সর্ব প্রথমে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই মোটরসাইকেল ভ্যালীকে, কারন তাদের জন্যই আজ আমি আমার বাইকের রিভিউ প্রকাশ করতে পারছি। এমন সুযোগ আমাকে আগে কেউ কখনো দেয়নি। মোটরসাইকেল বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি বাহন। বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে বাইক রয়েছে। কারণ, বাইকের মাধ্যমে খুব দ্রুত যে কোন কাজ অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়। তাছাড়া অনেকে ফ্যাশন হিসেবেও বাইককে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আমার পরিচয় আমি মোঃ সাইফুল ইসলাম। নাটোর জেলায় আমার বাসা। এছাড়া পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী। একটি মেডিসিন কোম্পানিতে প্রায় ২ বছর যাবত চাকুরি করছি। সেজন্য বলতে গেলে আমাকে সারাদিন বাইক নিয়েই থাকতে হয়। বাইক ছাড়া আমার এক দিনও চলে না। যাতায়াতের ক্ষেত্রে এজন্য আমি বাইককেই আগে প্রাধান্য দেই। এছাড়া বাইকের মাধ্যমে আমার পরিবার নিয়েও যাতায়াত করে থাকি। আমার বাইকের নাম Hero iSmart । এই বাইকটি আমি প্রায় ১০ মাস যাবত ব্যবহার করছি। আমি ১০ মাসে প্রায় ১৭,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। এছাড়া অনেক দিন আগে থেকেই এই বাইকটি আমার পছন্দের লিস্টে ছিল। বলতে গেলে আজ আমি যে রিভিউ সবার কাছে প্রকাশ করছি, এটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার লিখাটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন এবং এই বাইকটি কেনার আগেই বাইক বিষয়ে সব কিছু জেনে বুঝে কিনা ভাল। তবে আমার কাছে বাইকটি খুব ভাল লেগেছে।
প্রথমত আমি কথা বলতে চাই ইঞ্জিন নিয়ে। কেননা ইঞ্জিন হল বাইকের মূল প্রানকেন্দ্র। এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। ইঞ্জিনটা খুব শক্তিশালী এবং বেশিক্ষণ চললেও ইঞ্জিন খুব বেশি গরম হয় না। এছাড়া ইঞ্জিনের ভেতরে কোন ধরনের বাজে শব্দ করে না। এটি সঠিক গতিতে তুলতে পারে। এদিকে আমি ইঞ্জিন থেকে মাইলেজ পাচ্ছি ১ লিটারে প্রায় ৫০ কিমি। সব মিলিয়ে ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ খুব ভাল।
এবার ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বাইকের বিভিন্ন দিকের ডিজাইন, গ্রাফিক্স সব কিছু ভালো লাগার মত। ডিজাইনের পাশাপাশি আমি আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, বাইকের বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত এবং এর পার্টসগুলো বেশ উন্নত মানের। এই ডিজাইনের বাইকটি যে কারো খুব সহজেই পছন্দ হবে এবং সকল বয়সের ব্যক্তির সাথে বাইকটি মানানসই। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাইক আছে, আমার কাছে এই বাইকটি একটু ভিন্ন ধরনের মনে হয়েছে। এই ডিজাইনের বাইক মানুষের চোখে পড়ার মত। শোরুমে গিয়ে বাইকটি দেখেই প্রথমে এই বাইকটি আমার ভাল লেগে যায় এবং আমি সিদ্ধান্ত নিই এই বাইকটি কিনার।
আরাম নিয়ে কথা বলতে গেলে বলা যায়, বাইকটি খুব আরামদায়ক। আমার কাছে বাইকটি বেশ ভাল মনে হয়েছে। এর সিটিং পজিশন বেশ ভাল এবং সিটগুলো নরম আছে। বাইকটিতে বসে আমি খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি। এছাড়া বাইকটির হ্যান্ডেলবার ধরে রাইড করে খুব আরাম অনুভব করি। তবে ৮০ গতির বেশি তুললে বাইকটি হাল্কা কাপে। আমি একদিনে প্রায় ৪০০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার খুব সমস্যা হয়। যেমনঃ কাঁধে, পিঠে, বুকে, কোমরে ব্যথা করে। বাইকটির সাসপেনশন গুলো খুব ভাল। এগুলো নরম আছে। যে কোন রাস্তায় তেমন ঝাঁকুনি মনে হয় না। বাইকটির লুকিং গ্লাস থেকে পিছনের দৃশ্য খুব ভাল দেখতে পাই। Hero iSmart বাইকের ব্রেকিং সিষ্টেম খুবই ভাল। আমি খুব সহজেই বাইক কন্ট্রোল করতে পারি। এই বাইকের সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন রকমের কষ্ট হয় না। রাতে হেডলাইট থেকেও প্রচুর আলো পাই।
মাইলেজ এর কথা বলতে গেলে, আমি এই বাইকে খুব ভাল মাইলেজ পাচ্ছি। আমি যেমনটি চেয়েছিলাম, ঠিক তেমন মাইলেজ পাচ্ছি। এছাড়া শোরুম থেকে বাইকটি কিনার সময় তারা যে মাইলেজের কথা বলেছিল, তাদের কথার সাথে কাজের বেশ মিল পেয়েছি। এজন্য আমি খুবই সন্তুষ্ট। ১১০ সিসি বাইক হিসেবে ১ লিটারে ৫০ কিমি পথ চলা মানে অনেক কিছু। তবে আমি দাম নিয়ে খুশি হতে পারি নি। কারন ১১০ সিসি বাইক হিসেবে এবং এর পারফরমেন্স বিবেচনায় আমার কাছে দামটা অনেক বেশি মনে হয়েছে। বাইকটির মোটামুটি প্রায় সবকিছুই ভাল, শুধু দামটা একটু কম হলে মার্কেট এ ক্রেতার সমাগম বেড়ে যাবে।
আমি এযাবত মাত্র একবার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। আমার বাইকে ব্রেকে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল, ১ বার সার্ভিসিং করার পরে এখন পর্যন্ত আর কোন সমস্যা অনুভব করি নি। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যবহার দেখে আমার ভাল লেগেছে এবং তাদের কাজের মান ভাল। সেখানকার পরিবেশ মুগ্ধকর। তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে যন্ত্রপাতিও রয়েছে। এজন্য নতুন ক্রেতাদের জন্য আমার পরামর্শ – আপনারা ১১০ সিসির মধ্য বাইক কিনলে এই বাইকটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারে। কারণ বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ খুবই ভাল।
তবে কোম্পানির কাছে আমার পরামর্শ থাকবে যে, দামটা একটু কম করার জন্য কারণ বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ চায় কম দামে ভালো ডিজাইনের বাইক কিনতে।
ভাল দিকঃ ইঞ্জিনের পারফরমেন্স খুব ভাল, ডিজাইন ভাল, মাইলেজ ভাল, সুইচগুলো অনেক সুন্দর, সাসপেনশন গুলো নরম আছে, সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান ভাল, খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায়, বাইকটির ব্রেক অনেক ভাল।
মন্দ দিকঃ দাম বেশি, দীর্ঘ যাতায়াতে হাতে, পিঠে, কোমরে ব্যথা করে।
পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভাল থাবেন, ধন্যবাদ।