মোটরসাইকেল কেনার ব্যাপারে বেশিরভাগ ক্রেতা দেখি নিজের সখের ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেন বেশি কিন্তু আমি তা করিনি বরং আমার প্রয়োজনকে সামনে রেখে আমি আমার মোটরসাইকেল পছন্দ করার ব্যাপারে তৎপর ছিলাম। আমি বলতে পারি এই একটা কারনে দিন শেষে আমার সিদ্ধান্তই এবং বাইক পছন্দে প্রয়োজনের গুরুত্ব আমাকে আমার জন্যে মোটরসাইকেল কেনাতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছে।
অতিরিক্ত কোনকিছুই আমার পছন্দ না যেমন অনেক দামী মোটরসাইকেল বা অনেক ফিচার সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল যে ফীচারের বেশিরভাগই আমার কোন কাজে আসবে না। তাই আমি সবকিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশে কম দামে সবচেয়ে ভালমানের মোটরসাইকেল সরবরাহকারী কোম্পানি হিরোর বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নিই। আর যেহেতু আমাকে প্রতিদিন ৭০-৮০ কিলোমিটার যাত্রা করা লাগে তাই আমি হিরো হাংক ১৫০ সিঙ্গেল ডিস্ক বাইকটা আমার পছন্দ তালিকার শীর্ষে রেখে আমি শোরুমে যায় এবং কালো-লাল মিশ্রনের বাইকটা পছন্দ করে কিনে ফেলি। ডাবল ডিস্কের নিলাম না কারন সেটার দাম প্রায় ১০,০০০ টাকা বেশি যা আমার কাছে শুধুমাত্র ব্রেকিং ব্যালেন্সের নিরাপত্তার জন্যে অতিরিক্ত মনে হয়েছে কারন আমি বাইক রাইড করতে পারলে সিঙ্গেল ডিস্কেও ঠিকঠাক ব্রেকিং ব্যালেন্সিং করতে পারবো।
আজ মোটামোটি ১৮ মাস হলো আমি আমার হিরো হাংক ১৫০ সিঙ্গেল ডিস্ক বাইকটা ব্যবহার করে আসছি এর মধ্যে আমি একদিনে একটানা বাইকটা চালিয়েছি ৪০০ কিলোমিটারের মত আর সর্বোচ্চ গতি উঠিয়েছিলাম ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা তবে বলী রাখা ভাল যে গতি আরও উঠানো সম্ভব ছিল কিন্তু আমি উঠায়নি।
আমি যখন আমার জন্যে মোটরসাইকেল কেনার কথা চিন্তা করছিলাম, আমাকে সবার আগে বিবেচনায় রাখতে হয়েছিলও প্রতিদিনের ৭০-৮০ কিলোমিটার রাইড করার কথা তাই আমি সেইরকমই একটা মোটরসাইকেল কেনার কথা ভাবছিলাম যা বেশি স্পীডে চলালেও স্কীড করবে না আর এই দিক দিয়ে আমি হিরো হাংককে একবারে পারফেক্ট পেয়েছি।
আমি যেদিন একটানা ৪০০ কিলোমিটার রাইড করেছি সেদিনই আমি বাইকটা চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছিলাম। যদি কোন সমস্যা থেকেই থাকতো আমি আমার পুর্বের বাইকের অভিজ্ঞতা থেকে তা ঠিকই টের পেতাম কিন্তু আমি আমার হিরো হাংক ১৫০সিসি বাইকটাতে কোনরকম সমস্যা টের পায় নি। দীর্ঘসময় ধরে বাইকটা চালিয়েও আমি ক্লান্তি বা আরাম বা বাইকের পারফরমেন্সে কোনরকম পরিবর্তন খেয়াল করতে পারিনি।
আমার হিরো হাংক ১৫০সিসি সিঙ্গেল ডিস্ক বাইকটাতে যে কয়েকটি সবচেয়ে ভাললাগা দিক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাইকটার মাইলেজ। আমি দেড় বছর পরে বাইকটাতে পথভেদে মাইলেজ পাচ্ছি ৫০-৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার। অন্য সবাই কিভাবে নেবেন জানি না, ১৫০সিসির একটা বাইক থেকে ৫০ কিলোমিটার মাইলেজ পাওয়াটা আমার কাছে অনেকটাই অবাক করার ব্যাপার সেখানে আমি হাইওয়েতে গেলে কমবেশি ৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত আমি কয়েকটি বিষয় খেয়াল করেছি যেগুলা আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে, এগুলো হলোঃ
-ইঞ্জিন থেকে কোনভাবে মবিল লিক হতো, কিভাবে হতো জানি না। মবিল বের হউয়ার কারনে পুরো ইঞ্জিনে ধুলা লেগে থেকে নোংরা দেখাতো। সার্ভিস সেন্টারের সার্ভিস আমার কাছে খুব ভালো লাগতো, যেকোন সমস্যা নিয়ে গেলে তারা খুব আন্তরিকার সাথে সমাধান করে দিতো কিন্তু এই সমস্যাটা তারা দুইবারের চেষ্টাতেও করতে পারেনি তাই আমি বাইরে এই সমস্যার সমাধানে দারস্থ হয় এবং সমস্যাটা ঠিক করে নিই।
-ইঞ্জিনে আমি পারফরমেন্সে কোন ঘাটতি পাই নি ঠিকই কিন্তু আমার কাছে কেন জানি মনে হয়েছে ইঞ্জিনটা অতিরিক্ত গরম হচ্ছে। গরম হউয়াটা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে আমি হয়তো টের পেতাম না কিন্তু ওভারহিটিং এর কারনেই হয়তো টের পাচ্ছি।
এখন মুল পয়েন্টে কথা বললে যা দাঁড়ায় তা হলো হিরো হাংক ১৫০ সিঙ্গেল ডিস্ক যে সেগমেন্টের মোটরসাইকেল বা এর মুল্য বিবেচনায় আমি সামান্য কয়েকটা সমস্যা উল্লেখ করেছি তা আমার কাছে সমস্যা মনে হয় নি বরং এমনকিছু বা এর থেকে বেশি সমস্যা পাওয়াটাও আমার মতে অস্বাভাবিক কিছু না।
আমি বলবো যে হাংক এর মুল্য বিবেচনায় আমি যে পারফরমেন্স পেয়েছি সেটাই আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। সবচেয়ে কমদামে ভালমানের বাইক তৃনমুল পর্যায়ে পৌছে দেওয়ার হিরোর প্রচেষ্টা তা তারা হিরো হাংকেও অক্ষুন্ন রেখেছে বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।
তাই আমি পাঠিকদের উদ্দেশ্যে একটি কথা অবশ্যই বলবো। অযথা বেশি টাকা খরচ করে অতিরঞ্জিত মোটরসাইকেল না কিনে আপনার প্রয়োজন বিবেচনা করে বাইক কিনুন, দেখবেন টাকাও বাচাতে পারবেন বাইকও অনেক ভাল পাবেন।