ইন্ডিয়ার অন্যতম প্রস্তুতকারক কোম্পানী Hero Motocorp নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নাই।সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মোটরসাইকেলগুলো অনেক খ্যাতি লাভ করেছে এবং উন্নত থেকে আরও উন্নতর হয়েছে। তারা শুধু বাইরের ডিজাইন গুলো উন্নত করে না বরং ভেতরের ইঞ্জিন এর অবস্থারও উন্নতি করে থাকে। তাদের পূর্ববর্তী মোটরসাইকেল গুলোকে তারা নতুন শেড, নতুন ডিজাইন এবং নতুন ফিচার যোগ করে বাজারে নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি হিরো মোটরসাইকেল হল হিরো গ্লামার এবং হিরো গ্লামার এর সাথে তারা নতুন করে FI (Fuel Injection) সিস্টেমটি সংযুক্ত করেছে এবং এর সাথে নতুন গ্রাফিক্স এবং ফিচার গুলো তো আছেই যেটা গ্রাহকদের খুবই আকৃষ্ট করবে।
নতুন এডিশনের এই Hero Glamour Programmed Fi বাইকটি Hero MotoCorp এর ফুয়েল ইনজেকশন এবং মধ্যম সেগমেন্ট এর কমিউটার বাইক। এই বাইকটিতে অনেক নতুন নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে এর মধ্যে ভাল পিক আপ রেসপন্স, আশানুরূপ মাইলেজ স্টাইলের সাথে আরামদায়ক স্টাইল অন্তর্গত। এর পাশাপাশি এই বাইকটি অনেক মার্জিত ফিচার নিয়ে এসেছে। চলুন দেখে আসে বাইকটার আকর্ষণীয় কিছু ফিচার যেগুলো বাইকটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে ।
ডিজাইন , রাইডিং এবং কম্ফোরট
কমিউটার বাইক হিসেবে Hero Glamour Fi ফ্যাশানএবল ডিজাইন দিয়ে থাকে যেটা তরুণ বয়সী যুবক থেকে শুরু করে কমিউটার প্রেমী বাইকারদের অনেক আকৃষ্ট করে ।সামনের দিকে স্টাইলিশ কিট, অসাধারণ গ্রাফিক্স এর মিশ্রন এবং তিনটি নতুন কালার যেটা আগের মডেলের থেকে ভাল দেখতে লাগে। ভাল রাইডিং নিশ্চিত করার জন্য ডাইমেনশনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। হুইলবেজ টা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কিছুটা বর্ধিত করা হয়েছে যাতে করে ভাল রাইডিং এবং করনারিং পাওয়া যায়। আগের মডেলের থেকে বর্তমান মডেলটি সব দিক থেকেই কিছুটা বড় করা হয়েছে। নতুন ডাইমেনশন যথাক্রমে, ২০২৩ মিমি লম্বা, ৭৬৬ মিমি চওড়া এবং উচ্চতায় ১০৯১ মিমি। বাইকটির শুধু নতুন স্টাইল এবং ডাইমেনশন রাখা হয়নি বরং হিরো কোম্পানি রাইডারকে ক্লাসিক কমিউটার রাইডিং পজিশন দিয়েছে। যেটা রাইডারকে অনেক চাপ এবং মেরুদন্ডে ও হাতের কব্জিতে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করবে। এর ফলে বাইকটি নিয়ে অনেক লং ট্যুরে গেলেও হাতের কব্জি ব্যাথা করবে না। পেছনের সহযাত্রীর সিটিং পজিশনটা এই সেগমেন্ট এর বাইকের তুলনায় অনেক আরামদায়ক রাখা হয়েছে।ফুয়েল ট্যাংকটির ধারণক্ষমতা কিছুটা কমানো হয়েছে এবং বাইকটার ওজন আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে যার ফলে বেশি স্পীডেও ভাল কন্ট্রোলিং পাওয়া যায়।
ইঞ্জিন
নতুন হিরো গ্ল্যামার এর ১২৪.৭ সিসি এয়ার কুলড সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যা সর্বোচ্চ ৭০০০ আর পি এম দিয়ে ১১.৫ বি এইচ পি দেয় এবং টর্ক ৬০০০ আর পি এম দিয়ে ১১ এন এম দিয়ে থাকে। এই বাইকটিতে ৪টি ট্রান্সমিশন গিয়ার রয়েছে। ইঞ্জিন পার্ট গুলো মোটামুটি ভাবে আগের মডেলের মতই রাখা হয়েছে তবে পাওয়ার এবং টর্কে কিছুটা আপডেট করা হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনটাকে নতুনভাবে কারবোরেটর ফুয়েল ডেলভারি এর পরিবর্তে নতুন করে এফ আই সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ফুয়েল ইনজেকশন এর সুবিধা হল এটি খুব ভালভাবে ইঞ্জিনে ফুয়েল সাপ্লাই করে এবং কম তেলে বেশী পাওয়ায় দিয়ে থাকে যার ফলে ইঞ্জিনের শব্দ ঠিক থাকে,মাইলেজ ভাল পাওয়া যায় এবং রেগুলেটর ভালভ এর চেক করার ঝামেলা থাকে না। নতুন গ্ল্যামার এফ আই ( এ এস এফ এস) প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে যেটা ফুয়েল এর জ্বলন ক্ষমতা ঠিক মত করে এবং কোন প্রকারের লস পাওয়ার ছাড়াই ভাল মাইলেজ দিয়ে থাকে।
