প্রত্যেকের জীবনে কিছু না কিছু লক্ষ্য স্থির করা থাকে। আমার জীবনে অন্যান্য লক্ষ্যের পাশাপাশি একটি বিশেষ লক্ষ্য স্থির করেছিলাম যে বাইক চালানো শিখবো এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৃতীয় শ্রেনী থেকে বাইক চালানো শিখি। আমি বাসায় বলতে ভয় পেতাম কারণ সে সময়ে আমার বয়স খুবই স্বল্প ছিলো যার কারণে বাসা থেকে অনুমতি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শংকায় ছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিলো যে একটা বাইক কিনবো এবং এই বাইক কেনার জন্য সকল শাসন উপেক্ষা করে আজকে আমি বাইক ব্যবহার করছি আমার পছন্দের তালিকায় থাকা হাউজুয়ে কেএ ১৩৫।
এই বাইকটা কেনার কারণ
আমি ইয়ামাহা,সুজুকিসহ অন্যান্য ব্রান্ডের বাইকগুলো দেখেছি কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে হাউজুয়ে কেএ ১৩৫। আমি কারাদ্বারা উদ্বুদ্ধ হইনি এবং আমার নিজের পছন্দ থেকে মুলত বাইকটা কেনা এছাড়াও আরও কারণ হচ্ছে বাইকটা দেখতে অন্যান্য বাইকের থেকে একদম আলাদা বিশেষ করে লুকের দিক থেকে বাইকটা দেখতে অনেক ভালো লাগে আর ভিন্নধর্মী লুক এই বাইকে খুজে পেয়েছি।
আমি প্রায় ১১ মাস ধরে বাইকটি ব্যবহার করছি এবং ৪৭৬৬ কিমি পথ ঝামেলাবিহিনভাবে চলতে সক্ষম হয়েছি। এক্ষেতে ইঞ্জিনের বিষয়ে আমি লক্ষ্য করেছি যে বাইকটার ইঞ্জিন অনেক স্মুথ । ইঞ্জিনের শব্দটা বিশেষ করে অনেক স্মুথ এবং ৫ গিয়ারে দিয়ে চালালে বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ একদমই শোনা যায় না। বাইকের রেডি পিক আপ অনেক ভালো । ১ম গিয়ার থেকে শুরু করে ৫ গিয়ার পর্যন্ত যথেষ্ট শক্তি পাওয়া যায় ইঞ্জিন থেকে। একটানা অনেকক্ষন রাইডিং করার ক্ষেত্রে ইঞ্জিন থেকে ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায়। মোট কথায় বলতে গেলে ইঞ্জিন থেকে অনেক ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি এবং আশা করি ভবিষ্যতেও এরকম পারফরমেন্স পেয়ে যাবো।
ডিজাইন নিয়ে আমি শুরুতে কিছুটা বর্ণনা দিয়েছি তবুও এখন বলছি যে , বাইকের ডিজাইনটা অদ্বিতীয়। আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান মোটরসাইকেলের ডিজাইন দেখতে অতিষ্ট তাই আমি ভিন্নধর্মী ডিজাইনের বাইক খুজছিলাম এবং সেটা অবশেষে পেয়ে গিয়েছি। আর আমি ব্যাক্তিগতভাবে যেটা মনে করি যে যদি কেউ এই বাইকটা লাগাতার ব্যবহার করে তাহলে অন্য কোন বাইকের দিকে নজর দিবে না।
বাইকটি দেখতে নরম মনে হলে এর গঠন বেশ শক্তপোক্ত। আমি মনে করি যে বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য বাইকের সাথে টক্কর লাগলে আমার বাইকের ক্ষতি কম হবে। আমি ৩জন নিয়ে রাইড করেও বাইকের গঠনের কোন দুর্বলতা খুজে পাইনি।
