আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল গুলোর বেশ ভাল প্রভাব লক্ষ্য করা যায় এবং সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্ডিয়ান মোটরবাইক কোম্পানি গুলো খুব কম দামে ভাল মানের মোটরসাইকেল গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে এবং একই ভাবে তারা গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক মোটরসাইকেল প্রস্তুত করে থাকে। তারা ক্রমে ক্রমে তাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল গুলো বাজারে নিয়ে আসে। এ সকল কোম্পানিগুলোর মধ্যে Hero Moto Corp অন্যতম। অন্যতম বৃহৎ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানী যেটা কমিউটার মোটরসাইকেলের পাশাপাশি কমিউটার স্পোর্টস ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশে সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি তারা তাদের নতুন মোটরসাইকেল হিরো এচিভার বাজারে নিয়ে আসে। বাইকটি নিয়ে ইন্ডিয়ার মানুষের মাঝে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা দেখতে পাওয়া যায় এবং তারা বাইকটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের হিরো মোটরসাইকেল আমদানীকারক নিলয় মোটরস ঘোষণা করে যে তাদের এই বাইক এখন বাংলাদেশের মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে । তাই এখনই সময় বাইকটির খুঁটিনাটি বিষয় সমূহ জেনে নেওয়ার এবং এর ফলে বাইকটি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের বেশী কষ্ট করতে হবে না।
আমরা সবাই জানি যে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল গুলো দেখতে যেমন সুন্দর এর তুলনায় মোটরসাইকেল গুলোর পারফরমেন্সও অনেক ভাল। হিরো এচিভার বাইকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল ভাল রাইডিং এর পাশাপাশি ভাল পারফরমেন্স নিশ্চিত করা। অন্যদিকে হিরো এচিভার নতুন নতুন কিছু ফিচার নিয়ে বাজারে এসেছে যা ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে থেকে একটু বেশী কিছু সুবিধা দিয়ে থাকবে।
বাইকের আউটলুক
প্রথমত জানা দরকার যে হিরো এচিভারের নতুন মডেলের পাশাপাশি আগের একটি মডেল আছে আগের মডেলের ডিজাইন ছিল অতি সাধারণ।ব্যবহারকারীদের মতানুসারে আগের মডেলের বাইকটি দেখতে তেমন স্টাইলিশ ছিল না । নতুন এই বাইকটির ডিজাইন বেশ সাধারণ যার ফলে গ্রাহকদের নিকট তেমন একটি আকর্ষণীয় হবে না এবং আগের মডেলের থেকে নতুন মডেলটির খুব একটি ভিন্নতা খুজে পাওয়া যায় না। বাইকটি দেখতে কমিউটার বাইকের মতো এই কথা হিরো স্বভাবতই মেনে নেয়। যারা ১৫০ সিসির কমিউটার বাইক খুজছেন তাদের জন্য এই বাইকটি নিঃসন্দেহে অনেক ভাল ।
অপরদিকে বলা যায় যে ফুয়েল ট্যংকারের আকার বেশ ভাল যার ফলে বাইকটি রাস্তায় চালানো অবস্থায় দেখতে বেশ সুন্দর লাগে এবং বাইকটির গ্রাফিক্স দেখতে বেশ ভাল। হিরো এচিভার বাইকটির স্টাইল অনেক সাধারণ এবং ঐতিহাসিক এর ফলে শহুরে কিংবা গ্রাম্য কমিউটার লাভার বাইকার দের কাছে এই বাইকটি বেশ পছন্দনীয়। বাইকটির হেডল্যাম্পের সাথে এই মাসকুলার ফুয়েল ট্যাংকারের ভাল কম্বিনেশন রয়েছে। কালারের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাইলেন্সার পাইপে ক্রোম হিট শেল্ড ব্যবহার করা হয়েছে যেটা বাইকটিকে আরও বেশী সুন্দর করে তুলেছে।
