Hero Moto Corp হচ্ছে ইন্ডিয়ার অন্যতম মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তারা শুধু তাদের দেশের মধ্যেই মোটরসাইকেল সরবরাহ করে না বরং বাংলাদেশেও তারা তাদের মোটরসাইকেল গুলি সরবরাহ করে থাকে। কমিউটার সেগমেন্টের মধ্যে তাদের অনেক জনপ্রিয় কিছু মোটরসাইকেল রাস্তায় দেখতে পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগে তাদের Hero Splendor iSmart 100 বাইকটি বাজারে নিয়ে আসা হয়। বাইকটি ইন্ডিয়ার মত বড় দেশে অনেক সাড়া ফেলে এবং বাইকটির বেশ ভাল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে হিরো কোম্পানি তাদের এই কমিউটার সেগমেন্টের বাইকটি আরও সুন্দর ডিজাইন দিয়ে এবং ১১০ সিসি ইঞ্জিন দিয়ে গ্রাহকদের নিকট নতুন করে তুলে ধরে। চলুন দেখে আসি Hero Splendor iSmart 110 বাইকটির নতুন ডিজাইন এবং পারফরমেন্স।।
ডিজাইন এবং ডাইমেনশন
ডিজাইনের কথা বলতে গেলে ismart-১০০ সিসি এবং ismart-১১০ সিসির ডিজাইন বেশ কাছাকাছি কিন্তু ১1০ সিসি মডেলে গ্রাফিক্স এবং ডাইমেনশনে উন্নতর কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
ismart-১০০ থেকে ismart-১১০ সিট ৩৫ মিমি লম্বা । এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে লম্বা রাইডিং এর ক্ষেত্রে ব্যাক পেইন এর মাত্রাটা অনেক কম অনুভুত হবে এবং সিটিং পজিনশন অনেক বড় হওয়ায় পেছনের পিলিয়নের বসতে অনেক সুবিধা হবে।সিটিং পজিশনটি ফুয়েল ট্যাংকারের উপরেরে অংশের সাথে সুন্দর ভাবে মিলিত করা হয়েছে যার ফলে বাইকটিকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে এবং অনেকটা স্পোর্টস ক্যাটাগরি বাইকের মত লাগে। আগের মডেলের থেকে ফুয়েল ট্যাংকারটা সামান্য কার্ভ ও আকারে বড় করা হয়েছে এবং কমিউটার বাইক হিসেবে নতুন কালার কম্বিনেশন বাইকটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। ডাইমেনশনের কথা বলতে গেলে নতুন মডেলের ডাইমেনশন আগের মডেলের তুলনায় অনেকটা বড় রাখা হয়েছে। বাইকটির ডাইমেনশন হল ২০৫৫ মিমি লম্বা, ৭৭০ মিমি চওড়া এবং উচ্চতায় ১০৫৫ মিমি। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং হুইলবেজ উভয়ই আগের থেকে উন্নত করা হয়েছে। উন্নত করার পর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫ মিমি এবং হুইলবেজ ১২৬৫ মিমি রাখা হয়েছে। ফুয়েল ট্যাংকারের ধারন ক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে নিয়ে ৮.৫ লিটারে রাখা হয়েছে।
রাইডিং এবং হ্যান্ডেলিং
হ্যান্ডেলিং এবং রাইডিং আগের মডেলের মতই আছে তবে নতুন iSmart 110 এর দিকটা একটু বেশী উপভোগ্য।টায়ার এবং ব্রেক রাস্তায় করনারিং করার জন্য বেশ সহায়ক হবে। ১১০ সিসি কমিউটার বাইক হিসেবে এই বাইকটি অবাক করা গ্রিপ দিয়ে থাকে। বাইকটির সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক এবং পিলয়নের জন্য পেছনে মুভমেন্ট করা অনেক সহজ যেটা আমরা আগেই বলেছি। ভাল গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং হুইলবেজ থাকার ফলে যে কোন প্রকার রাস্তায় অনায়াসেই চালানো যায়। চেসিস এর কথা বলতে গেলে এটি অনেক আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করে। শহুরে কিংবা গ্রামের রাস্তায় বাইকটি অনেক ভাল রেসপন্স দিয়ে থাকে আরাম এর দিক থেকে। কোম্পানি বলে যে তাদের এই বাইকটিতে চেসিস এবং সাসপেশনে এর ভাল কার্যক্ষমতা পাওয়া যায় যার ফলে এটি অনেক ভাল ব্যালেন্স নিশ্চিত করে থাকে।
ইঞ্জিন
এইবার একটু নজর দেওয়া যাক ১০৯.৫১ সিসির ইঞ্জিন এর দিকে যেটা এই বাইকটিতে ব্যবহৃত হয়েছে। এটা অসাধারণ একটা ইঞ্জিন যার সাথে কারবুরেটর দুইটা ভালভ এবং সিংগেল সিলিন্ডার বিদ্যমান। হিরো তাদের এই বাইকটিতে কম্প্রেশন রেশিও রেখেছে ১০:১ যেটা আগের মডেলে ছিল ৯:৯:১ এবং এটি করা হয়েছে মুলত ভাল পারফরমেন্স এবং তেল খরচ কমানোর জন্য। ম্যাক্স পাওয়ার এখন ৭৫০০ আর পি এম @ ৯.৩০ বি এইচ পি এবং টর্ক ৫৫০০ আর পি এম @ ৯ এন এম রাখা হয়েছে। বাইকটির পিকআপ পাওয়ার ৭০ কিমি পর্যন্ত অনেক ভাললক্ষ্য করা যায়। ইঞ্জিনের সাথে রয়েছে ৪টি ট্রান্সমিশন গিয়ার বক্স এবং লাইট ক্লাচ। ইঞ্জিনটা নতুন করে ডাবল সাপোর্ট ফ্রেমে স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সিলিন্ডারটি অনেক সোজাসুজি ভাবে রাখা হয়েছে। হিরো বলে যে তাদের এই আড়াআড়ি ভাবে রাখা এই সিলিন্ডারের ফলে অনেক বেনিফিট পাওয়া যায়। প্রথমত, সিলিন্ডারটির উপরিভাগে অনেক জায়গা রাখা হয়েছে এর ফলে সহজেই বাইরের ঠান্ডা বাতাস ইঞ্জিনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। স্টোরেজ বক্স/ টুল বক্স এর জায়গা পরিবর্তন করে ইঞ্জিনের নিচে দেয়া হয়েছে।
