আমরা সকলেই ইন্ডিয়ান একটি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড সম্পর্কে খুব ভালোভাবে পরিচিত এবং সেটি হল হিরো। যখন হিরো এবং হোন্ডা যৌথভাবে মোটরসাইকেল প্রস্তুত করে তখন তারা বাজারে ২০০৭ সালের দিকে একটি মডেল নিয়ে আসে যার নাম ছিলো হিরো হোন্ডা হাংক ১৫০। ২০১১ সালের দিকে হিরো এককভাবে মোটরসাইকেল প্রডাকশনের নামে এবং হিরো হাংক এর সামান্য কিছু মডেলের পরিবর্তন ঘটায়। যেমন পেছনের ডিস্ক ব্রেক এবং সামান্য কিছু গ্রাফিক্যাল পরিবর্তন করা হয়। তারপরে এই বাইকটি নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে। সম্প্রতি হিরো তাদের হাংক মডেলের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছে এবং নামকরণ করা হয়েছে হিরো হাংক ম্যাট এডিশন।
শুধুমাত্র রঙ এর পরিবর্তন ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো আগের মতই রাখা হয়েছে যেমন-ডিজিটাল মিটার কনসোল, স্টাইলিশ সাইড প্যানেল, টিউবলেস টায়ার, এলিডি টেল ল্যাম্প, একটি এক্সজস্ট কভার, এবং সুন্দর রঙ্গয়ের গ্রাব রেল।
তাই চলুন এক পলক দেখে নেওয়া যাক নতুন এই হাংক বাইকটিতে কী কী পরিবর্তন রয়েছে।
আকর্ষণীয় যে ফিচারসগুলো হিরো হাংকে লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলঃ
-এটিএফটি ইঞ্জিন ডেলিভারিং
-নতুন মিটার কনসোল এবং সাথে সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর
-ইনভারটেড জিআরএস সাসপেনশন
-স্পোর্টস স্পীড লাইন গ্রাফিক্স
-নতুন ভেসকাস এয়ার ফিল্টার।
লুকস এবং গ্রাফিক্স
লুকস নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নাই কারণ এই বাইকটিতে আগের মডেলের মতই একই লুকস দেওয়া রয়েছে কিন্তু গ্রাফিক্যাল এবং কালারের পরিবর্তনের ফলে দেখতে আগের মডেলের থেকে আরও বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। বর্তমানে এই বাইকটিতে রয়েছে ম্যাট কালার এবং গ্রাফিক্সগুলো আরও নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আনা হয়েছে। ফুয়েল ট্যংকারে এখন রয়েছে স্পোর্টস স্পীড লাইন গ্রাফিক্স। এছাড়াও পেছনের সাইড গ্রাফিক্স কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন এই বাইকটি রয়েছে আরও দুর্দান্ত রঙ, নতুন স্টাইলের সাইড প্যানেল, বডি কালারের মিরর, ম্যাট রঙ্গয়ের এক্সজস্ট কভার এবং আকর্ষণীয় রঙ্গয়ের সাসপেনশন দিয়ে হিরো হাংকের গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্পূর্ণ এই ডিজাইনটি গঠিত হয়েছে টুবুলার ডাইমন্ড চেসিস এর উপরে।
ইঞ্জিন
হিরো হাংক সরবরাহ করছে ১৪৯.২ সিসি এয়ার কুল্ড,৪ স্ট্রোক সিংগেল সিলিন্ডার ওএইচসি ইঞ্জিন এবং এই ইঞ্জিন ১৪.৪ পিএস ম্যাক্স পাওয়ার ও ১২.৮ এনএম ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইঞ্জিনকে অগ্রসর করার জন্য এতে রয়েছে ৫ স্পীড গিয়ার বক্স। ১২.৪ কেজি তেল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফুয়েল ট্যাংকারের সাথে বাইকটির ওজন রয়েছে ১৪৫ কেজিতে। কোম্পানী দাবি করে যে এই বাইকটি ম্যাক্স স্পীড ১০৭ কিমি প্রতি ঘণ্টা দিতে সক্ষম। ইঞ্জিনের কম্প্রেশান রেটিং হচ্ছে ৯:১:১ এবং ইগনিশনের জন্য রয়েছে এএমআই- এডভান্স মাইক্রোপ্রসেসর ইগনিশন সিস্টেম।
