হোন্ডা হরনেট ১৬০সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ - ইসতিয়াক কবির

আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে টিভিএস এপ্যাচি আরটিআর দিয়ে আমার বাইক চালানোর হাতে খড়ি। বাইকটা ছিলো আমার বড় ভাইয়ার । আমি সেই বাইক নিয়ে রাইড করতাম তারপর নিজে কিনে নিলাম পালসার এএস ১৫০ (লাল)। বাজাজ পালসার এএস ১৫০ নিয়ে আমি অনেক আরামদায়ক রাইড করতাম। তারপরে বাজারে হোন্ডা নিয়ে আসে তাদের ১৬২ সিসির হরনেট। হরনেটের লুক দেখে আমার অনেক ভালো লাগে এবং যেহেতু নতুন বাইক তাও আবার ১৬৫ সিসি সেগমেন্ট তাই নিজে নিজেই এই বাইকটাই পছন্দ করলাম। হোন্ডা হরনেট কেনার আগে আমি মোটরসাইকেল ভ্যালী সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ইউজার রিভিউ পড়তে থাকি। আমি মনে করি যে প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো খারাপ দিক থাকবে কিন্তু পরিমাণটা কম আর বেশি এটাই পার্থক্য। হরনেটের রিভিউ পড়ে আমি শুধু জানতে পারি যে বাইকের চেইনে একটু সমস্যা এছাড়া বড় কোন সমস্যা আমি কোন রিভিউতে পাইনি।

আমি মোঃ ইসতিয়াক কবির দীর্ঘ ২ মাস যাবত হোন্ডা হরনেট ১৬০ বাইকটা ব্যবহার করছি। এই বাইকটা আমি রাজশাহীর স্বনামধন্য মিথুন হোন্ডা থেকে বাইকটা কিনেছি। কেনার পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কিমি রাইড করে ফেলেছি। আজকে আমি আমার হোন্ডা হরনেটের ৪০০০ কিমি রাইড অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।

ডিজাইন
প্রথম কথা হচ্ছে হোন্ডা হরনেটের ডিজাইনটা আমার খুব পছন্দ। সামনের দিক থেকে এর লুকটা ঠাণ্ডা মনে হলে পেছনের লুকটা দেখলে চোখ জুরিয়ে যাবে। বাংলাদেশে এর মতো আকর্ষণীয় এক্স শেপড টেল ল্যাম্প ও পেছনের লুক আমি এ পর্যন্ত লক্ষ্য করিনি। এছাড়াও সামনের ফুয়েল ট্যংকার , কালার কম্বিনেশন গুলো খুব ভালো লেগেছে।



বিল্ড
বাইকটা এখনও আমার কাছে পড়েনি তাই এর বিল্ড কোয়ালিটি কেমন শক্ত সেটা আসলে বলতে পারছি না তবে এমনিতে হাত দিয়ে ধরে কিংবা ভাঙ্গা কোন রাস্তায় রাইড করলে কোন দুর্বল বলে মনে হয় না,। বডি প্লাস্টিকগুলো যথেষ্ট মজবুত আছে।



ইঞ্জিন
১৬২ সিসি ইঞ্জিনের রেডি পিক আপ না থাকলেও হাইওয়েতে অনেক বেশি স্পীডে তুলতে পারে। আমি নিজেই শর্ট হাইওয়েতে ১০২ কিমি প্রতি ঘন্টায় চালিয়েছি। বাইকের স্পীড আরও বেশি উঠানো সম্ভব ছিলো কিন্তু আর চেষ্টা করিনি কারণ জিবনের মায়া বলে একটা কথা আছে। প্রথমের দিকে ইঞ্জিনটা একটু ওভার হিট হচ্ছিল কিন্তু ধিরে ধিরে সেটা এখন অনেকেটাই কমে এসেছে। হোন্ডা ইঞ্জিন আগে থেকেই বেস্ট এবং আমিও ইঞ্জিন পারফরমেন্সে কোন ঘাটতি খুঁজে পাইনি।

আরাম
বাইকটা চালিয়ে অনেক আরাম আছে কারণ আমি একদিনে প্রায় ২৫০ কিমি পথ রাইড করেছি অন্য কোন বাইকে যদি রাইড করতাম তাহলে এতটা হয়তো বা আরাম বোধ করতাম না কিন্তু রাইডিং সিট আরামদায়ক হলে পিলিয়নের সিটটা সেই তুলনায় কম আরামদায়ক। আমার বন্ধুরা পিছে বসে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যায়। আমি মনে করি যে হ্যান্ডেলবার ও রাইডিং সিট এর পারফেক্ট কম্বিনেশনের ফলে চালিয়ে অনেক আরাম পাওয়া যায়। তবে সিট এর উচ্চতা যদি আরেকটু বেশি হত তাহলে আমার জন্য অন্তত আরও ভালো হত।