মাইলেজ এবং স্পীড
হিরো দাবি করছে যে তাদের এই বাইকটি নুন্যতম ৮৭ কিমি প্রতি ঘন্টা তুলতে সক্ষম এবং ০-৬০ কিমি প্রতি ঘন্টা তুলতে সময় নিবে মাত্র ৭.৪৫ সেকেন্ড। বাইকটি আসার পর ব্যবহারকারীর মতানুসারে বাইকটির টপ স্পীড ৯০ কিমি প্রতি ঘন্টা এর কাছাকাছি। তেল সাশ্রয়ী অনেক উন্নত করা হয়েছে এবং তারা বলছে যে বাইকটি এক লিটারে ৬৫ কিমি প্রতি লিটারের বেশী মাইলেজ দিবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাইকটি ৭০-৭৫ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ দিয়ে থাকে।
ব্রেক এবং সাসপেনশন
ব্রেক এবং সাস্পেনশন বাইকের এবং বাইকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঠিক তেমনিভাবে হিরো iSmart 110 বাইকটিতে আগের মডেলের মতই ব্রেকিং এবং সাসপেনশন রাখা হয়েছে। ইঞ্জিন পাওয়ার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বাইকটির ব্রেকিং, টায়ার এবং সাসপেনশন আরও উন্নত করা দরকার ছিল কিন্তু হিরো সেটা করেনি।ব্রেকিং এর কথা বলতে গেলে এর উভয় চাকায় ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে সামনের চাকায় অন্তত ডিস্ক ব্রেক দেওয়া দরকার ছিল। সামনের দিকে টেলিস্কোপ সাসপেনশন এবং পেছনের দিকে সুয়িংআর্ম এর সাথে হাইড্রোলিক শক এবজরবার ব্যবহার করা হয়েছে। আগের মডেলের মতই উভয় দিকেই এলয় রিম ব্যবহার করা হয়েছে।
ইলেক্ট্রিক্যাল
ইলেক্ট্রিক্যাল দিক বলতে গেলে আগের iSmart-100 এর মতই রাখা হয়েছে। এই বাইকে MF4 3Ah ব্যাটারি রয়েছে সেই সাথে HS1 Bulb (35W/35W) এর হেডল্যাম্প এবং P21/5 Bulb (5W/21W) ল্যাম্প রয়েছে। ইনসট্রুমেন্ট কনসল এর দিকে এনালগ পার্ট রিপ্লেস করে ডিজিটাল মিটার ক্লাস্টার ব্যবহার করা হয়েছে। সার্ভিস ডিও ইনডিকেটর এর সাথে ডিজিটাল ট্রিপ মিটার এবং ওডো মিটার রিপ্লেস করা হয়েছে। ডিজিটাল ক্লক দিলে বেশ ভাল হত কিন্তু এখানে তারা সেটা দেয়নি। নতুন হেডল্যাম্প প্রযুক্তি AHO (Automatic Headlamp On) নতুনভাবে এই বাইকটিতে দেওয়া হয়েছে এবং এলইডি টার্ন লাইট এবং পাস সুইচ আগের মতই রাখা হয়েছে।
নতুন ফিচার
হিরোর নতুন মডেল বাইকগুলোর মধ্যে দুইটা নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছে ।একটি হল AHO (Automatic Headlamp On) এবং অন্যটি হল Hero i3S system । AHO (Automatic Headlamp On) সিস্টেম এর বৈশিষ্ট্য হল বাইক চালুর সাথেই হেডলাইট জ্বলে উঠবে।
অন্যদিকে Hero i3S তৈরি করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করা এবং থামা সেন্সর ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন এর মাধ্যমে যখন বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করা প্রয়োজন। এই সিস্টেমটা অনেক সহায়ক কিন্তু স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশনে ভাল সহায়ক হয় না। রাইডারের সমস্যা হল যে নিউট্রাল পজিশনে গেলেই সেটি আবার সঙ্গে সঙ্গে স্টার্ট নিয়ে নিবে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য ইঞ্জিন বন্ধ করতে ৫ সেকেন্ড এর মত সময় লাগবে। এবং আবার ক্লাচ চেপে ধরার সাথে সাথে ইঞ্জিন চাল হয়ে যাবে। এই সিস্টেমটি যথেষ্ট ভাল কাজ করে এবং এটি অনেক তেল সাশ্রয়ী করে থাকে। বিশেষকরে জ্যাম প্রধান রাস্তায় অনেক বেশি সহায়ক।
সবশেষে
সমস্ত আলোচনা শেষে বলা যেতে পারে যে Hero Moto Corp. তাদের iSmart 110 বাইকটি আগের মডেলের থেকে বেশ উন্নত করছে। তারা শুধু ইঞ্জিনের পাওয়ার আপডেট করেনি এর পাশাপাশি তার গ্রাফিক্স এবং কনফিগারেশন গুলো আরও আপডেট এবং পরিবর্তন করেছে। আশা করা যায় ক্রেতারা বাইকটিকে আস্থার সাথেই গ্রহন করবে।