পারে। এই পাওয়ারের সাথে বাইকটি ৪ সেকেন্ডে ০-৬০ গতিতে উঠতে সক্ষম সেই আগের মতই এবং বর্তমানে এই বাইকটি এর নিজেস্ব সেগমেন্টে সবথেকে পাওয়ারফুল বাইক। পাশাপাশি, ৬ স্পীড গিয়ার বক্স ট্রান্সমিশন এই বাইকটি ১৪০(কোম্পানির দাবি) কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পীডে পৌছে দিবে অনায়াসে।
সম্পূর্ণ LED লাইটিং:জিপিএক্স সম্পূর্ণ এলইডি সেটআপ ইনস্টল করেছে এই নতুন GPX Demon GR 165RR বাইকটির জন্য। সাইড ইন্ডিকেটর, ফ্রন্ট এবং রেয়ার ল্যাপস, ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার সমস্তকিছুতেই এলইডি লাইটিং সিস্টেমের ছোয়া রয়েছে।
সফট টাচ সেটিং সিস্টেম সহ সম্পূর্ণ ডিজিটাল এলইডি মিটার:ডিমোন ১৬৫ আর বাইকেঅ মতই GPX Demon GR 165RR এ থাকছে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার এবং ব্ল্যাক স্ক্রিন প্যানেল। তেমন কোন পরিবর্তন নেই মিটার প্যানেলে, স্পিডোমিটার, ক্লক, ফুয়েল গেজ, আরপিএম কাউন্টার এবং গিয়ার কাউন্টারের মতো প্রয়োজনীয় সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এখানে। এই সমস্ত ফিচারস সফ্ট টাচ সেটিং সিস্টেম বাটনের মাধ্যমে অনেক সহজেই নিজের মত করে সেট করে নেয়া যাবে।
ওয়াই-এস-এস 7 স্টেপ এডজাস্টবেল রেয়ার এবং আপসাইড ডাউন রেয়ার সাসপেনশন:ওয়াই-এস-এস হচ্ছে একটি সুপরিচিত মোটরযান যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক এবং জিপিএক্স তাদের নতুন এই ডিমোন বাইকটির জন্যও তাদের শীর্ষ মানের মনো শক সাসপেনশন ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো জিপিএক্স ৭-স্টেপ এডজাস্টবেল রেয়ার মনো সাসপেনশন চালু করেছে। GPX Demon GR 165RR বাইকের স্টেবিলিটি এবং রেস ট্র্যাক টাইপ পারফর্মেন্সের জন্য সামনের দিকে থাকছে আপসাইড ডাউন ফ্রন্ট সাসপেনশন।
ডুয়াল চ্যালেন ABS ব্রেক:সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ডিমোন ১৬৫ আর বাইকে -এ ABS ব্রেকিং সিস্টেমের কোনও চিহ্ন ছিল, তবে উভয় দিকেই কার্যকর ডিস্ক ব্রেক দেখা গিয়েছিল। এখন এই বাইকে ইউজারদের চাহিদা মোতাবেক দেয়া হয়েছে ডুয়াল চ্যানেল ABS ব্রেকিং।
GPX Demon GR 165RR স্পেসিফিকেশন:বডি ডাইমেনশনঃনতুন GPX Demon GR 165RR বডি ডাইমেনশন রাখা হয়েছে আগের মডেলের মতই যা অন্যান্য স্পোর্টস টাইপ বাইকের থেকে কিছুটা আলাদা। এই বাইকের দৈর্ঘ্যটি অন্যান্য ১৬৫ সিসি বাইকের তুলনায় কিছুটা বেশি, যা ৭৪৭ মিমি, এর প্রস্থ ২০২০ মিমি এবং সামগ্রিক উচ্চতা ১১৪৫ মিমি। স্পোর্টস বাইকের হিসাবে সীট হাইট সামান্য উচু, যা ৮১৫ মিমি। হুইলবেস ১৩৫০ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এখন ১৫৯ মিমি। এর ফলে পাওয়া যাবে বেটার কর্নারিং এবং স্পীড ব্রেকারে ওঠার সময় বেশি সুবিধা। এই বাইকটিতে ১১ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে এবং এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে বাইকের মোট ওজন ১৫৫ কেজি।
টায়ারঃ GPX Demon GR 165RR বাইকের জন্য জিপিএক্স ১০০/৮০ টায়ার ফ্রন্ট এবং ১৪০/৭০ রেয়ার টায়ার ইনস্টল করেছে এবং উভয়ই টিউবলেস। টায়ারগুলি শক্তিশালী অ্যালয় হুইলের উপরে স্থাপন করা হয়।
কালার স্কিম:GPX Demon GR 165RR দুটি ভিন্ন রঙে পাওয়া যাবে, সেগুলো হচ্ছে White Volpe Rossa (White-Red Shades) এবং Black Onyx Hyper sport (Black–Grey Shades) দুটি কালারই খুবই আকর্ষণীয় এবং সেগুলি ডুয়াল টোনড।
শেষকথাঃ GPX Demon GR 165RR বাইকের ফিচার আলোচনা করে বোঝা গেল বাইকারদের চাহিদাগুলো সবগুলই পূরন করে দেয়া হয়েছে এই বাইকে। হেডল্যাম্প থেকে টেইল ল্যাম্প পর্যন্ত সবকিছুতেই এই বাইকটি আধুনিক স্পর্শে তৈরী এবং কয়েকটি ফিচারের অভাব ছিল তা এখন পরিপূর্ন। বাইকটি কমপ্যাক্ট স্পোর্টস বাইক। নতুন কালার গ্রাফিক্স এবং এগ্রেশন এই বাইকটিকে আরো বেশি আকর্ষনীয় করে তুলেছে।