ইলেকট্রিক্যাল
হেডল্যাম্পের আলোটা অন্যান্য বাইকের তুলনায় একটু কম মনে হয়েছে। আলো বেশি দূরে বোঝা যায় না এবং তেমন শক্তিশালী না। ইলেকট্রিক্যাল সুইচগুলো অনেক ভালো কাজ করে কিন্তু ইঞ্জিন কিল সুইচ ও হেডল্যাম্প অনঅফ সুইচ নাই। আহো প্রযুক্তিটা আমার বরাবরই পছন্দের না।

সিটি রাইড
শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় চালিয়ে অনেক ভালো অনুভূতি পাওয়া যায়। বাইকটা পেছনের দিকে একটু নেকেড হওয়ার ফলে খুব সহজেই ওভারটেক করা যায়।

হাইওয়ে রাইড
হাইওয়েতে মুলত আমার বেশি চালানো হয়। আমি একটানা রাজশাহী টু সোনামসজিদ গিয়েছি এক্ষেত্রে বাইকটা হাইওয়ের জন্য অনেক আরামদায়ক । কোন প্রকার ব্যাক পেইন হয় না এবং স্মূথটি চলে। ইঞ্জিনের শব্দটাও খুব বেশি শোনা যায় না ।

ব্রেকিং সিস্টেম
বাংলাদেশে এর ডাবল ডিস্ক আসার কথা থাকলেও সিঙ্গেল ডিস্ক খারাপ পারফরমেন্স দিচ্ছে না। আমি বলবো যে হোন্ডার ব্রেকিং সিস্টেম শুরু থেকেই অনেক ভালো আর এই বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।

টায়ার
সামনের টায়ারের গ্রিপ ভালো কিন্তু পেছনের টায়ারের গ্রিপ সামনের তুলনায় কম এবং কড়া ব্রেক করলে একটু স্কীড করে । তাছাড়া টায়ারের সাইজ অনেক ভালো আছে।

সাসপেনশন
সাসপেনশন সামনের টা ভালো কিন্তু পেছনেরটা রাইডারের জন্য আরামদায়ক হলেও পিলিয়নের জন্য না । ভাঙ্গা রাস্তায় পিলিয়ন অনেক বেশি ঝাঁকুনি মনে হয়।

মাইলেজ
মাইলেজের দিক দিয়ে ১৬২ সিসির এই বাইককে নিয়ে আমি অনেক খুশি । আমি অকটেন ব্যবহার করি এবং মাইলেজ পাই গড়ে ৪৭ কিমি।

সার্ভিস সেন্টার
আমি সার্ভিস করাই মিথুন হোন্ডা ,রাজশাহী থেকে। তাদের সার্ভিস মান ভালো হলেও ব্যবহার খুবই জঘন্য মানে বলা মত না। আমি একদিন তাদের সার্ভিস সেন্টারে গিয়েছিলাম প্রথম কথা হচ্ছে গ্রাহক হিসেবে আমি তো তাদের শো-রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে পারি কিন্তু না তারা বাইরে থেকে কথা বলে বিদায় করে দিয়েছে এমনটি কোন কথা জিজ্ঞেস করলেই খালি বলে যে ঈদের পর ঈদের পর। আমি তাদের সার্ভিস সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাই। আর হোন্ডা হিসেবে এটা উচিত না আমি তাদের পরামর্শ দিবো যে তারা যেন তাদের সার্ভিস মান আরও উন্নত করে।

দাম
বাইকের দাম এক কথায় সাধ্যের মধ্যে।

খারাপ দিক
-চেইন সেট
-পিলিয়ন রাইডিং পজিশন

কোম্পানির কাছে শুধুমাত্র আমার এটাই পরামর্শ থাকবে যে তারা যেন তাদের সার্ভিস সেন্টারগুলো ভালো ভাবে নজরে রাখে এবং হেডল্যাম্পের আলো বৃদ্ধি ও সুইচ থাকার ব্যবস্থা করে। এই ছিলো আমার ৪০০০ কিমি হোন্ডা হরনেট ব্যবহার অভিজ্ঞতা। সবাইক সাবধানে রাইড করবেন এবং অবশ্যই হেলমেড পরে রাইড করবেন । ধন্যবাদ।

All HONDA bike price in bd

Honda CB Hornet 160R SD