আমি মোঃ বুলবুল আহম্মেদ। পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী। আমি প্রায় ১ বছর যাবত একটি কোম্পানিতে চাকুরী করি। কোম্পানির কাজে যাতায়াতের জন্যই মূলত আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। বলতে গেলে প্রতিটি দিনেই আমার মোটরসাইকেল এর প্রয়োজন। এটি ছাড়া আমি এক মূহুর্ত চলতে পারি না। এর আগে আমি আমার বাবার বাজাজ সিটি ১০০ এ মোটরসাইকেল চালানো শিখেছি। মোটরসাইকেল এর উপর আগ্রহ বেশি থাকায় এটি চালানো শিখতে আমার খুব বেশি সময় লাগে নাই। মাত্র সাত দিনের মধ্যে ভালভাবে চালানো শিখে যাই। আমি চাকুরী পাবার পরে মোটরসাইকেল এর প্রয়োজন অনুভব করি। আমার চাকুরীর ১০ মাস পরে আমি মোটরসাইকেল কিনার জন্য তাহেরপুর বাজার, বাঘমারা, রাজশাহীতে যাই। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন শোরুমে বিভিন্ন ব্যান্ডের মোটরসাইকেল দেখি। তবে আমার আগে থেকে কোন মোটরসাইকেল পছন্দ করা ছিল না। আমি “ আলম মোটরস” শোরুম এ গিয়ে হীরো আই স্মার্ট ১১০ সিসির মোটরসাইকেলটি পছন্দ করি। তার পরে দাম দর করে মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাসায় আসি। এই মোটরসাইকেলটি আমি তিন মাস যাবত ব্যবহার করছি। তিন মাসে প্রায় ৩০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। এছাড়া আমি একবার কোম্পানির কাজে এই মোটরসাইকেল নিয়ে নওগাঁ যাই। সে দিন আমি সর্বোচ্চ ১৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। তাছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে লং জার্নি করতে আমার খুব ভাল লাগে।
হীরো আই স্মার্ট ১১০ সিসি মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স অনেক ভাল। এর ইঞ্জিনটা খুব শক্তিশালী। এই বাইক এর বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত। আমি দেখেছি অল্প আঘাতে এগুলোর কিছুই হয় না। অর্থাৎ খুব সহজে এগুলো ফেটে যায় না বা ভেংগে যায় না। এর ইঞ্জিনের শব্দটাও চমৎকার। আমার এই মোটরসাইকেলটি দীর্ঘক্ষণ চালালেও ওভার হীট হওয় না।
এই মোটরসাইকেল কিনার আগে সর্ব প্রথম আমি ডিজাইন পছন্দ করেছি। ডিজাইনটা বেশ নজরকড়া। আমি মনে করি এই বাইকের ডিজাইন দেখলে সকলের ভাল লাগবে এবং সকল বয়সের মানুষের সাথে এটি মানানসই। আমি শোরুমে এই মোটরসাইকেলটি মাত্র একবার দেখেই পছন্দ করেছি। এছাড়া মোটরসাইকেলটির তেলের ট্যাংকার আমার একটু বেশিই পছন্দের মধ্যে পড়ে।
এই মোটরসাইকেল এর সিটিং পজিশন আমার খুব ভাল লেগেছে। সিট নরম হওয়ায় সিটে বসে খুব আরামের সাথে রাইডিং করতে পারি। তবে এই বাইকের হ্যান্ডেলবারটি খুব কড়া। হ্যান্ডেলবার ধরে চালানোর সময় হাতে পেইন করে, হাত ঝিনঝিন করে। আমি হাই রোডে ৮০ কিমি /ঘণ্টা গতি তুলেছি। মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো নরম হওয়াতে খারাপ রাস্তা বা কাচা রাস্তাতে চালিয়েও খুব বেশি পরিমাণে ঝাঁকুনি অনুভব করি না। মোটরসাইকেলটির ব্রেক মোটামুটি ভাল। তবে ডিস্ক ব্রেক থাকলে কন্ট্রোল করতে আরো বেশি সুবিধা হত। এছাড়া এই মোটরসাইকেল এর চেন খুব কড়া। আমি রাতে