ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ১৫০ সিসির মধ্যে একটা ভাল মাইলেজ সমৃদ্ধ মোটরসাইকেল কিনার। আমি যেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত যাতায়াত করাতে পারি। আমার পরিচয় আমি মোঃ রাকিব আলী। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার মোটরসাইকেল এর নাম হিরো হাংক ১৫০ সিসি। এটি কিনে আমার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে, সাথে সাথে আমার ব্যবসার কাজের জন্য দ্রুত যে কোন জায়গায় যেতে পারি। এই মোটরসাইকেলটি ব্যবহারের পূর্বে আমি আরো পাচটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছি। সেগুলো অল্প সিসির মোটরসাইকেল ছিল। এই মোটরসাইকেলটিই কেবল ১৫০ সিসির চালাচ্ছি। আমি বিভিন্ন শোরুমে খোজ নিয়ে দেখেছি এই মোটরসাইকেল টির দামও অনেকটা কম। তখন সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম এই বাইকটিই কিনবো। হিরো হাংক ১৫০ সিসির বাইকটি আমি তাহেরপুর বাজারের একটি শোরুম থেকে কিনেছি। আমি এই মোটরসাইকেলটি চার মাস আগে কিনেছি। চার মাস আমি প্রায় ৪০০০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যে এই বাইক সম্পর্কে যেটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আমার এই রিভিউটি পড়লে হিরো হাংক মোটরসাইকেল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
এই মোটরসাইকেলটি আমি আমার নিজের পছন্দ মতেই কিনেছি। এটির ডিজাইন আমার এক দেখাতেই পছন্দ হয়ে যায়। এটির রঙ আর ডিজাইন দুটোই আমার খুব পছন্দের। কিন্তু এই মোটরসাইকেলটি চালালে যে দেখে সেই আমাকে প্রশ্ন করে, এটা কি পুরানো মোটরসাইকেল? আমি তাদের জিজ্ঞেস করি এমন কথা কেন বলছেন। এই বাইকটি মাত্র চার মাস আগে কিনেছি। কিন্তু তারা এটা মানতে নারাজ। তারা আমাকে জানায় এর বডির রংটা খুব কমা। এই কালারটা দেখতেই পুরাতন এর মত মনে হয়। এই কথাটা শুনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তবে এর বডির প্লাস্টিক গুলো খুব মজবুত। আমার মনে হয় না যে সামান্য আঘাতে এগুলো ভেংগে যাবে বা ফেটে যাবে। এছাড়া পার্টস গুলো অনেক মজবুত বলে মনে হয়।
এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল। কেননা, আমি দ্রুত গতিতে চালিয়েও দেখেছি ইঞ্জিনে কোন সমস্যা বুঝতে পারি নাই। এটি একটি আরামদায়ক বাইক। ইঞ্জিনের শব্দটাও অনেক সুন্দর। অন্যান্য বাইকের মত এটি ওভার হিট হয় না। আশা করি আগামী দিন গুলোতেও ভাল পারফরমেন্স পাবো। এই বাইকের ওজন প্রায় ১৪৬ কেজি। এই বাইকের ইঞ্জিন নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।
এই মোটরসাইকেল এর সিটিং পজিশন খুব একটা ভাল না। এর সিটটাও বেশ শক্ত। এতে করে আমি আরামের সাথে রাইডিং করতে পারি না। দুই জনের বেশি এই বাইকে চড়া যায় না। এই মোটরসাইকেলটির সিটি একটু উঁচু, তবে আমার সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে কোন সমস্যা হয় না। হ্যান্ডেল বারের ডিজাইনও বেশ ভাল। এটি ধরে রাইডিং করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। আমি ফাকা রাস্তায় ১১৩ কিমি/ ঘন্টা গতিতে তুলেছি। এছাড়া এক দিনে আমি প্রায় ৩০০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াত করলে আমার কোমর ব্যাথা করে। তবে দ্রত যাতায়াতের জন্য এই মোটরসাইকেলটি একদম পারফেক্ট।
এই মোটরসাইকেল এর ব্রেক খুবই ভাল। কেননা, যে কোন পরিস্থিতিতে আমি মোটরসাইকেলটি কন্ট্রোল করতে পারি। এর ডিস্ক ব্রেকটি থাকায় কন্ট্রোল আরো সহজ হয়। এই মোটরসাইকেল এর চাকাগুলো মোটা এবং এর টায়ারের গ্রিপ গুলো অনেক ভাল। মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো অনেক ভাল। খারাপ বা কাচা রাস্তাতে একা চালালেও আমাকে ঝাঁকুনি লাগে না। এছাড়া আমি রাতে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করে দেখেছি হেড লাইটে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো হয়। এতে করে দিনের মতই পরিষ্কার পথ দেখতে পাই। হ্যান্ডেল বারের সাথে যে বিভিন্ন সুইচ গুলো রয়েছে এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন প্রকারের সমস্যা হয় না। এর লুকিং গ্লাস দুটো অনেক উন্নত মানের। এটির মাধ্যমে আমি পিছনের দৃশ্য খুব সহজেই পরিষ্কার দেখতে পাই। এটি রাইডিং করে আমি মোটামুটি ভাল অনুভূতি পেয়েছি। তবে এর সিটিং পজিশন এর উন্নতি করা দরকার।
এই মোটরসাইকেলটি কিনার সময় শোরুম থেকে বলেছিল ১ লিটার তেলে ৫০ কিমি পথ চলতে পারবো। এখন আমি প্রায় ৪৮ কিমির মত যেতে পারি। এই দিক থেকেও আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। কারন তাদের কথার সাথে কাজের মিল কিছুটা হলেও মিল আছে।
১৫০ সিসির মোটরসাইকেল হিসেবে এর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। কেননা, অন্যান্য ব্যান্ডের ১৫০ সিসি বাইকের দাম এর চেয়ে অনেক বেশি। আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটির দাম যদি আরো কমানো হয়, তবে সবাই এই বাইকের উপরে ঝুঁকে পড়বে।
আমি মোট এক দিন সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সেখানকার পরিবেশে আমার অনেক ভাল লেগেছে। এছাড়া তারা আমার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। অতিথি আপ্যায়নেও তারা কমতি রাখেন নাই। তাদের কাজের মান আমার পছন্দ হয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, কেউ যদি ১৫০ সিসির বাইক কিনতে চান, তাহলে হিরো হাংক ১৫০ সিসির বাইকটি কিনতে পারেন। কেননা, দ্রুত যাতায়াতের জন্য এই বাইকটি একদম পারফেক্ট। এটির পারফরমেন্স অনেক ভাল। কোম্পানির কাছে আমার দাবি, আমার বাইকের যে রঙের ডিজাইন মানুষে দেখে পছন্দ করে নাই। পরবর্তী বাইকগুলোতে যেন এমন রং এর ডিজাইন না বের করা হয়। সবাইকে ধন্যবাদ।