বাইক চালানোর ইচ্ছা আমার অনেক ছোটবেলা থেকেই ছিল কিন্তু পরিস্থিতির কারণে বাইক চালানোর সুযোগ খুব একটা হয়ে ওঠেনি। ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলের জন্য বাইক বেস্ট অপশন বলে আমি মনে করি। যাতায়াতের সুবিধার জন্য আমি কিছুদিন আগে একটি বাইক ক্রয় করেছি এবং এই বাইকটা ছিল আমার স্বপ্নের বাইক। আমি কিছুদিন আগে যে বাইকটি ক্রয় করেছি সেটা হল বাংলাদেশের সেরা ১৫০ সিসির প্রিমিয়াম একটি বাইক হোন্ডা এক্স মোশন।
আমার অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল যে আমি যদি কোনদিন বাইক কিনি তাহলে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির ক্যাফে রেসার ও নেকেড স্পোর্টস দুইটার সমন্বয়ে একটি বাইক কিনব। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমি দেখলাম যে হোন্ডা এক্স মোশন সেরা বাইক আমার চাহিদা অনুযায়ী। আমি ইয়ামাহা এম টি ১৫, ইয়ামাহা r15 ভার্শন 3 বাইক রাইড করেছি কিন্তু হোন্ডা এক্স মোশন এর মত অনুভূতি আমি অন্য কোন বাইকে পাইনি। সত্যি কথা বলতে এই বাইকটা একদমই ভিন্ন অন্যান্য বাইকের থেকে এবং হোন্ডা নিখুঁতভাবে এর সকল বিষয় সংযুক্ত করেছে। হোন্ডা এক্স মোশন নিয়ে আমি বেশিদিন রাইড করিনি তবে যতটুকু রাইট করেছি তার আলোকে আপনাদের সাথে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করি আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের ভালো লাগবে।
- শুরুতেই বলি বাইকের ডিজাইন নিয়ে । ডিজাইন আমার কাছে সেরার সেরা মনে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এত সুন্দর ও ইউনিক ডিজাইনের বাইক নাই বললেই চলে। সামনের হেডলাম্প থেকে শুরু করে পেছনের টেল ল্যাম্প সবকিছুতেই নিপুণতার ছোঁয়া রয়েছে এবং ডিজাইন প্রিমিয়াম লেভেলের রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে এই বাইকের ডিজাইন এ আপনারা কেউ হতাশ হবেন না যেমনটা আমি হইনি।
- ইঞ্জিন এর পারফরম্যান্স অতুলনীয়। অন্যান্য ১৫০ সিসি প্রিমিয়াম বাইকের সাথে এর ইঞ্জিন তুলনা করা যাবেনা। এই বাইকের ইঞ্জিনের ভিন্ন এবং অন্যরকম অনুভূতি আছে যেটা আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান ১৫০ সিসির অন্য কোন বাইকে পাইনি। ইঞ্জিনের শক্তি থেকে শুরু করে টর্ক, গতি ইত্যাদি সবকিছুই অনেক ভালো। যেহেতু আমি এখন ব্রেক ইন পিরিয়ড এ আছি তাই ইঞ্জিন এর বেশি গতি তুলি না তবে উপলব্ধি করছি যে ইঞ্জিনটা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং অনুভূতি আছে।
- হ্যান্ডেলবার ও সিটিং পজিশন এর কম্বিনেশনটা দারুন। এর ফলে আমি যখন রাইড করি তখন আমার কাছে খুবই আরামদায়ক মনে হয় এবং শহরের রাস্তাতেও ঝামেলাবিহীন ভাবে আমি রাইড করতে পারি। এ বাইকের সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবার ভালো হওয়ার জন্য লং রাইডে আশা করি কোন সমস্যা হবে না। যেহেতু বাইকটি অল্পদিন হল ব্যবহার করছি তাই লং ড্রাইভে যাওয়া হয়নি। তবে লং রাইডের অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে অচিরেই শেয়ার করবো।
- একদিন আমি এই বাইকটা নিয়ে বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছিলাম কিন্তু এর ডুয়েল চ্যানেল এবিএস এবং ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে রক্ষা করেছে। ব্রেকিং রেসপন্স খুবই ভালো বিশেষ করে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস এর যে এত সুন্দর রেসপন্স আমি পেয়েছি তা অকল্পনীয়। হয়তো এই ব্রেকিং ফিডব্যাক সেদিন না পেলে আমি বাইকটা নিয়ে এক্সিডেন্ট করে ফেলতাম ।
- হেড ল্যাম্প এর লুকস যেমন সুন্দর তেমনি এর আলোটাও অনেক পরিষ্কার। শহরের রাইডে রাতের বেলায় আমি সবকিছুই পরিষ্কার দেখতে পাই এই হেড ল্যাম্প এর সাহায্যে।
- ১৫০ সিসি প্রিমিয়াম বাইক থেকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি শহরের মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার। আমি এই মাইলেজ বাইকের মিটার দেখে উপলব্ধি করেছি। আমার মতে বাইকের পারফরম্যান্স অনুযায়ী মাইলেজ ঠিক আছে।
এইবার বলি এই বাইকের কিছু বিষয় যা আরেকটু উন্নত করা যেত
- পিলিয়নের সিটিং পজিশন আমার কাছে একদমই ভালো লাগেনি। সিটিং পজিশন অনেক ছোট এবং পিলিয়ন বসে খুব একটা আরাম অনুভব করেনা। হয়তোবা রাইডার কে কেন্দ্র করে বাইকটা তৈরি করা হয়েছে।
- বৃষ্টির দিনে এই বাইক এর চাকা থেকে কাদা পানি শরীরে এসে লাগে যেটা একটু সমস্যার বিষয়। আমার মনে হয় এখানে একটা টায়ার হ্যাঁগার ব্যবহার করলে খুবই ভালো হতো।
- বাইকের পার্টস ঢাকাতে কমবেশি সব জায়গায় পাওয়া যায় কিন্তু দাম অনেক বেশি। যারা বাইকটা কিনবেন তারা এই বিষয়টা একটু মাথায় রাখবেন।
ভালো-খারাপ সব মিলিয়ে এই একটি বাইক। আমার কাছে হোন্ডা এক্স মোশন এর খারাপ দিক এখন পর্যন্ত তেমন ফুটে ওঠেনি যে। যেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি সেগুলো হয়তো একটু আপডেট করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি আশাবাদী যে এই বাইকটা নিয়ে আমি আরো বেশি রাইড করে আপনাদের সামনে আরো ভালো মন্দ দিক উপস্থাপন করব এবং চেষ্টা করব হোন্ডা এক্স মোশন এর সকল খুটিনাটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করার। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সাবধানে রাইড করবেন।