
দ্রুত ও অল্প সময়ের মধ্যে যাতায়াত করার জন্য মোটরসাইকেলের গুরুত অপরিসীম। বাংলাদেশে বিভিন্ন ডিজাইনের বাইক রয়েছে। এর সিসি গুলো বিভিন্ন ধরনের। তখন আমি ভাবি যে মিডিয়াম সিসির মধ্যে একটি ভাল মানের মোটরসাইকেল কিনবো। আমার আগে থেকে কোন পছন্দ ছিল না। আমি তখন ভেবে চিন্তায় এই মোটরসাইকেলটি পছন্দ করি। আমার পরিচয় হচ্ছে আমি মোঃ মিঠু। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার বাইকের নাম এইচ পাওয়ার জারা– ১১০ সিসি। দ্রুত ও সাধারন যাতায়াত করায় বাইকটির তুলনা হয় না। গ্রামে বা শহরে উভয় জায়গাতেই এই বাইকের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। ছোটবেলা থেকেই মোটরসাইকেল কিনার ইচ্ছে ছিল অনেক , কিন্তু কিছু কারন বসত কিনতে পারি নাই। এই বাইকটি আমার জীবনের প্রথম বাইক। এটি থেকেই আমি চালানো শিখেছি। অনেক চিন্তা ভাবনা করেই মূলত এ বাইকটি আমি কিনেছি। বলতে গেলে আমি ৫ মাস আগে থেকে বাইক ব্যবহার করা শুরু করি। মূলত আমি ব্যক্তিগত কাজে ও ব্যবসার কাজে যাতায়াতের জন্যই এই বাইকটি কিনেছি। বাইকটি দ্রুত যাতায়াত করার ক্ষেত্রে আমাকে বাইকটি কখনো নিরাষ করে না। আমি মাত্র ৫ মাস যাবত মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করছি। পাচ মাসে প্রায় ৫০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। কিছুদিন আগে মোটরসাইকেল ভ্যালী টিমের সাথে আমার দেখা হয়। তারা আমার মোটরসাইকেল বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তাদের কাছে আমি আমার মোটরসাইকেল সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরি। এখন আমি আমার মোটরসাইকেল সম্পর্কে রিভিউ প্রকাশ করতে যাচ্ছি। আমার রিভিউ পড়ে বাইক ক্রেতারা এই বাইক সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। কারণ এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। প্রতিটি বাইকেরই ভাল ও মন্দ দিক থাকে। এখন আমি আমার বাইকের এই দিকগুলো বিস্তারিত তুলে ধরবো।

আমি ইঞ্জিন দিয়েই শুরু করতে চাই। কারণ ইঞ্জিন ছাড়া মোটরসাইকেল অচল। আমার মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল। এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের ভেতরে কোন সমস্যা দেখা দেয় নাই। এছাড়া বাইকের ইঞ্জিনের ভেতরে থেকে কোন প্রকারের খারাপ শব্দ শুনতে পাই নাই। দীর্ঘক্ষণ যাতায়াতে (৮০ কিমি) আমার মোটরসাইকেল ইঞ্জিনটা খুব একটা গরম হয় না। তবে আমি খুব বেশি পরিমানে মোটরসাইকেল চালাই নাই। এ মোটরসাইকেলের সাসপেনশনের ভেতরে মাঝে মাঝে খারাপ শব্দ শুনতে পাই। এটি নিয়ে আমি একটু হতাশ ছিলাম। সার্ভিসিং করার পরে সেটি দূর হয়ে যায়। একটি মোটরসাইকেল কিনার আগে মডেল ও ডিজাইন দেখেই সবাই পছন্দ করে। আমার মোটরসাইকেলটির ডিজাইন আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। তবে ডিজাইনটি আমার আগে থেকে পছন্দ ছিল না। আমার বড় ভাই পছন্দ করে এটি আমাকে দেখায়। আর আমারও ভাল লাগার কারনেই মূলত আমি এই বাইকটি কিনি। অন্যান্য ১১০ সিসি বাইকের তুলনায় এই বাইকের গ্রাফিক্স ডিজাইন একটু বেশিই ভাল। এক দিন মোটরসাইকেলটি আমার থেকে পড়ে গিয়েছিল। বাইকটি পড়ে গেলেও খুব একটা সমস্যা হয় নাই। তখন বুঝলাম এর বডির প্লাস্টিকগুলো অনেক টেকসই ও মজবুত, যা খুব সহজে ভেংগে যায় না। এছাড়া পার্টসগুলোও অনেক টেকসই ও মজবুত মনে হয়েছে। এই মোটরসাইকেলটির তেলের ট্যাংকারের ডিজাইন ও গ্রাফিক্স দেখতে খুবই ভাল লাগে। এর বিল্ড কোয়ালিটি অনেক সুন্দর।
