এইচ পাওয়ার জারা ১০০সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ - সুজন

এদেশে সকল যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। কারন এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে দ্রুত যাতায়াত করা যায়। এই বাহনটি প্রায় সকল বয়সের মানুষই খুব পছন্দ করে। তবে প্রতিটি মানুষে জীবনেই কিছু না কিছু ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা থাকে। তেমনি আমারও ছোটবেলা থেকেই মোটরসাইকেল কিনার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাবার আর্থিক সমস্যার জন্য কিনতে পারিনি। ইচ্ছাটি ১ বছর আগে পূরণ হয়। প্রথমে আমার পরিচয় জানাচ্ছি, আমি মোঃ সুজন আলী, জেলা নাটোর। লেখাপড়া শেষ করে ছোট-খাটো একটা ব্যবসা করতাম, কিন্তু কিছুদিন আগে একটা কোম্পানিতে চাকরি পাই। কোম্পানির কাজে আমাকে প্রতিনিয়ত এখানে-ওখানে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার মোটরসাইকেল আমি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত আমি সাধারণত যাতায়াতের জন্যই এ মোটরসাইকেলটি কিনি। এ বাইকটি কিনার পরেই আমি মোটরসাইকেল চালানো শিখেছি। ১ বছর যাবত এই মোটরসাইকেলটি আমি ব্যবহার করছি। ১ বছরে প্রায় ১৫,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। এটাই আমার প্রথম মোটরসাইকেল। প্রতিটি মোটরসাইকেলের ভাল ও মন্দ দিক থাকে। আমি আবার ব্যবহারের অভিজ্ঞতার আলোকে মোটরসাইকেলটির ভালো-মন্দ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আমরা সবাই জানি যে মোটরসাইকেলের মূল অংশ হল ইঞ্জিন। এজন্য আমি ইঞ্জিনের কথা আগে বলতে চাই। আমার মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল। এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের ভেতরে কোন সমস্যা দেখা দেয় নি। ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনটা খুব গরম হয়। এছাড়া আমি তেমন বেশি দীর্ঘ যাতায়াত করি না। এজন্য আমার তেমন সমস্যা হয় না। মোটরসাইকেলটি সঠিক গতি তুলতে পারে। এই মোটরসাইকেলটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই।

এখন ডিজাইনের কথায় আসা যাক, ডিজাইন ভাল লাগার কারনেই মূলত আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনি। আমি মনে করি মোটরসাইকেলটির ডিজাইন কেউ অপছন্দ করতে পারবে না। অন্যান্য ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের তুলনায় এই মোটরসাইকেলের ডিজাইন আমার কাছে ভাল লেগেছে। এছাড়া মোটরসাইকেলটির বডির প্লাস্টিকগুলো অনেক মজবুত, যা সহজে ভেংগে যায় না বা ফেটে যায় না। সব দিক বিবেচনা করে মোটরসাইকেলটির ডিজাইন আসাধারন।

মাইলেজের কথা বলতে হয় আমি ১ লিটার তেলে ৬০ কিলোমিটারের বেশি পথ চলতে পারি। ১ বছর পরেও আমি ৬০+ মাইলেজ পাই। এছাড়া আমি মনে করি ১০০ সিসি মোটরসাইকেল হিসেবে মাইলেজটা সঠিক আছে। এজন্য মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ভাল মাইলেজ পাবার আশায় আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনি।

এবার আসা যাক আরাম বিষয়ে নিয়ে কিছু কথা বলি। এই মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন খুবই ভাল। সিটও বেশ নরম আছে। আমার মোটরসাইকেলে এক সাথে তিন জন বসে খুব সহজেই রাইড করতে পারি। কারণ মোটরসাইকেলটির সিট বেশ চওডা। সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি, এই মোটরসাইকেলটি অন্যান্য মোটরসাইকেলের মত খুব বেশি উঁচু না। মোটরসাইকেলটির হ্যান্ডেলবারের ডিজাইনও অনেক ভাল, যা আমাকে ভাল অনুভূতি এনে দেয়। আমি মোটরসাইকেলটিতে সর্বোচ্চ গতি ১০০ তুলেছি। বেশি গতিতে তুললে মোটরসাইকেলটি খুব কাপে। আমার হাত ঝিনঝিন করে। যদিও আমি তেমন বেশি গতিতে মোটরসাইকেল চালাই না। কারণ আমি অন্যদের মত জীবনের রিস্কি নিয়ে মোটরসাইকেল চালাই করি না। এক দিনে আমি প্রায় ২০০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার পিঠে, কোমরে ব্যাথা করে। এই মোটরসাইকেলটির সুইচগুলো অনেক সুন্দর। কোন সময়েই এগুলো ব্যবহার করতে আমার সমস্যা হয় না। রাতে হেড লাইট থেকে আমি প্রচুর আলো পাই। যা আমাকে পরিষ্কার রাস্তা দেখতে সাহায্য করে। মোটরসাইকেলটির লুকিং গ্লাস থেকেও পিছনের দৃশ্য ভাল ভাবে দেখা যায়। মোটরসাইকেলের ব্যাটারিটাও অনেক টিকসই। ব্রেক অনেক ভাল। তবে মোটরসাইকেলটিতে ডিস্ক ব্রেক থাকলে আরো ভাল হত। তবে এই মোটরসাইকেলের ক্লাচ অন্যান্য বাইকের তুলনায় অনেক ভাল। এই মোটরসাইকেলের সাসপেনশন তেমন ভাল না। কারন, খারাপ রাস্তায় খুব বেশি ঝাঁকুনি মনে হয়। তবে মোটরসাইকেলটির চাকা ও টায়ার গুলো অনেক মজবুত। খুব সহজে চাকা পিছলায় না। আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটি দীর্ঘ ও দ্রুত যাতায়াতের জন্য নয়। তবে এই মোটরসাইকেলটি গ্রামের মানুষ বেশি মাইলেজ পাবার আশায় বেশি কিনে। আমি শহরের চেয়ে গ্রামের দিকে এ মোটরসাইকেলটি বেশি দেখতে পাই। তবে মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল।

ভাল দিকঃ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, সিটিং পজিশন ভাল, মাইলেজ ভাল, ডিজাইন ভাল, সুইচগুলো সুন্দর, কন্ট্রোল ভাল।
মন্দ দিকঃ দাম বেশি, সাসপেনশন ভাল না, বেশি স্পিডে খুব কাপে, দীর্ঘ যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়।

All H POWER bike price in bd

H Power Zaara 100