এইচ পাওয়ার জারা ১০০ সিসি মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত ও পরিচিত বাইকগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের দেশের যে কোন জায়গায় এই মোটরসাইকেলটি খুব সহজেই চোখে পড়বে। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে আমি আমার পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল সম্পর্কে এখন কিছু মতামত তুলে ধরছি। আমার নাম মোঃ সাকিবুল ইসলাম। আমি একজন ছাত্র। মোটরসাইকেল কেনার ইচ্ছাটা আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। ছোটবেলা থেকেই আমি মোটরসাইকেল এর খুব ভক্ত ছিলাম। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। তবুও অন্যের মোটরসাইকেল মাঝে মাঝে চালাতাম। যদিও অন্যের মোটরসাইকেল চালাতে আমার খারাপ লাগতো। তবে অন্যের মোটরসাইকেল আমি প্রচুর চালিয়েছি। তখন থেকেই ভাবতাম আমারও নিজের যদি একটা মোটরসাইকেল থাকত। ভাল মাইলেজ পাবো এমন মোটরসাইকেল আমি অনেকদিন ধরেই খুজছিলাম। কিন্তু মনের মত একটাও খুজে পাচ্ছিলাম না। তারপরে এইচ পাওয়ার জারা ১০০ সিসি বাইকটা দেখে আমার খুব ভাল লেগে যায়। আমি এক বছর আগে এই মোটরসাইকেলটি কিনি। এক বছরে প্রায় ৯০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। এটা আমার জীবনের প্রথম বাইক। আমার ব্যক্তিগত কাজে জন্য মূলত এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। এই মোটরসাইকেলটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তার পারফরমেন্সও খুব ভাল। মাইলেজ বিবেচনায় এই মোটরসাইকেলটি খুবই ভাল। কয়েক দিন আগে টিম মোটরসাইকেলভ্যালী আমাকে আমন্ত্রণ করে এবং তাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আজ আমি আমার মোটরসাইকেল এর রিভিউ প্রকাশ করছি।
এইচ পাওয়ার জারা ১০০ সিসি মোটরসাইকেল এর ডিজাইন ও ব্লিডিং কোয়ালিটি এক কথায় আমার চোখে অসাধারণ লেগেছে। এই মোটরসাইকেলের বডির পার্টস গুলো সঠিক ভাবে স্থাপন করা হয়েছে, ফলে দেখতে বেশ ভাল লাগে। একদিন আমার হাত থেকে মোটরসাইকেল পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু মোটরসাইকেলটি পড়ে যাওয়াতে কোন প্রকারের ক্ষতি হয় নাই। তখন বুঝলাম এর বডির প্লাস্টিক গুলো বেশ মজবুত ও টেকসই। যা খুব সহজেই ভেংগে যায় না। এছাড়া মোটরসাইকেলটি নিমিষেই তার নির্দিষ্ট গতিতে তুলতে পারে। এজন্য আমি একটু বেশিই খুশি। কারন আমি কিছু অন্যান্য মোটরসাইকেল দেখেছি যেগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট গতিতে তুলতে পারে না।
এই মোটরসাইকেলে আমি এখন পর্যন্ত ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল পাচ্ছি। এ মোটরসাইকেলে এখনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয় নাই। এর ইঞ্জিনটা আমার কাছে খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে। এটি বেশিক্ষণ চললেও অন্যান্য মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের মত ওভার হীট হয় না। এজন্য বলছি আমার মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খুবই ভাল। নিজের বাইক বলে বলছি না, আমি মনে করি তেল খরচের দিক থেকে এই মোটরসাইকেলটি সেরা। এছাড়া এই মোটরসাইকেলটি যে কোন বয়সের মানুষের জন্য একদম পারফেক্ট এবং মানানসই।
এই মোটরসাইকেল এর সিটিং পজিশন ভাল হওয়াতে আমি এক সাথে তিন জন নিয়ে রাইড করতে পারি। আমার পরিবার নিয়ে চলাচলের জন্য অনেক সহজ হয়। এছাড়া মোটরসাইকেলটি তেমন উঁচু না হওয়ায় সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। আমি হাই রোডে সর্বোচ্চ ৮৫ গতি তুলেছি। এছাড়া এক দিনে প্রায় ১৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘক্ষন বসে চালালে আমার কাঁধে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে। আমি দীর্ঘ যাতায়াত খুব করি। এই মোটরসাইকেল এর সুইচ গুলো খুবই সুন্দর, যা ব্যবহারে আমার কোন সমস্যা হয় না এবং রাতে হেড লাইটেও অনেক আলো দেয়। যা আমাকে পরিষ্কার রাস্তা দেখাতে সাহায্য করে। তবে এই মোটরসাইকেল এর সাসপেনশন গুলো খুব একটা ভাল না । খারাপ রাস্তায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনি লাগে। ব্রেক এর কথা বলতে গেলে ব্রেক খুবই ভাল কাজ করে। তবে ডিস্ক ব্রেক থাকলে আরো ভাল হত। এর চাকা দুটো দেখতেও অনেক সুন্দর। চাকার গ্রিপ গুলো অনেক ভাল। আমি মোটরসাইকেলে বসে গ্লাসের দিকে তাকালে পিছনের দৃশ্যটা খুব পরিষ্কার দেখতে পাই। এর ব্যাটারিটাও বেশ ভাল। আমি প্রথমের দিকে যেমন মাইলেজ পাচ্ছিলাম, ঠিক তেমন মাইলেজ এখনও পাচ্ছি।
আমার মোটরসাইকেলটি এক দিনও সার্ভিসিং সেন্টারে সার্ভিসিং করাই নাই। কারণ সার্ভিসিং সেন্টার অনেক দূরে। তবে আমি ১ দিন ঘুরতে ঘুরতে শোরুমে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যবহার আমার ভাল লেগেছে। আমার সাথে তারা অনেক ভাল আচরণও করেছে।। তবে দামের কথা বলতে গেলে, দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। এই মোটরসাইকেলটির বিক্রয়ের হার বাড়াতে হলে দামটা আরো কিছু কমাতে হবে। আমি আগেও বলেছি মাইলেজ নিয়ে খুবই খুশি। কারন আমি এক লিটার তেলে প্রায় ৬০ কিমি পথ চলতে পারি। এজন্য বলছি মোটরসাইকেলটি খুবই ভাল।
সকলের উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ এই যে, কেউ যদি ১০০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনতে চান তবে আপনারা নিশ্চিন্তে এইচ পাওয়ার জারা ১০০ মোটরসাইকেলটি কিনতে পারেন। এটি কিনলে আমি মনে করি আপনারা ঠকবেন না। কারন মোটরসাইকেলটি সব দিক থেকেই অনেক ভাল। এক বছর পরেও আমার মনে হয় আমি নতুন বাইকই চালাচ্ছি।
ভাল দিকঃ ১/ ডিজাইন খুব ভাল, ২/ ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভাল, ৩/ সিটিং পজিশন ভাল, ৪/ লুকিং গ্লাসটাও অনেক সুন্দর, ৫/ তেল খরচ কম, ৬/ এর বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত, ৭/ হেড লাইটে অনেক আলো হয়।
মন্দ দিকঃ ১/ বেশি স্পীডে হাত ঝিনঝিন করে, ২/ দীর্ঘ যাতায়াতে হাতে,পিঠে,কোমরে,কাঁধে ব্যাথা করে, ৩/ দাম একটু বেশি, ৪/ সাসপেনশন তেমন ভাল না।
উপরিউক্ত লিখা বা বলার মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে
দেখবেন, সবাইকে ধন্যবাদ।