ডাইমেনশন
১৪৫ কেজির এই বাইকটির ডাইমেনশন পূর্বের মডেলের মতই রাখা হয়েছে। এর ডাইমেনশনে রয়েছে লম্বায় ২০৮০ মিমি , চওড়ায় ৭৬৫ মিমি এবং উচ্চতায় ১০৯৫ মিমি এর পাশাপাশি স্যাডেল উচ্চতা রয়েছে ৭৯৫ মিমি ,১৩২৫ মিমি হুইলবেজ এবং ১৬৩ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স।
টায়ার এবং হুইলস
৮০/১০০x১৮-৪৭ পি টিউবলেস টায়ার রয়েছে সামনের চাকায় এবং পেছনের চাকায় রয়েছে ১০০/৯০x১৮-৫৬ পি টিউবলেস টায়ার । উভয় চাকাতেই রয়েছে বেশ শক্তপোক্ত এলয় হুইল।
ব্রেক এবং সাসপেনশন
ডায়া ২৪০ মিমি ডিস্ক ব্রেক সামনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে পাশাপাশি পেছনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ২২০ মিমি ( অপশনাল) ডিস্ক ব্রেক। অন্যদিকে এই বাইকের ড্রাম ব্রেক মডেলটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এবং ড্রাম ব্রেক মডেলের ড্রামের সাইজ হচ্ছে ১৩০ মিমি এক্সপ্যান্ডিং শু টাইপ ড্রাম ব্রেক।
সাসপেনশনের দিক দিয়ে বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক হাইড্রুলিক শক এবসরবার ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং সুইং আরম সাথে নাইট্রোক্স জিআরএস( গ্যাস রিসারভার সাসপেনশন ) পেছনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সার্বিক দিক থেকে বলা যায় যে নতুন এই হাংক রাইডারকে নতুন অনুভূতি এনে দিবে।
ইলেকট্রিক্যাল
ইলেকট্রিক্যাল ফিচারসগুলো চালনা করার জন্য রয়েছে ১২ ভোল্ট – ৪ এম্পায়ার এমএফ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার সাথে আরও রয়েছে 12 V - 35 W / 35W হ্যালোজিন বাল্ব ট্রাপিযডাল এমএফআর হেডল্যাম্প, 12V-0.5W/4.1W (এলিডি ল্যাম্প) পেছনের টেল ল্যাম্প, 12V-10W (Amber bulb) x 4 nos. (Multi - reflector clear lens) সাইড ইন্ডিকেটর এবং 12 V - 3W পাইলট ল্যাম্প রয়েছে।
মিটার প্যানেল
ডিজিটাল এবং এনালগ এর সমন্বয়ে মিটার প্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে । এখানে রয়েছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার, ওডো এবং ঘড়ী এছাড়া রয়েছে এনালগ ফুয়েল ইন্ডিকেটর ও আরপিএম ইন্ডিকেটর সহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বিষয়।
পরিশেষে
গ্রাহকরা সাধারণত বলে থাকেন যে হিরো হাংক এর একই ডিজাইন অনেক বছর ধরে হয়ে আসছে যার জন্য সেটা গ্রাহকদের সাদরে গ্রহণ করছেন না কিন্তু নতুন এডিশনের এই হাংক বাইকে গ্রাফিক্যাল ও কালার পরিবর্তন করার ফলে গ্রাহকদের কাছে এর আকর্ষণের মাত্রা পূর্বের থেকে সামান্য হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এটা পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে নতুন এই গ্রাফিক্স ও কালার এর ফলে হিরো হাংকের চাহিদা পূর্বের থেকে অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।