এইচ পাওয়ার সিআরজেড ১৬৫ বাইকটি সদ্য বাংলদেশের মার্কেটে আসে। এই বাইকের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর অভিনব ডিজাইন এবং ইঞ্জিন শক্তি এছাড়াও আরও অনেক ফিচারস আছে যা এই দামের মধ্যে অবিশ্বাস্য। আমি গত নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখে বাইকটা কিনি এবং এখন পর্যন্ত চালিয়ে আমার কাছে ভালো লাগা এবং মন্দ লাগা বিষয়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি যারা এই বাইকটি কিনবেন বা কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের সকলের জন্য একটু উপকার হবে।
আমি নজরুল ইসলাম দিপ্ত। আমার জীবনের আমি সর্বপ্রথম বাইক চালানো শিখি টিভিএস ভিক্টর বাইক দিয়ে এটা ছিলো ২০০৯ সালে ঘটনা। তখন আমি স্কুলে অধ্যায়নরত এবং প্রায় ১ বছর এলাকার মধ্যে দিয়ে টিভিএস ভিক্টর বাইকটি চালাতাম এবং তারপরে কিনলাম ওয়ালটনের ফিউশন ১১০ সিসির বাইক সেটা ব্যবহার করতে করতে এক পর্যায়ে আমার স্পোর্টস বাইকের প্রতি নেশা জাগে। আমি খুঁজতে থাকি ভালো ফিচারস এবং সাধ্যের মধ্যে একটি স্পোর্টস বাইক কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্পোর্টস বাইকের দাম অনেক বেশি যা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের মধ্যে নেই। এরপরে এইচ পাওয়ার সিআরযেড ১৬৫ বাইকটির দিকে আমার নজর পড়ে এবং অপেক্ষা করতে থাকি যে বাইকটা কবে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এইচ পাওয়ার সিআরযেড ১৬৫ বাইকটি বাংলাদেশের আসার পর আমি এর দাম শুনে পুরাই আশ্চর্য হয়ে যায় কারণ এত সুন্দর একটি স্পোর্টস বাইক এত কমদামে আগে কখনও লক্ষ্য করিনি। যাই হোক সব মিলিয়ে আমি মন স্থির করালাম যে এই বাইকটা নিবো এবং সর্বশেষ আমি নিয়েই নিলাম। বাইকটি নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিমি এর মত চালিয়েছি। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এর কিছু ফিচারস নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
প্রথমেই শুরু করতে চাই বাইকের ইঞ্জিন দিয়ে। এই বাইকটিতে তারা ব্যবহার করেছে ১৬৫ সিসির এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের রেডি পিক আপ অনেক বেশি । আমি ফাকা রাস্তায় এর রেডি পিক আপ পরিক্ষা করেছি এবং আমি পেয়েছি ৩ সেকেন্ড কিংবা তার একটু বেশি সময়ে ৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় স্পীড। ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন প্রথম ২৫০ কিমি চালানো অবস্থায় পাইনি তারপরে হঠাত হালকা ভাইব্রেশন পাই এবং ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করার পর ভাইব্রেশনটা নাই হয়ে গেছে। ইঞ্জিন ব্রেক ১ থেকে ৪ গিয়ারে অনেক ভালো কিন্তু ৫ কিংবা ৬ গিয়ারে কম পাই। ইঞ্জিনের ত্রুটিপূর্ণ শব্দ বলতে আমি ভাইব্রেশন এর সময় একটু শব্দ পেয়েছিলাম তারপরে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করে সেটা আবার চলে গেছে। মোট কথায় বাইকটির ইঞ্জিন নিয়ে আমি এই পর্যন্ত বেশ সন্তুষ্ট আছি।
ডিজাইনের ব্যাপারে যদি বলি তাহলে অবশ্যই বলতে হয় যে কম দামের মধ্যে স্পোর্টস বাইকের ডিজাইন দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বাইকের ছবি দেখে মন্তব্য করেন যে বাইকটা আকারে ছোট কিন্তু সামনাসামনি দেখলে ছোট মনে হয় না কিন্তু ৬ ফুট উচ্চতার মানুষের জন্য বাইকটা চালানো একটু কষ্টকর হয়ে যায়।এরোডাইনামিক ডিজাইনের ফলে বাতাস সুন্দরভাবে পাস করে এবং স্পীড আরও বাড়িয়ে দেয়।
বাইকের বিল্ড আমি দেখেছি যে প্লাস্টিকগুলো কার্বন ফাইবার প্লাস্টিক এবং এটা ফেটে বা ভেংগে যাওয়ার প্রবণতা খুব কম।
বাইকটা যেহেতু স্পোর্টস বাইক সেহেতু বেশিক্ষন ধরে চালানো সম্ভব না কারণ সামনের দিকে হেলে চালাতে হয়। সিটিং পজিশন সিংগেল রাইডিং এর জন্য ঠিক আছে যদি পিলিয়ন নিয়ে চালানো যায় তবে উভয়ই কষ্ট পাবে। আমি একদিনে একটানা ৪০ কিমি চালিয়েছি হাইওয়েতে আমার খুব বেশি সমস্যা হয়নি কিন্তু অফরোডে চালাতে গিয়ে আমার কব্জি ও কাঁধ ব্যথা করে।
হেডল্যম্পের আলোটা খুব বেশি ভালো না আবার খুব বেশি খারাপও না অর্থাৎ রাতে রাইডিং করার জন্য যথেষ্ট লেগেছে আমার কাছে।
বাইকের কন্ট্রোল ভালো। যেহেতু আকারে একটু ছোট তাই খুব ভালোভাবে রাইড করা যায় এবং টারনিং রেডিয়াস কম থাকার ফলে যে কোন রাস্তায় ঝামেলাবিহীনভাবে রাইড করা যায়।
বাইকের একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে সামনের দিকে বেশি ভারী এবং পেছনের দিকে হালকা যার জন্য কড়া ব্রেক করলে একটু স্কীড করে।
সাসপেনশনগুলো ভাঙ্গা রাস্তায় জন্য ভালো না বিশেষ করে পেছনের সাসপেনশনটা ভাঙ্গা রাস্তায় চলাচলের জন্য উপযুক্ত না এবং আমি ভাঙ্গা রাস্তায় ২০ কিমি স্পীডের উপরে চালাতে পারি না কারণ বাইকটা খুব লাফায়। তবে হাইওয়েতে উভয় সাসপেনশন অনেক ভালো।
ব্রেকিং সিস্টেম উভয় পাশেই খুব ভালো এবং আমার কাছে সবচেয়ে ভালো ব্রেকিং লেগেছে সামনের ব্রেকিংটা পেছনেরটাও যথেষ্ট ভালো আছে। এই দুইটা ব্রেকিং মিলিয়ে আমার কাছে এবিএস ব্রেকিং এর মত লাগে।
মাইলেজ আমি খুব বেশি পাচ্ছি না । শহরের মধ্যে এখন পাচ্ছি ৩০ কিমি প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি ৩৫ কিমি প্রতি লিটার। সব মিলিয়ে আমি বলবো যে মাইলেজটা এই রকম দানবীয় বাইকের জন্য ঠিক আছে কারণ আমি মনে করি যে কিছু পেতে হলে কিছু উৎসর্গ করতে হয়।
আমি সার্ভিস সেন্টারে তেমনভাবে যাইনি তবে তাদের আচরন কেনার সময় বেশ ভালো লেগেছে। তাদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ২০ হাজার কিমি ইঞ্জিন গ্যারান্টি।
দাম হিসেবে আমি বলবো যে বাইকটা দামের দিক থেকে অবাক করার মত। বাংলাদেশে এই রকম দামের মধ্যে ভালো স্পোর্টস বাইক অন্য কোন কোম্পনী দিতে পারবে না। আমার কাছে দামের দিক থেকে একদম পারফেক্ট একটা বাইক বলে মনে হয়েছে।
এই ছিলো আমার এইচ পাওয়ার সিআরযেড ১৬৫ বাইকের ভালো মন্দ লাগার বিষয়। আমার কাছে বাইকটি যেমন লেগেছে আমি ঠিক সেভাবে উপস্থাপন করেছি এবং বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দিয়ে থাকে যা সকলের মতামতের সাথে এক নয়। সবাই সাবধানে বাইক রাইড করবেন এবং অবশ্যই হেলমেট পড়ে বাইক চালাবেন। ধন্যবাদ।