মোটরসাইকেলটি চালিয়ে বুঝতে পেরেছি যে, হেড লাইটের আলো কম হয় এবং মাঝে মাঝে আলো কমা-বাড়া হয়। এর জন্য আমি একটু অসন্তুষ্ট। নতুন বাইক হিসেবে এই সমস্যাটি আমার কাছে একটু বিরক্তিকর মনে হয়েছে। তবে এর সুইচ গুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এগুলো ব্যবহার করে আমাকে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। এর লুকিং গ্লাস থেকে আমি পিছনের দৃশ্ব্য পরিষ্কার দেখতে পাই। এছাড়া মোটরসাইকেলটিতে সেল্ফ থাকায় আমি একটু বেশিই খুশি।
আমি আমার মোটরসাইকেল থেকে ভাল মাইলেজ পাচ্ছি। আমি যদিও তেল একুরেট মেপে দেখি নাই, তবে আমি মনে করি শোরুম থেকে কিনার সময় যেমন মাইলেজ এর কথা বলেছিল, তেমনই পাচ্ছি। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই। আমি এ যাবত এক দিন সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে তারা আমার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। তারা আমার কাজটি আগে করে দিয়েছে। আমি সেখানে বড় কোন সমস্যা নিয়ে যাই নাই। শুধু মাত্র নাট বল্টু টাইট ও মবিল পরিবর্তন করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানকার পরিবেশটা আমার কাছে অনেক সুন্দর লেগেছে।
তবে কিছু দিন আগে তারা আমার কাছে কল দিয়েছিল। আমার মোটরসাইকেলটি পুরোটা সার্ভিসিং করার জন্য। সার্ভিসিং সেন্টারটি অনেক দূরে হওয়াতে পরে আর সেখানে যাওয়া হয়ে উঠে নাই। এছাড়া বর্তমানে কাজে চাপে থাকার কারনে সেখানে যাবার মত ফ্রী সময় বের করতে পারি নাই।
আমি যখন এই মোটরসাইকেলটি কিনি তখন এর দাম অনেক বেশি ছিল। মোটরসাইকেলটির সকল পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আর একটু কমানো উচিৎ বলে মনে করি। দাম কম হলে এই মোটরসাইকেলটি অধিক হারে বিক্রয় হবে। কেননা, এটি দেখতে আকর্ষণীয়। এই মোটরসাইকেলটি যে কেউ দেখলেই তার পছন্দ হবে বলে মনে করি। সেজন্য কোম্পানির উচিৎ দামটা একটু কমানো। দাম কমার সাথে সাথে এই মোটরসাইকেল এর চাহিদা অনেক বেড়ে যাব এবং বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পাবে।
ভাল দিকঃ ১/ ডিজাইন ভাল, ২/ তেল খরচ মোটামুটি কম, ৩/ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, ৪/ সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ও পরিবেশ ভাল, ৫/ সিটিং পজিশন ভাল, ৬/ ব্রেক ভাল, ৭/ সাসপেনশন ভাল, ৮/ এর বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত।
মন্দ দিকঃ ১/ দাম বেশি, ২/ এর হ্যান্ডেলবার অনেক কড়া ও টাইট, ৩/ হেড লাইটে হঠাৎ করে আলো কমা-বাড়া হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, এই মোটরসাইকেল অনুযায়ী সঠিক অয়েল ব্যবহার করলে খুব সহজে ইঞ্জিনে কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিবে না বলে আমি মনে করি। এই মোটরসাইকেলটি আমার কাছে যথেষ্ট ভাল লেগেছে। যারা ১১০ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনার কথা ভাবছেন তারা এর ভাল দিক গুলো বিবেচনা করে এই মোটরসাইকেলটি কিনতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ।