Yamaha Banner
Search

হাউজুয়ে কুল মোটরসাইকেল রিভিউ - জুয়েল রানা

English Version
2016-08-22
Owned for 1year+   []   Ridden for 10000km+

হাউজুয়ে কুল মোটরসাইকেল রিভিউ - জুয়েল রানা


Haojue Coolমোটরসাইকেলে হাতে খড়ি হয় যখন আমি ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। আজ থেকে প্রায় ৪০বছর আগের কথা। বন্ধুর SUZUKI 80cc বাইকে বন্ধুর সাহায্যেই চালানো শেখা হয়। এরপর থেকেই মোটরসাইকেল আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি মুহুর্তেই বাইক আমার ছায়াসংগী হয়ে আছে।

আমি মো: জুয়েল রানা পেশায় একটি বেসরকারী কলেজের লেকচারার। মোটরসাইকেল ভ্যালীর আমন্ত্রনে আর ছোটভাই কোয়েলের(কে আর বাইক সেন্টার, রাজশাহী) অনুরোধে আমার জীবনে মোটরসাইকেলের প্রভাব এবং বর্তমানে ব্যবহৃত Haojue Cool নিয়ে কিছু কথা সবার কাছে তুলে ধরবো।

আমি প্রথম বাইক কিনি আজ থেকে ২৫ বছর আগে। সেটি ছিলো Yamaha 80cc. এটি প্রায় ৫বছর ব্যবহার করি। এরপরে বিক্রি করে দেই। আমার দ্বিতীয় কেনা বাইক হলো ১৫০সিসির ভেসপা। ভেসপা বাইকটি অনেকদিন ব্যবহারের পরে বাজারে আসা Yamaha FZS বাইকটি কিনি এবং ব্যবহার করতে থাকি। এক সময় Yamaha FZS বিক্রি করে দিয়ে Yamaha Fazer কিনি। আসলে এক বাইক বেশিদিন ব্যবহার করতে ভালো লাগে না। তাই চেষ্টা করি বাজারের আধুনিক বাইকটিই কেনার জন্য।

ছোট ভাই কোয়েল যেহেতু রাজশাহীতে কর্নফুলীর ডিলার এবং ইয়ামাহা বাইকের সাথে Haojue নামে নতুন একটি বাইক বিক্রি শুরু করলো। বাইকটি দেখে সাধারন মনে হলেও চালিয়ে আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। ইতমধ্যেই FZS বা Fazer ব্যবহার করে কিছুটা বোরড হয়েও গিয়েছিলাম তাই রুচি পরিবর্তনের মতো করেই Haojue Cool বাইকটা কিনি এবং ব্যবহার করতে থাকি। এটি ২০১৩ সালের ঘটনা।

Haojue Coolবাইকটি কিনেই বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখিন হই। পেছনের টায়ার চিকন, তাই ব্রেকিং এ চাকা স্কীড করে, সামনের চাকার গ্রীপ কম। পেছনের সাসপেনশন কম আরামদায়ক এবং হেড লাইটের আলোতে আমি সন্তুষ্ট নই। সমস্যায় পড়েই থেমে যাবার লোক আমি নই। পেছনের চাকার জন্য ইনডিয়া থেকে চওড়া এবং বড় বিটের টায়ার আনালাম, সামনের চাকায় CEAT টায়ার লাগালাম। পেছনের সাসপেনশন দুটি পরিবর্তন করে বাজাজের গ্যাস সাসপেনশন লাগালাম। সর্বশেষ হেডলাইটে শক্তিশালী হ্যালোজেন বাল্ব লাগালাম। এই বাইকের এয়ার ফিল্টারটি তুলনামুলক বেশি মোটা ও বড় মনে হয়েছে। পরিবর্তন করে ছোট আকারের কিছুটা পাতলা এয়ার ফিল্টার লাগাই। স্পীড বেড়ে গেছে এবং তেল খরচও কম মনে হচ্ছে। এইসব পরিবর্তনের পরে বুঝতে পারলাম বাইকের কি রূপান্তর ঘটেছে। আমি এমনিতেই কিছুটা রাফ বাইক চালাই। কাজেই ব্রেকিং ভালো না হলে চলেই না। টায়ার দুটি পরিবর্তনে আমি ব্রেকিং নিয়ে পুরো সন্তুষ্ট। বাজাজ পালসারের সাসপেনশন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ব্রেক করলে বা ঝাকুনির রাস্তায় ঝাকুনির পরিবর্তে নৌকায় দুলুনির মতো অনুভুতি দিবে।আর শক্তিশালী হেডলাইটের আলোতে আমি দিনে/রাতে যে কোনো সময়েই বাইক চালাতে সমান কমফোর্ট পাই। আমি যে পরিবর্তনগুলো আমার বাইকে করেছি, Haojue এই কাজগুলো যদি এই বাইকটিতে করে তাহলে দাম হয়তো সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু মান বাড়বে অনেক।