বাইকটা চালিয়ে অনেক আরাম এবং আমি অন্য কোন বাইক চালিয়ে এরকম স্মুথনেস খুঁজে পাইনি বিশেষ করে স্মুথনেসের দিক থেকে এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইকের থেকে আমি একধাপ এগিয়ে রাখবো হাউজুয়ে কেএ ১৩৫ কে। আমি এই বাইকটা নিয়ে একদিনে প্রায় ২০০ কিমি চালিয়েছি এক্ষেত্রে কোন ব্যাক পেইন বা কব্জি ব্যাথা অনুভব করিনি এবং বাইকটা আমাকে স্মুথ রাইডিং দিয়েছে।
ইলেকট্রিক্যাল বিষয়গুলো ঠিকঠাক মনে হয়েছে কারণ হেডল্যাম্পের আলো আমি অনেক নিখুঁত ও পরিষ্কার পেয়েছি এবং ইলেকট্রিক্যাল ফিচারসগত দিক থেকে বাইকটাতে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে তার মধ্যে একটি বিশেষ লক্ষ্যনিয় দিক হচ্ছে ফুল ডিজিটাল মিটার। এক কথায় বলতে গেলে ইলেকট্রিক্যাল দিক থেকে অনেক ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি।
কন্ট্রোল হচ্ছে বাইকের একটি বিশেষ দিক এবং এইটা বিবেচনা করলে আমি এই বাইকটা নিয়ে গর্বিত কারণ আমি অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়েছি শুধুমাত্র এর ভালো কন্ট্রোলিং এর জন্য। আমি সর্বচ্চো গতি ১২৫ কিমি তুলতে সক্ষম হয়েছি।
ব্রেকিং সিস্টেম অনেক চমৎকার বিশেষ করে সামনের ডিস্ক ব্রেকটা অনেক ভালো ফিডব্যাক দেয়।
টায়ারের সাইজ চিকণ হলেও এর গ্রিপগুলো অসাধারণ। আমি বালুতে এই টায়ার নিয়ে ঝামেলামুক্ত রাইড করতে সক্ষম হয়েছি। আর প্রধান বিষয় হচ্ছে টায়ারগুলো টিউবলেস যার জন্য অনেক ভালো সাপোর্ট পাওয়া যাবে।
ব্রেকিং করার সাথে সাথে এর সাসপেনশনগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠে। আমি ভাংগা রাস্তার স্মুথ পারফরমেন্স পেয়েছি এর সাসপেনশন থেকে।
মাইলেজ নিয়ে আমি একটু সচেতন এবং আমি দেখেছি যে এই বাইকটার অন্যান্য ব্যবহারকারীগণ ৫০ এর মত মাইলেজ পাচ্ছে এদিক থেকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে পরিমাপ করে দেখেছি যে মাইলেজ আমি পাচ্ছি এখন লিটারে ৫৭-৫৮ হাইওয়েতে এবং শহরের মধ্যে ৫৫ কিমি প্রতি লিটারের মত।
আমি রাজশাহী স্বনামধন্য হাউজুয়ে কোম্পানীর ডিলার
কে আর বাইক সেন্টার থেকে বাইকটা কিনেছি এবং তাদের কাছ থেকে বাইক নিয়ে আমি স্বার্থক। কেননা তাদের ব্যবহার একদম আপনজনদের মত । কে আর বাইক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী কোয়েল ভাই অনেক আন্তরিক এবং তাদের প্রত্যেক সার্ভিস অনেক ভালো এবং তারা কাউকে বিপদে ফেলে রাখে না। ১০
দামটা খুব একটা বেশি না । এই সেগমেন্টের মধ্যে অন্যান্য বাইকের থেকে এর দামটা আমি তুলনামূলক কম মনে করছি।
ভালো দিক
-ইউনিক ডিজাইন
-কন্ট্রোল ভালো
-ব্রেকিং ভালো
-ইঞ্জিন স্মুথ
-মাইলেজ বেশি
-হেডল্যাম্পের আলো বেশি
খারাপ দিক
-সামনের এবং পেছনের টায়ার একটু মোটা হলে ভালো হত।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই যে আপনার বাইকের ভালো যত্ন নিলে সে আপনাকে ভালো সার্ভিস দিবে অন্যথায় যদি খারাপ যত্ন নিয়ে ভালো ফিডব্যাক নিতে চান আর যদি বাইককে দোষারোপ করেন তাহলে সেটা বোকামি করা ছাড়া আর কিছু না।