ইঞ্জিন পারফরমেন্স
হিরো এচিভারের সাথে ১৫০ সিসির সিংগেল সিলিন্ডার (ও এইচ সি ) ইঞ্জিন রয়েছে যেটা ১৩.৪ বি এইচ পি এবং ১২.৮ এন এম টর্ক সরবরাহ করে থাকে। বাইকটি ৫ স্পীড ট্রান্সমিশন গিয়ার বক্সের সাথে রাস্তায় চলতে প্রস্তুত। ইঞ্জিন যে শক্তিশালী এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ইঞ্জিনে বেশ কিছু পজিটিভ মডিফিকেশন এর মধ্যে ভাল পিক আপ রেসপন্স অন্যতম যা ট্রাফিক কিংবা ভিড়ের রাস্তায় বেশ কার্যকরী। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাইকটির পারফরমেন্সে কোন ঘাটতি থাকবে না। গিয়ার শিফটিং একদম পারফেক্ট। আগের মডেলের তুলনায় নতুন এচিভার বেশি মাইলেজ দিয়ে থাকে এর প্রধান কারণ হল ১৫০ সিসি কমিউটার বাইক হিসেবে এর হাই পারফরমেন্স ইঞ্জিন। এছাড়াও ইঞ্জিনে নতুন করে মডিফিকেশনের ফলে ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক কম বোঝা যায়। সাধারণত যে কোন প্রকারের কমিউটার বাইকে ৭০ এর বেশী স্পীড তুললে ভাইব্রেশন বোঝা যায় কিন্তু এই বাইকটি ভাইব্রেশন একদম কম যেটা বাইকের একটি ভাল দিক।
মাইলেজ এবং স্পীড
হিরো এচিভার নতুন ইঞ্জিনের সাথে নতুন মডেল বাজারে নিয়ে এসেছে এবং বাইকটির মাইলেজ নিয়ে বলতে গেলে হিরো কোম্পানি দাবি করে যে তাদের এই বাইকটি ৫০ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ দিতে সক্ষম। ১৫০ সিসি কমিউটার বাইক হিসেবে হিরো এচিভারের মাইলেজ আকর্ষণীয়। এটি অবশ্যই লক্ষ্যনীয় বিষয় যে তাদের বাইকের মাইলেজ WTMC (Worldwide Motorcycle Emission Test Cycle) দ্বারা নির্ধারণ করা। WTMC (Worldwide Motorcycle Emission Test Cycle) একটি আন্তর্জাতিক গভরনিং বডি যেটা বাইকের নিয়মিতকরন ,নির্গমন এবং দক্ষতা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাই। তাই হিরো এচিভারের মাইলেজ নিয়ে গ্রাহকদের চিন্তার কোন কারণ নেই। অন্যদিকে বাইকটির টপ স্পীড নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নাই। ১৫০ সিসি কমিউটার বাইক হিসেবে এর টপ স্পীড আনুমানিক ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়, যা বেশ সন্তোষজনক।
ইলেকট্রিক্যাল এবং ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল
বাইকটির ইলেকট্রিক্যাল দিকের কথা বলতে গেলে এই বাইকটিতে নতুন আকারের হেডল্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেই সাথে AHO (Automatic Headlamp On) সিস্টেম বিদ্যমান। হেডল্যাম্পের সাথে রয়েছে 12 V - 35W/35W- হ্যালোজিন বাল্ব। এছাড়াও এল ই ডি টার্ন লাইট, 12V - 5Ah এর মেইন্টেনেন্স ফ্রী ব্যটারি এবং ভাল মানের টেল ল্যাম্প পেছনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে নতুন করে কিছু দেওয়া হয়নি।বাইকটিতে টুয়িন-পড এনালগ ইউনিট রয়েছে যেটা ১০ বছর পূর্বে অনেক আধুনিক ছিল কিন্তু বর্তমানে সেটি আর আধুনিক নেই।হিরো তাদের এই বাইকটিতে আধুনিকায়নের জন্য ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করতে পারত কারণ এখন বেশিরভাগ ১৫০ সিসির কমিউটার বাইকগুলিতে ডিজিটাল মিটার ব্যবহৃত হয়। বাইকটির ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার সম্পূর্ণ এনালগ ইউনিট যার মধ্যে রয়েছে স্পিডোমিটার, ট্যাকচোমিটার, ফুয়েল গেজ,ওডোমটার এবং ট্রীপ মিটার।
