আমি অনেক রিভিউতে দেখেছি যে যাদের বাইক চালানোর হাতে খড়ি হয়েছিলো সেগুলো বেশিরভাগই ছিলো লেজেন্ডারী বাইক। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি হয়েছে। আমি আমার জীবনে প্রথম বাইক চালানো শিখি হোন্ডা এইচএস দিয়ে এবং এটা ছিলো ২০১০ সালের ঘটনা । তারপর থেকে বাইকের প্রতি আগ্রহ জাগে । চাকুরি পাওয়ার পরে আমাকে দেওয়া হয়েছিলো হিরো সিবিযেড এক্সট্রিম সেটা আমি প্রায় ১ বছর ধরে ব্যবহার করেছিলাম। এই বাইক ব্যবহার করে আমার কাছে হিরোর প্রতি একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং তাদের বাইক সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা লাভ করতে পেরেছিলাম। সর্বশেষ আমি যে বাইকটি এখন ব্যবহার করছি সেটি হল হিরো হাংক এর নতুন এডিশন। এই বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আজ আমি মোটরসাইকেল ভ্যালীর মাধ্যমে শেয়ার করবো। আশা করি রিভিউ এর শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন।
হিরো হাংক কেনার জন্য আগ্রহ জাগে মুলত হিরোর ইঞ্জিন দেখে কারণ আমি এর পূর্বেও হিরোর বাইক ব্যবহার করেছি এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে হিরোর ইঞ্জিন খুব ভালো লেগেছে যার জন্য আমি হিরোর হাংককেই বেছে নিই। আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে বাংলাদেশের রাস্তায় অনেক পালসার ও পুরোন মডেলের হাংক দেখতে পাওয়া যায় । আমি ভিন্ন কিছু চাচ্ছিলাম সেজন্য নতুন এডিশনের হাংক আমার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিলো।
নতুন এই হাংকের আকর্ষণীয় যে দিকটি আমার মনে নাড়া দিয়েছে সেটি হল এর রঙটা । ম্যাট রঙয়ের সাথে সুন্দর গ্রাফিক্সের কম্বিনেশনের ফলে দেখতে আগের থেকেও বেশ আকর্ষণীয় লাগে। আমি বলবো যে বাংলাদেশের যারা হাংক বাইকপ্রেমি রয়েছে তাদের কাছে এই বাইকটা আগের থেকেও বেশী গরজিয়াস লাগবে আউটলুকের দিক থেকে।
ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে আমার পূর্বের হাংক চালিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা আছে কিন্তু নতুন এডিশনের এই হাংকের ইঞ্জিনটা আমার কাছে আরও বেশী স্মুথ ও ইঞ্জিন শব্দটা আগের থেকে আরও উন্নত মনে হয়েছে। ইঞ্জিন শুরুতে যেমনটা হিট হওয়া দরকার ঠিক তেমনটাই হচ্ছে এবং ইঞ্জিনের কোন ওভার হিট লক্ষ্য করিনি।
সিটিং পজিশনটা আগের মতই আছে এবং এটা অনেক আরামদায়ক। হিরো হাংকে লং রাইড করলে কাঁধ বা হাতের কব্জি ব্যথা করে না এবং এর হ্যান্ডেলবারের পজিশন ও সিটিং পজিশন আমার কাছে যথাযথ লেগেছে। নতুন এডিশনের হাংক নিয়ে আমি এখনও লং রাইডে যেতে পারিনি যেহেতু বাইকটা নতুন বাজারে এসেছে এবং কেনার পর থেকে লং রাইডে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আশা করছি পরবর্তী রিভিউতে আমি লং রাইডের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