বাইকটির সমস্যা নিয়ে প্রথমেই বলে ফেললাম। এবার ভালো দিক গুলো বলি। ৩বছরের বেশি সময় ধরে বাইকটি চালাচ্ছি।এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়িনি। বিশেষকরে বলতে হয় ইনজিনের কথা। ৩বছরের শুরুতে ইনজিনের সাউন্ড যা ছিলো, ৩বছর পরেও তাইই আছে। অথচ আমি বাইক চালাই অনেক রাফ। শহরের মধ্যেও অনায়াসে ৭০কিমি এ চালাই। হাইওয়ে হলে ১০০কিমি/ঘন্টা তো স্বাভাবিক ঘটনা। রাজশাহী থেকে বগুড়া যাতায়াত বা পাশের জেলাগুলোতে ভ্রমন হয়েই থাকে। শহরের মধ্যে বা হাইওয়েতে কোনখানেই কখনও সে আমাকে বিপদে ফেলে নাই।
যদিও বাইকের তেল খরচ কেমন সেভাবে পরিক্ষা করিনি কিন্তু লিটারে ৪৫-৫০কিমি যায় এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কেননা আমার মাসিক তেল খরচ এবং চালানো পথের পরিমান তাইই বলে।

বাইকটির মাইলেজ এই সেগমেন্টের ইন্ডিয়ান বাইকের মতোই। আর যদি রাইড কম্ফোরটের কথা বলেন এক কথায় আরামদায়ক। এর তুলনামূলক নিচু হ্যান্ডেলবার একদিকে যেমন স্টাইলিশ অন্যদিকে হ্যান্ডেলবারের সাথে বসার পজিশান এতো চমৎকার ভাবে আনুপাতিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে আপনি সিটে প্রায় খাড়া হয়ে বসার সুযোগ পাবেন । ফলে দির্ঘদিন বা দীর্ঘসময় বাইক চালালেও আপনার পিঠে ব্যাথা হবে না। ফিজিও থ্যারাপিষ্টের পকেটে আপনার টাকা যাবে না এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশ ভালো একই সাথে সিট হাইট এই ক্লাসের অন্যান্য বাইকের তুলনায় নিচু এর ফলে আপনার সেন্টার অফ গ্যাভিটিও নিচু হবে । ফলে কন্ট্রোল পাবেন অসাধারণ বিশেষ করে শহরের ভিড়ের রাস্থায় আপনি মুগ্ধ হবেন এর কন্ট্রোল নিয়ে। লোয়ার সেন্ট্রার অফ গ্যাভিটি আপনাকে তিনটি সুবিধা দিবে একসাথে better control, balance and boost confidence of the riders.

