হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০আর বাইকটি আমি প্রথম দেখেছিলাম ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ওয়েব সাইটে। বাইকটির স্পেসিফিকেশন দেখে আমার ভালো লাগে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তখন আমাদের দেশে সিসি লিমিট থাকার কারণে দেশে আসতে পারেনি।১৬০ সিসি সেগমেন্টের মধ্যে মার্জিত একটি বাইক হিসেবে আমি হোন্ডা সিবি হরনেট ১৬০ কেই মনে করি। যখন বাংলাদেশের বাজারে প্রথম হরনেট বাইকটা আসে তখন আমার কাছে তেমনটা আকর্ষণীয় মনে হয় নি কারণ সেটা বিএস৩ ভার্সনের ছিলো। এরপরে বিএইচএল বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছে হোন্ডা হরনেট এর আপডেট বিএস৪ ভার্সন যার লুকস ও গ্রাফিক্স আমাকে অনেক আকৃষ্ট করেছে। হোন্ডা তাদের ১৬০সিসি সেগমেন্টে বাংলাদেশের বাজারে এই বাইকটি নিয়ে এসেছে এবং এর মাস্কুলার বডি,ডিজাইন, আউট লুক অন্য সব বাইকের থেকে আলাদা লেগেছে আমার কাছে। সব মিলিয়ে আমি সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে আমি হোন্ডা হরনেট ১৬০ বাইকটা কিনবো।
বাইকটা কেনার পর আমি এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ১২ হাজার কিলোমিটার। এই ১২ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে আমি এই বাইক থেকে যে সব ভালো দিক এবং খারাপ দিক পেয়েছি সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি আমার অভিজ্ঞতা পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।
শুরুতেই বলি এই বাইকের কী কী বিষয় আমার ভালো লেগেছে
-প্রথমেই বলবো যে এই বাইকের ডিজাইন, আউটলুক ও গ্রাফিক্স আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। ডিজাইনের মধ্যে আলাদা একটা ভাব আছে যেটা ইউনিক এবং আমার কাছে অন্যান্য বাইকের থেকে একদম আলাদা লাগে। এদিকে সামনের হেডল্যাম্প, পেছনের টেল ল্যাম্প বাইকটাকে পরিপূর্ণ রুপ দিয়েছে। এটা অবশ্যই প্রশংসা করার মত বিষয় যে তারা ইউনিক একটা অভিজ্ঞতা দিয়েছে এই বাইকের মাধ্যমে।
-ইঞ্জিনের টর্ক কম মনে হলেও আমার কাছে এই বাইকের ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ও শক্তি ভালো মনে হয়েছে। ১৬৩ সিসি এই ইঞ্জিন থেকে আমি খুব স্মুথ পারফরমেন্স পাই এবং কোন ভাইব্রেশন নাই এই ইঞ্জিনে। এদিকে আমি লক্ষ্য করেছি যে ইঞ্জিনের হাই এন্ড টর্ক অনেক বেশি। শুরুতে তেমন টর্ক পাওয়া না গেলেও শেষের দিকে এই বাইক থেকে অনেক ভালো টর্ক পাওয়া যায় এবং স্পীডও তখন অনেক বেশি পাওয়া যায়।
-লং রাইডের জন্য বেস্ট একটা বাইক। আমি এই বাইক দিয়ে একটানা প্রায় ৩৫০ কিমি রাইড করেছি এবং আমার কাছে এর সিটিং পজিশনটা বেস্ট মনে হয়েছে লং রাইডের ক্ষেত্রে। আমি যতই রাইড করিনা কেন এই বাইকের সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেলবারের ফলে কোন ব্যাক পেইন অনুভব করি না।
-সিবিএস ব্রেকিং এর পারফরমেন্স আমি খুব ভালোভাবেই পাচ্ছি । কারণ আমি যখন এই বাইকটা নিয়ে রাইড করি তখন আমার কাছে ব্রেকিং করে খুব ভালো অনুভব হয় এবং এই সিবিএস ব্রেকিং খুব কম দুরুত্বের মধ্যে ব্রেকিং করতে সাহায্য করে । আমি সিবিএস ব্রেকিং নিয়েও সন্তুষ্ট।
-মোটা চাকা, মনোশক সাসপেনশন ইত্যাদির কারনে আমি ব্যালেন্স অনেক ভালো পাই এই বাইক থেকে। আমি টপ স্পীড তুলেছি ১১৮ কিমি প্রতি ঘন্টা এবং এই টপ স্পীডে আমার কাছে এই বাইকের ব্যালেন্স অনেক ভালো মনে হয়েছে। শহরের রাইডের মধ্যেও বাইকটা রাইড করে আমি অনেক স্বস্তিবোধ করি কারণ এর টারনিং রেডিয়াস অনেক কম এবং খুব অল্প জায়গাতেই বাইকটা ঘুরানো যায়।
-মাইলেজের দিক থেকে ১৬০ সিসির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোন্ডা সিবি হরনেট। আমি শহরের মধ্যে মাইলেজ পাচ্ছি ৪৫ কিমি প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি ৪৮ থেকে ৫০ কিমি প্রতি লিটার।
এইবার বলি এই বাইকের কিছু মন্দ দিক
-বাইকের এক্সেলেরেশন বেশি করলে ভালো হত তবে উপরে যা বললাম যে, বাইকের শেষের আরপিএম এ টর্ক অনেক বেশি।
-বিল্ড কোয়ালিটি উন্নত করা উচিত
-ইঞ্জিন এয়ার কুল্ড না দিয়ে ওয়েল কুল্ড দিলে বেটার হত যেটা ১৬০ সিসির অন্যান্য ব্রান্ডের বাইকে রয়েছে।
কোয়ালিটি, পারফরমেন্স বিবেচনা করে এই বাইকের দাম আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকের আমার রিভিউটা পড়ার জন্য।