বাংলাদেশে অধিকাংশ ব্যক্তির কাছেই মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। কারণ, মোটরসাইকেল এর মাধ্যমে যে কোন সময় অতি দ্রুত যাতায়াত করা যায়। যাই হোক সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মোঃ শিমুল হোসেন। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার ব্যবসার কাজের জন্য ও ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে এই মোটরসাইকেলটি মূলত আমি কিনি। আমার মোটরসাইকেল এর নাম এইচ পাওয়ার জারা ১০০ সিসি। এই মোটরসাইকেলটি আমি “অনিক ট্রেডার্স” ঝলমলিয়া বাজার, পুঠিয়া, রাজশাহীর একটি শোরুম থেকে কিনি। এই মোটরসাইকেলটি আমি প্রায় তিন বছর যাবত ব্যবহার করছি। তিন বছরে প্রায় ৩০,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আজকে আমি আমার এইচ পাওয়ার জারা ১০০ সিসি মোটরসাইকেল সম্পর্কে ভাল ও মন্দ কিছু বিষয় সবার সামনে তুলে ধরবো। এটা আমার জীবনের ১ম মোটরসাইকেল। আমি যখন আমার এই মোটরসাইকেলটি কিনি তখন রিভিউ পড়ার সুযোগ ছিল না। নিজের পছন্দ অনু্যায়ী মোটরসাইকেল কিনতে হয়েছিল। এজন্য আমি মোটরসাইকেল ভ্যালীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারন তারা আমার রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরার একটি সু্যোগ করে দিয়েছে। এটির মাধ্যমে নতুন বাইক ক্রেতাসাধারণ প্রতিটি মোটরসাইকেলের গুণাগুণ যাচাই করে কিনতে পারবে। বলতে গেলে আমি যেমন চেয়েছিলাম, এই মোটরসাইকেলটি ঠিক তেমন পেয়েছি। এটির পারফরমেন্স খুব ভাল।
আমি এই মোটরসাইকেলটি শুধু পারফরমেন্স বিবেচনা করে কিনি নাই। বরং বাইকের ডিজাইন ও ভাল মাইলেজ পাবার আশায় কিনেছি। এই ডিজাইনটা আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। এছাড়া আমি এত দিনে বুঝতে পেরেছি এর বডির প্লাস্টিকগুলোও অনেক মজবুত, যা খুব সহজে ভেংগে যায় না। আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই হবে।
এখন আসি ইঞ্জিনের পারফরমেন্স বিষয়ে কিছু কথা নিয়ে। ১০০ সিসির মোটরসাইকেল হিসেবেও এটি অনেক ভাল শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। কারন এটি খুব শক্তিশালী। এছাড়া আমি নিজে কিছু সময়ের ব্যবধানে ৮০ কিমি স্পীডে নিমিষেই তুলতে পারি। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। তাছাড়া অন্যান্য বাইকের মত এই ইঞ্জিনের ভেতরে কোন খারাপ শব্দ করে না। তবে বেশিক্ষণ চললে বাইকটির ইঞ্জিন হালকা গরম হয় এবং চেনের ভিতরে শব্দ করে। কিন্ত এর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। এছাড়া মোটরসাইকেলটির কন্ট্রোল অনেক ভাল। তবে ডিস্ক ব্রেক বা হাইড্রোলিক ব্রেক থাকলে আরো ভাল কন্ট্রোল করা যেত। অতি বেশী স্পীডে একটু ঝাঁকুনি মনে হয়, তবে এটি আমি এমন আমলে নেই নি। কারণ আমি বেশি স্পীডে মোটরসাইকেল চালাই না। এক্ষেত্রে আমি সন্তুষ্ট।
এই মোটরসাইকেলটি কেনার সময় আমাকে বলা হয়েছিল ১ লিটার তেলে প্রায় ৬০ কিমি পথ চলা যাবে। আমি ঠিক তেমনই মাইলেজ পাচ্ছি। তেল খরচ কম হবে এটা ভেবেই আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনিছি। তাই আমি এখন বুঝতে পেরেছি ভাল মাইলেজ পেতে এই মোটরসাইকেলটির তুলনা হয় না।
আমার মোটরসাইকেলে বড় কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আমি আগেও বলেছি মোটরসাইকেল এর চেনের ভিতরে খারাপ শব্দ হয়। এটি আমার কাছে মাঝে মাঝে খুব বিরক্তিকর মনে হয়। আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি, তারা আমার সাথে অনেক ভাল ব্যবহার করেছেন। তাদের কাজের মান অনেক ভাল মনে হয়েছে। কারন চেনের সমস্যাটি পরে আর হয় নাই। তবে তাদের অতিথি আপ্যায়ন দেখে আমি মুগ্ধ হই। এছাড়া সেখানে যথেষ্ট যন্ত্রপাতিও লক্ষ্য করেছিলাম। তাছাড়া একটি বিষয় আমার কাছে খারাপ লেগেছে, সেটি হল এই মোটরসাইকেল এর দাম অনেক বেশি। এর সকল পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আর একটু ককম হলে খুব ভাল হত।
বাইকটির সিটিং পজিশন খুব ভাল। সিট নরম হওয়ায় সিটে বসে আরাম আছে। এক সাথে ২/৩ জন বসে রাইডিং করা যায়। আমি আমার পরিবার নিয়ে এক সাথে চলাচলের জন্য এমন সিটিং পজিশন দেখেই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। এছাড়া সিটে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। কারন এটি বেশি উঁচু না। এর সুইচ গুলো দেখতে সুন্দর ও এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেড লাইট থেকে প্রচুর আলো পাই। আমি মোটরসাইকেলটি হাই রোডে সর্বোচ্চ ৮০ গতিতে তুলেছি। তবে বেশি গতিতে আমার হাত ঝিনঝিন করে। এছাড়া এক দিনে প্রায় ১০০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘক্ষণ বসে রাইড করলে হাতে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে। এই মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন আমার পছন্দ হয় নাই, কারণ খারাপ রাস্তায় এক থাকলে খুব ঝাঁকুনি অনুভব করি। তবে এর কন্ট্রোল খুব ভাল। এর লুকিং গ্লাস থেকে আমি খুব সহজেই পিছনের দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাই।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১০০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার কথা ভাবছেন, তারা এই মোটরসাইকেলটি ভাল মাইলেজ বিবেচনায় কিনতে পারেন। কারণ এ বাইকের তেল খরচ খুব কম। এছাড়া, মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। নিজের মোটরসাইকেল বলে বলছি না, তিন বছর পরেও আমি ৬০+ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি।
ভাল দিকঃ ১/ তেল খরচ কম, ২/ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, ৩/ ডিজাইন ভাল, ৪/ সিটিং পজিশন ভাল, ৫/ সুইচগুলো দেখতে সুন্দর, লুকিং গ্লাসে পরিষ্কার দেখা যায়।
মন্দ দিকঃ ১/ দাম অনেক বেশি, ২/ দীর্ঘ যাতায়াতে কষ্ট হয়, ৩/ চেনের ভেতরে মাঝে মাঝে শব্দ করে।
কোম্পানির কাছে আমার সেই রকম কোন দাবি নেই। শুধু চাই দামটা আর একটু কম হলে ভাল হত। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার কথা শেষ করছি।