বেশ কয়েকবার আগেই বলেছি বেশ রাফ বাইক চালাই আমি । বেশ কয়েকবার আমি বাইকটির স্পীড পরীক্ষা করে দেখেছি। একবার তো এক কিলোমিটার এক ফাঁকা রাস্তায় খুবই অল্প সময়ে ০ থেকে ৯০ কিমি গতি তুলেছিলাম । পেছনে কেউ না থাকায় সময়ের রেকর্ড রাখতে পারিনি । মজার ব্যাপার হলো হাই স্পীডে বাইকটি খুবই স্মুথ থাকে। এই স্মুথনেসের অন্যতম কারন হলো এর ইঞ্জিন ভাইব্রেশান কম। বাইকটির আর একটি দিক হলো এর এক্সালেরেসান। এক কথায় বিস্ময়কর। সামনে ডিস্ক আর পেছনে ড্রাম ব্রেক চমৎকার দ্রততার সাথে আপনাকে থামতে সাহায্য করবে , যদি আপনি এই উভয় ব্রেকের ব্যবহার জানেন। বাইকটির ব্রেক শক্ত ভাবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্র্যক্টিস করে নিবেন তা না হলে আঘাত পাবেন।

স্পোর্টি বাইকের মতো পেশীবহুল না তবে এর সেপারেট হ্যান্ডেলবার, এঙ্গুলার হেডলাইট , টেইল কাওলস এবং এরো ডাইনামিক ফুয়েল ট্যাঙ্ক বাইকটি ছিমছাম সুদর্শন করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। আমার কাছে Yamaha Gladiator এর সাথে বাইকটির ডিজাইনে মিল রয়েছে বলে মনে হয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই চমৎকার শক্তি আর ফিচারের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে বাইকটিতে। যেকোনো বয়স শ্রেণী পেসার মানুষের সাথেই চমৎকার মানাবে বাইকটি।
Specs
Engine: 4 stroke, air-cooled single cylinder 150cc.
Max Power: 11.3 hp(8,000RPM)
Max Torque: 8.3 lb-ft(6,000RPM)
Transmission: 5 Speed
Starter: Electric & kick
Wheelbase: 1280mm
Ground Clearance: 178mm
Tank Capacity: 13.3L
Brakes: Front Disc/drum; rear drum
Tire Size: Front: 2.75-18; Rear: 90/90-18


বাইকটির যত্নের জন্য আমি সাধারনত সার্ভিসিং সেন্টারের উপরেই নির্ভর করি। যদিও ধোয়া-মোছা বা ছোটখাটো কাজ ছাড়া তেমন কাজই কখনও করাতে হয় নাই। সব সময়ই চেষ্টা করি বাজারের সেরা ইনজিনওয়েলটিই ব্যবহার করতে। এই খরচটুকু আমার ইনজিনের দীর্ঘস্থায়ীত্বই বাড়িয়ে দেয়। বাইকে ইনজিন ওয়েল পরিবর্তনের এলার্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কখন ইনজিন ওয়েল পরিবর্তন করতে পারবেন।

কোন বাইকই ১০০% নিখুত নয়। সবারই কম-বেশি সমস্যা থাকবেই। ছোটখাটো সমস্যা বাদ দিয়ে যদি বিবেচনা করি তাহলে এই মুল্যের মধ্যে Haojue Cool আসলেই একটি ভালোমানের বাইক। বিশেষকরে তার শক্তিশালী ইনজিন এবং রুচীশীল ডিজাইন যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। তার মজবুত গঠন বাইকটিকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছে।

Rate This Review

Is this review helpful?

Rate count: 9
Ratings:
Rate 1
Rate 2
Rate 3
Rate 4
Rate 5

More reviews on Haojue Cool

হাউজুয়ে কুল মোটরসাইকেল রিভিউ - জুয়েল রানা
2016-08-22

মোটরসাইকেলে হাতে খড়ি হয় যখন আমি ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। আজ থেকে প্রায় ৪০বছর আগের কথা। বন্ধুর SUZUKI 80cc বাইকে বন্ধুর সাহায্যে...

Bangla English
2016-08-14

মানুষ সাধারনত দুটি কারনে মোটরসাইকেল কেনে। প্রথমত শখে, দ্বিতীয়ত প্রয়োজনে। শখের কেনা মোটরসাইকেলের চাহিদা থাকে এক ...

Bangla English
Filter