স্পেশাল ফিচার
কমিউটার বাইক হিসেবে হিরো এচিভার বাইকটি অনেক আকর্ষণীয় বাইক হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রথমত এই বাইকটিতে হিরোর i3S (Idle Start Stop) রয়েছে যেটা বেশ ভাল কাজ করে। বাইকটি ৫ সেকেন্ডের বেশীক্ষন রেস্টে থাকলে এর ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং ক্লাচ চেপে ধরলে পুনরায় স্টার্ট হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ এবং তেল সাশ্রয়ী। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে যেখানে জ্যামে বা ট্রাফিক সিগন্যালে অনেক্ষন আটকে থাকতে হয়।
দ্বিতিয়ত, নতুন এচিভারে automatic headlamp on (AHO) সিস্টেম রয়েছে এর মাধ্যমে ইঞ্জিন চালু হওয়ায় সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে হেডল্যাম্প অন হয়ে যাবে। এটি একটি সেফটি ফিচার হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যপক পরিচিত।
সবশেষে এর ইনস্ট্রুমেন্ট কনসোলে সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর রয়েছে। যেটা আপনাকে সাইড স্ট্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দিবে।
সাসপেনশন, টায়ার এবং ব্রেক
সাসপেনশন এর কথা বলতে গেলে হিরো এচিভারের সামনের দিকে টেলিস্কোপ হাইড্রোলিক শক এবং সুইং আর্ম এর সাথে পেছনের দিকে শক এবসরবার সাসপেশন ব্যবহার করা হয়েছে।সামনের চাকায় 80/100-18 47P টিউবলেস টায়ার এবং পেছনের চাকায় 80/100-18 54P টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ১৫০ সিসির বাইক হিসেবে এর সামনের এবং পেছনের টায়ার অনেক চিকন হিরো তাদের এই ১৫০ সিসি বাইকে আরও চওড়া টায়ার দিলে ভাল হত। হিরো এচিভার বাইকটিতে সামনের চাকায় ১৩০ মিমি ডিস্ক এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক রয়েছে যেটা আগের মডেলের তুলনায় আরও উন্নত করা হয়েছে।
শেষকথা
নতুন এই বাইকটির সমস্তকিছু পর্যবেক্ষণ শেষে বলা যায় যে, হিরো এচিভার বাইকটি দেখতে সাধারণ কমিউটার বাইকের মতো কিন্তু হিরো নিশ্চিত করে যে তাদের এই বাইকটি আসাধারন হ্যন্ডেল বার, স্মুথ গিয়ার শিফটিং রাইডারকে অনেক আরাম এনে দিবে। এর পেছনে সিট অনেক বড় যার ফলে পেছনে সহযাত্রী নিয়ে অনায়াসেই কোন ঝামেলা ছাড়াই রাইড করা যায়। যদিও টায়ারগুলো বেশ চিকন তবে চিকন টায়ার অনেক বেশী মাইলেজ নিশ্চিত করে।
হিরো এচিভার বাইকটি ১৫০ সিসি কমিউটার বাইক হিসেবে বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার লোকাল মার্কেটে অনেক সাশ্রয়ী মুল্যে পাওয়া যাচ্ছে।বাংলাদেশে বাইকটির বর্তমান মূল্য ১৩৫১০০ টাকা মাত্র।
হিরো এচিভারের লাল, কালো এবং গ্রে এই তিনটি কালার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।