মোটরসাইকেল এর মাইলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট, কারন শোরুম থেকে মোটরসাইকেলটি কিনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল আমি ঠিক তেমন মাইলেজই পাচ্ছি। তারা বলেছিল ১ লিটার তেলে ৫০ - ৬০ কিলোমিটার পথ চলতে পারবো। আমি ঠিক সেই মাইলেজ পাচ্ছি। আমি মনে করি অন্যান্য ১১০ সিসি বাইকের তুলনায় এই বাইকের মাইলেজটা একটু বেশিই ভাল যাচ্ছে। তাই আমি মাইলেজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।
মোটরসাইকেল এর কন্ট্রোল ও আরাম এই দুইটি বিষয় অনেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন ভাল এবং সিটে বসে সহজে ও আরামের সাথে হ্যান্ডেলবার ধরে চালাতে পারি। হ্যান্ডেলবার ধরে চালানোর সময় আমি ভাল
অনুভূতি পাই। আমি সিটে বসে খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। কারণ এই মোটরসাইকেলটি অন্যান্য ১১০ সিসি বাইকের তুলনায় খুব বেশি উঁচু না। আমি মোটরসাইকেলটি সর্বোচ্চ ৮০ গতিতে তুলেছি। এর বেশি গতিতে তুললে বাইকটির মাথা হাল্কা কাপে। তখন আমার হাতও ঝিনঝিন করে। তবে আমি অন্যদের মত জীবনের ঝুকি নিয়ে মোটরসাইকেল চালাই না। এছাড়া এক দিনে আমি প্রায় ৮০ কিমি পথ চালিয়েছি। আমি এত গুলো পথ পাড়ি দিয়েছি তবু আমি কখনো ক্লান্ত হই নাই। মোটরসাইকেলটির সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো ব্যবহার করতে আমার সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেড লাইট অনেক আলো দিতে সক্ষম। বেশি আলোর কারনে আমি সব কিছু লক্ষ্য করতে পারি। ফলে খুব আরামের সাথে আমি রাতের বেলায় মোটরসাইকেল চালাতে পারি। মোটরসাইকেলটির লুকিং গ্লাস থেকেও পিছনের দৃশ্য ভাল ভাবে দেখা যায়। বাইকটির ব্রেক অনেক ভাল। বিশেষ করে ডিস্ক ব্রেক থাকায় আমি বেশি খুশি। কারণ এটির মাধ্যমে আমি খুব সহজেই মোটরসাইকেল কন্ট্রোল করতে পারি। তবে মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন তেমন ভাল না। কাচা ও খারাপ রাস্তায় চালালে খুব বেশি ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। মোটরসাইকেলটির চাকা ও ট্যায়ার গুলো দেখতে সুন্দর। ব্রেক করলেও খুব সহজে চাকা পিছলায় না। কারন ট্যায়ারের গ্রিপ গুলো অনেক ভাল। আমি মনে করি যে এই বাইকটি যাতায়াতের জন্য খুবই ভাল।
নাট-বল্টু টাইট দেওয়া, সাসপেনশনের সমস্যা ও মবিল পরিবর্তন করার জন্য আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সেখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। আমি সার্ভিসিং করিয়ে বুঝতে পেরেছি তাদের কাজের মান ভাল। এছাড়া তাদের আচার ব্যবহার, দক্ষতা, অতিথি আপ্যায়ন আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। সার্ভিসিং সেন্টারের বিষয় নিয়ে আমি সন্তুষ্ট আছি। তবে জারা এইচ পাওয়ার – ১১০ সিসি মোটরসাইকেলটির সব কিছু বিবেচনা করে দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। আমি মনে করি দামটা যদি আর একটু কমানো হয় তবে বিক্রয়ের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
ভাল দিকঃ (১) ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, (২) তেল খরচ কম, (৩) সিটিং পজিশন সুন্দর, (৪) ডিজাইন ভাল, (৫) সুইচগুলো দেখতে সুন্দর, (৬) সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ভাল, (৭) কন্ট্রোল ও ব্রেক ভাল, (৮) হ্যান্ডেলবার খুব সুন্দর।
মন্দ দিকঃ (১) সাসপেনশন তেমন ভাল না, (২) দাম একটু বেশি, (৩) বেশি গতিতে ভ্রাইব্রেট করে।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ১১০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনতে চান তারা উপরের ভাল দিকগুলো বিবেচনা করে নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। এছাড়া মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স,ডিজাইন,মডেল কোয়ালিটি অনেক সুন্দর। সবাইকে ধন্যবাদ। ★★★