আসসালামু আলাইকুম,
আমি শাহারিয়ার রাব্বি একজন বাইক প্রেমী । আমি এখন ব্যাক্তিগত ভাবে হর্নেট ১৬০সিবিএস বাইকটা খুব বেশি রাইড না চালালেও পারিবারিক সূত্রে বেশ কিছু মাস ধরে বাইক টা ব্যাবহার করছি।আমার নিজস্ব বাইক পালসার এনএস ১৬০ আছে সেটাই বেশি রাইড করা হয় । যেহেতু আমি এই হোন্ডা হরনেট ১৬০ সিবিএস বাইকটা বেশ কয়েক মাস যাবত ব্যবহার করছি তাই আজ আমি শেয়ার করবো এই বাইক নিয়ে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা ও অভিমত।
এই বাইকটা আমি এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ১০ হাজার কিমি এর কিছু বেশি। ১০ হাজার কিমি রাইডের পর এই বাইকটা আমার কাছে কেমন লাগছে বা কেমন সার্ভিস দিচ্ছে সেগুলো নিয়েই মূলত আপনাদের সাথে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
লুক - লুক টা আমার কাচজে এগ্রিসিভ মনে হয়নি তবে পূর্বের ভার্সনের থেকে বর্তমান এই ভার্সনের গ্রাফিক্স আমার ভালো লেগেছে কিন্তু বাইকের ডিজাইন ও লুকস চলে এই আর কি!! আমি মনে করি এই বাইকের ডিজাইনটা পরিবর্তন করা উচিত । বাইকের মধ্যে কোন এগ্রিসিভ ভাব নেই। সাদা মাটা একটা বাইক মনে হয় । যারা মার্জিত ডিজাইনের বাইক পছন্দ করেন তারা এই ডিজাইনটা দেখে পছন্দ করে
কন্ট্রোলিং - যেকোন রাস্তায় আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। স্কিড কখনো করে না বললেই চলে।চাকা মোটা থাকার জন্য একটা বেনিফিট পাওয়া যায়। আর অনেক কিছু ডিপেন্ড করে রাইডার এর উপরে। আমি এই বাইকের কন্ট্রোলিং নিয়ে খুব ভালো অনুভব করি।
ব্রেকিং - সিবিএস ব্রেকিং নিয়ে আমি সন্তষ্ট।আলহামদুলিল্লাহ!!! আমার কাছে এ বি এস এর থেকে সিবিএস টা একটু ভাল লেগেছে। যদিও আমার নিজের কোন এবিএস বাইক নেই।
মাইলেজ - হোন্ডা সব সময় মাইলেজ নিয়ে সেরা অবস্থানে থাকে। শহরের মধ্যে আমি এই বাইক থেকে মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ কিমি প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৫০+- এমন। রাইডিং স্টাইল ও ফুয়েল এর মানের জন্য কমবেশি হতে পারে । তবে আমি বলব যে ১৬০ সিসির বাইক হিসেবে মাইলেজ যথেষ্ট ভালো।
সিটিং পজিশন - চালকের জন্য আলহামদুলিল্লাহ!! তবে পিলিয়ন এর ক্ষেত্রে লং ট্যুরে একটু আনকমফোর্ট বলে আমার মনে হয়েছে। আমি একটানা এই বাইক নিয়ে প্রায় ৩০০ কিমি রাইড করে এই অভিজ্ঞতা পেয়েছি।
হেডলাইট - হেডলাইটের আলো যথেষ্ট কম মনে হয়েছে।হাইওয়ে তে চোখেই দেখা যায়না এমন অবস্থা। মূল হেড পরিবর্তন না করে ভার্সন ১ এর মত শুধু হেড লাইট বালব চেঞ্জ করতে পারলে ভাল হত। এদিকে বাইকের হেডল্যাম্পের সাইজটা দেখতে অনেক সুন্দর লেগেছে আমার কাছে।
টপস্পিড - খুব একটা স্পিড উঠানোর ট্রাই করিনি।তবে ১১৯ অব্দি তুলেছিলাম।এর বেশি পাবো কিনা বা পেলে কত পেতে পারি জানা নেই। ১৬০ সিসির বাইক হিসেবে আমার কাছে এই বাইকের ইঞ্জিনের শক্তি , টর্ক, রেডি পিক আপ কম মনে হয়েছে। বাইকের এসব কারনে টপ স্পীড অনেকেই বলে যে বেশি পায় না।
আমার মতে এই হোন্ডা হরনেট ১৬০ সিবিএস এর কিছু পরিবর্তন হলে ভাল হত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তা হলো -
১.ইঞ্জিন কিলিং সুইচ থাকলে ভাল হত। কারণ শহরের ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে পড়লে ইঞ্জিন বন্ধ করার জন্য ইগ্নিশন বন্ধ করতে হয় আবার ইঞ্জিন চালু করার জন্য ইগ্নিশন চালু করতে হয়।
২.লাইট চেঞ্জ এর অপশন থাকলে ভাল হত।
৩.পাওয়ার পিক-আপ আরেকটু বাড়ালে ভাল হত।
৪.থ্রটল রেসপন্স খুব একটা অনুভব হয়নি ১৬০ সিসি অনুযায়ী।
৫. চেইনে এখন সমস্যা নেই।তবে মাঝেমধ্যে মনে হয় চেইনে ভার্সন ১ এর মত সাউন্ড হয়।
৬.সিট স্পিলিট হলে ভাল হত। এই স্পিলিট সিটের জন্য পিলিয়ন আরামে বসে অনেকক্ষণ রাইড উপভোগ করতে পারবে।
ইঞ্জিন অয়েল ৬০০০ অব্দি Honda এর অফিসিয়াল টা ইউজ করেছি 10 w 30 এখন মতুল সেমি সিনথেটিক 10 w 30 ব্যাবহার করছি।
সব মিলিয়ে এই বাইকের যে দাম নির্ধারন করা হয়েছে সে অনুযায়ী বাইকের ইঞ্জিন, ডিজাইন আমার কাছে ঠিক আছে বলে মনে হয়েছে। তবে বর্তমানে বাজারে বেশি ফিচারস দিয়ে কম দামে বাইক আনলে গ্রাহকদের অনেক সাড়া পাওয়া যাবে। হোন্ডা হরনেট ১৬০ সিবিএস নিয়ে এই ছিলো আমার মতামত ।