আমি মাসুদ মাহমুদ, পেশায় একজন ছাত্র। পাশপাশি নিজেকে বাইকার হিসেবে সবার সামনে পরিচয় দিতে ভালো লাগে। আমার বাইক চালানোর হাতেখড়ি হয় জিয়ালিং ৮০ সিসি বাইক দিয়ে যেটা আমার বাবার বাইক ছিল। এরপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। এখন আমি ব্যবহার করছি হিরো হাংক ১৫০ সিসি বাইকটি । আমি আমার বাইক ব্যবহারের আলোকে কিছু মতামত এবং ভালো মন্দ দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি আমার সাথে থাকবেন।
আমি তখন স্কুলের ছাত্র, আমার বাবা আমাকে তার জিয়ালিং ৮০ সিসি বাইকটি নিয়ে আমার স্কুলে রেখে আসতেন। তখন থেকেই মনে মনে বাইক চালানোর শখ ছিল কিন্তু বয়স কম হওয়াতে বাবাকে সেটা বলতে লজ্জাবোধ করেছি।তারপর হটাত একদিন বাবাকে বলেই বসলাম যে বাবা আমাকে বাইক চালনো শেখান। আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাবা আমাকে নিয়ে একটা ফাঁকা মাঠে গিয়ে বাইক চালানো শিখালেন তখন থেকেই আমার বাইক চালানোর হাতেখড়ি। এরপর আমি আমার বাবার বাইকটিকে আমার সঙ্গী করে নেই এবং বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করি। তারপর যখন হাইওয়েতে ৮০ সিসি এই বাইকটি চালাতাম তখন গতির অনেক ঘাটতি অনুভব করতাম, মনে মনে ভাবতাম আরও গতি হলে ভালো হত। কলেজ লাইফ আমার ৮০ সিসি বাইক নিয়েই চলে গেল তারপর ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর ৮০ সিসির বাইকটি বিক্রয় করে দিয়ে বেশ কিছু দিন বাইক ছাড়াই ছিলাম এবং তখন আমার ৮০ সিসি বাইকটাকে খুব মিস করতাম। তারপর শুনলাম যে হিরো নাকি তাদের ঈদ উপহার দিচ্ছে তাই আর দেরি না করে রাজশাহীর রানীবাজারে অবস্থিত নিলয় হিরো থেকে বাইকটা কিনে নিলাম।
এই বাইকটা কেনার মূল কারণ ছিলো আমার যাতায়াত ব্যবস্থা কে আরও সহজ করে তোলা। এছাড়াও আমার বাজেট কম থাকার ফলে কম বাজেটে এই সুন্দর মাস্কুলার বাইক পাওয়া খুব কঠিন তাই সব কিছু বিবেচনা করে এই বাইকটি কেনা। আমি এই বাইকটি ২ মাসের কিছুটা বেশী সময় ধরে ব্যবহার করছি। ছোট খাটো সমস্যা ছাড়া এই পর্যন্ত বড় সমস্যার সম্মুখীন হইনি।
ডিজাইন বলতে গেলে আমার হাংক অনেক আগে থেকেই চোখে লেগে ছিল এবং মনে মনে ভাবছিলাম যে কবে এই বাইকটা আমার হবে। ডিজাইন নিঃসন্দেহে অনেক ভালো মানের ডিজাইন। আমার বাইকটা ২০১৭ মডেল হওয়ায় সামনে হেডল্যাম্পের পাশে এবং ফুয়েল ট্যংকারের সাইডের ডিজাইনটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এছাড়াও আমার বাইকের বিল্ড কোয়ালিটিটা যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে।
কম্ফোরটের দিক দিয়ে আমার এই বাইকটি চরম ভালো লাগে। কারণ এর সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেলবার, ইত্যাদি অনেক আরামদায়ক । আমি রাতেও অন্ধকার রাস্তায় রাইড করেছি এবং এক্ষেত্রে আমি হেডল্যাম্পের আলোর কোনো স্বল্পতা পায়নি। কিন্তু একটা বিষয় আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে সেটা হলো এর সুইচগুলো যথেষ্ট উন্নতমানের না। হ্যান্ডেলবারের সুইচ গুলোর কোয়ালিটি আমার কাছে খুব কম মনে হয়েছে।
কন্ট্রোলিং এর দিক দিয়েও আমার এই বাইকটি বেশ ভালো লেগেছে। আমি যে কোন পরিস্থিতিতে বেশ ভালো ভাবে কন্ট্রোল করে নিতে কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই। আমি এই পর্যন্ত আমার বাইকে টপ স্পীড তুলেছি ৮২ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। অন্যদিকে ব্রেকিং আমার কাছে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। সাসপেনশন ও যে কোন রাস্তায় বেশ ভালো পারফরমেন্স দেয়। তবে একটা বিষয় নেগেটিভ সেটা হলো ১৫০ সিসি মাস্কুলার বাইক হিসেবে এর টায়ারটা বেশ চিকন হয়ে গেলে। টায়ারটা আরও মোটা হলে হয়তো ভালো হত।
আমার বাইকের সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি সেটা হলো যে এর মাইলেজটা অনেক কম। প্রথম ৬০০ কিমি এর মধ্যে আমি পেয়েছি ২৫-৩০ কিমি প্রতি লিটার এবং তারপর প্রথম সার্ভিসিং করে আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি ৩৫-৪০ এর মতো কিন্তু নিলয় হিরো দাবি করে যে তাদের এই বাইকটার মাইলেজ নাকি ৫০ এর মতো দিবে। বলে রাখা ভালো যে আমি বর্তমানে কোম্পানী থেকে সরবরাহকৃত মোবিলটি ব্যবহার করছি।
অন্যদিকে সার্ভিসিং সেন্টারের মান খুবই ভালো। তাদের ব্যবহার আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে কিন্তু তারা প্রথম প্রথম তেমন পাত্তা দিতো না কিন্তু বর্তমানে তারা খুব ভালো ব্যবহার করছে।
বাইকটি উপহার দাম হিসেবে আমার কাছে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে কারণ এই দামে মাস্কুলার বডি, শক্তিশালী ইঞ্জিন পাওয়া খুব কষ্টকর।
সব কিছু মিলিয়ে আমি বাইকটির রেটিং ৪/৫ দিবো।