সাস্পেনশন এবং ব্রেকিং
ব্রেকিং নিয়ে বলতে গেলে গ্ল্যামার এর আগের মডেলে যে ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে ঠিক নতুন এই মডেলে একই ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছে। সামনের সাসপেনশনে টেলিস্কোপ ফরক ব্যবহার করা হয়েছে এবং পেছেনের সাসপেনশনে হাইড্রোলিক শক এবযবার ব্যবহার করা হয়েছে। হিরো আশাবাদী যে তাদের এই সাসপেনশন রাইডারকে অনেক আরাম দিবে। পেছনের শক এবজরবার বাইকের প্রেসার অনুযায়ী তার নিজের মত করে এডজাস্ট করে নেয়। ব্রেকিং এর কথা বলতে গেলে সামনের চাকায় ২৪০ মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।বর্তমানের এই ব্রেকিং সিস্টেম পূর্বের গ্ল্যামার এর থেকে আরও ভাল পারফরমেন্স দিবে।
ইলেক্ট্রিক্যাল ও মিটার
ইলেক্ট্রিক্যাল দিক বলতে গেলে বাইকটি ১২ ভোল্ট -৩ এম্পায়ার এর ব্যাটারি রয়েছে। ১২ ভোল্ট ৩৫ ওয়াট/ ৩৫ ওয়াট এর হ্যালোজিন বাল্ব, (এম এফ আর) হেড ল্যাম্প, পেছনে এল ই দি ল্যাম্প 12 V - 10Wx4 ক্লিয়ার লেন্স টার্ন লাইট এবং পাস লাইট রয়েছে। এছাড়াও বাইকের কনসল প্যানেলে যোগ করা হয়েছে ডিজিটাল/ এনালগ স্পীড মিটার সাথে রিয়েল টাইম-মাইলেজ ইনডিকেটর,ডিজিটাল ট্রিপমিটার, ফুয়েল গেজ এবং আরও কিছু এই বাইকটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গ্ল্যামার এফ আই এর সংযোজিত কিছু নতুন ফিচার
প্রোগ্রামড এফ আই: বাইকটির অন্যতম পরিবর্তন হল এর এফ আই সিস্টেম।এই প্রোগ্রামড এফ আই ফুয়েল সিলিন্ডার থেকে প্রয়োজন মোতাবেক তেল বের করে নেয় যেটা হাই-টেক সেন্সর এর মাধ্যমে পরিমাণ মত ডাটা গ্রহন করে। নতুন মডেলের হিরো গ্ল্যামার বাইকটি অনেক তেল সাশ্রয়ী এবং ভাল মাইলেজ দিতে সক্ষম।
রিয়েল টাইম মাইলেজ ইনডিকেটরঃ রিয়েল টাইম মাইলেজ ইনডিকেটর এর সাহায্যে রাইডার বুঝতে সক্ষম হবে যে তার বাইকে কতখানি তেল বিদ্যমান রয়েছে এবং কতখানি মাইলেজ দিতে সক্ষম। এই ফিচারটি অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে যখন বাইকের তেল একদম নেমে আসবে তখন বেশ সহায়ক হবে।
ব্যাংক এংগেল সেন্সরঃ ব্যাংক এংগেল সেন্সর এর সাহায্যে বাইকটি যখন তার লীন এংগেল এর সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন বাইকটির এই সিস্টেম ইঞ্জিনের সাথে ফুয়েল সাপ্লাই কেটে দেয়। এই ধরনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বাইকটি দুর্ঘটনায় পড়তে পারে এবং ফুয়েল সাপ্লাই লিকেজ হয়ে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটাতে পারে।
মাইলেজ এবং স্পীড
বাইকটির মাইলেজ বাড়ার মুল কারণ হল এর মধ্যে বিদ্যমান এফ আই প্রযুক্তি যেটা এই বাইকটিতে সম্পূর্ণরুপে কাজ করে।এই আই প্রযুক্তি যোগ করার পর থেকে বাইকটির মাইলেজ আগের মডেলের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আগের মডেল যেখানে প্রতি লিটারে ৫০ কিমি যেত সেখানে নতুন মডেলে ৭০ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ পাওয়া যায়। টপ স্পীড আগের মতই রয়েছে তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন যে নতুন মডেলের টপ স্পীড একটু বেশীই থাকে। বাইকটির টপ স্পীড মোটামুটি ১০০ থেকে ১০৫ কিমি প্রতি ঘন্টায় রয়েছে।
তাই সব কিছু দেখার পর এবং পর্যবেক্ষণ করার পর বলা যায় যে, বাইকটিতে বিশেষ ধরনের মডিফিকেশন করা হয়েছে এবং তেল সাশ্রয়ী এবং হাই পাওয়ার এর ১২৫ সিসির ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সাথে সাথে অবাক করা গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং হিরোর এই অবাক তৈরি বাইকটি রাস্তায় চলতে একেবারেই প্রস্তুত।