হিরো হাংকের কন্ট্রোল আমরা সকলেই জানি শুরু থেকেই অনেক ভালো কিন্তু একটা বিষয় আমি হিরোর নজরে দিতে চাই যে তাদের টায়ারের সাইজটা আরও উন্নত করা দরকার কারণ মাস্কুলার ডিজাইনের সাথে এরকম চিকন টায়ার খাপ খায় না এবং টায়ারটা উন্নত করলে আরও বেটার কন্ট্রোল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করছি।
ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে এই বাইকে ডাবল ডিস্ক ব্যবহার করা হয়েছে এবং ব্রেকিং পারফরমেন্স নির্ভর করে রাইডারের উপর। আপনি যেভাবে ব্রেকিং করবেন সেভাবেই সে ব্রেকিং পারফরমেন্স সরবরাহ করবে।
রাতে হেডল্যাম্পের আলো তেমন ভালো না। হেডল্যাম্পের উজ্জলতা ও পাওয়ার আরও বাড়ানো দরকার। সুইচগুলো আগের গুলো একটু স্মুথ ছিলো এবং আমি যেই বাইকটি নিয়ে সেগুলোর সুইচ স্মুথনেস একটু কম।সুইচে যদি পালসারের মত এলিডি লাইট ব্যবহার করা হয় তাহলে আরও ভালো হয় বিষয়টা।
সাসপেনশনগুলো একদম পারফেক্ট লেগেছে আমার কাছে। মনোশক বাদে অন্যান্য বাইকের থেকে এই বাইকের সাসপেনশন অনেক ভালো পারফরমেন্স দেয়।
মাইলেজ আমি সেভাবে পরিমাপ করিনি আর নতুন বাইক হিসেবে মাইলেজ সেভাবে পরিক্ষা করার সুযোগ নেই। তবে ধারণা করছি যে ৪০কিমি প্রতি লিটার এর মত পাবো। এই মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
আমি বাইকটা কিনেছিলাম রাজশাহী স্বনামধন্য নিলয় হিরোর ডিলার শুভ এন্টারপ্রাইজ থেকে এবং তাদের ব্যবহার খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে শুভ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সম্রাট ভাই খুবই আন্তরিক এবং প্রতিটা বিষয় অনেক যত্নের সাথে সমাধান করে। এখনও বাইকটা নিয়ে আমি সার্ভিসে যাই নি তবে তাদের কাছ থেকে যেহেতু কিনেছি এবং তাদের ব্যবহারও আন্তরিক তাই আশা করছি তারা আমাকে ভালো সার্ভিস দিবে।
দাম হিসেবে আমি মনে করি এই দামের মধ্যে সেরা ১৫০ সিসির বাইক আর দামের জন্য অন্যান্য বাইকের থেকে এর চাহিদা একটু বেশী দেখা যায়। হিরো ব্র্যান্ড হিসেবে এই দামে সুন্দর বাইক গ্রাহকদের হাতে তুলে দিচ্ছে সেজন্য হিরোর প্রশংসা অবশ্যই করতে হয়।
কেউ যদি হাংক বাইকটা কিনতে চাই সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে যে , ব্র্যান্ড হিসেবে,রিসেল ভ্যালুর দিক থেকে, ডিজাইনের দিক থেকে, ইঞ্জিনের দিক থেকে হিরো হাংক চমৎকার একটি বাইক এবং আপনারা চোখ বন্ধ করে হাংক বাইকটি কিনতে পারেন।
সবশেষে হিরোর কাছে আমার পরামর্শ থাকবে যে , বাজারের প্রতিটি কোম্পানী তাদের প্রডাক্টগুলোর ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন নিয়ে আসছে ঠিক তেমনিভাবে হিরো হাংকের নতুন কোন ভার্সন বাজারে নিয়ে আসা হোক । এর ফলে চাহিদা ও আকর্ষণ দুইটাই বৃদ্ধি পাবে । যেহেতু হাংক আমাদের বাংলাদেশের বাজারে অনেক বছর ধরে রয়েছে এবং একই ডিজাইন রাখা হয়েছে তাই আমার কাছে মনে হয় যে নতুন কোন ভার্সন নিয়ে আসলে হাংক প্রেমী রাইডাররা সাদরে গ্রহন করবে।