হোন্ডা হর্নেট ১৬০সিসি মোটরসাইকেল রিভিউ - অলি আহাদ খান

ভাই ব্রাদার কেমন আছেন সবাই? আমি অলি আজ আপনাদের সামনে একটি বাইক নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। ছোট মানুষ ভুল ত্রুটি হতে পারে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।

আমাদের দেশে 165cc পারমিট দেয়ার পরে বেশ কিছু কোম্পানি তাদের 160cc বাইক নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে pulsar ns, rtr 160, honda cb hornet,KPR 165 অন্যতম। আজ আমি হোন্ডা সিবি হর্নেট বাইকটির ভালো দিক, খারাপ দিক, সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করব।
হোন্ডা কোম্পানি তাদের 160cc সেগমেন্টে এই বাইকটি নিয়ে এসেছে।এর মাসকিউলার বডি, আউট লুক ও ব্যাক লাইট একে অন্য সব বাইকের থেকে আলাদা করে। এর 140 সাইজের রেয়ার টায়ার ব্রেকিং এ বেশ সাহায্য করে। তবে এই বাইকে বেশ কিছু খারাপ দিক ও অসুবিধা রয়েছে যা হোন্ডা কোম্পানির কাছ থেকে একদমই আশা করা যায় না। চলুন এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

সুবিধা
১)এই বাইকের পার্টস সহজলভ্য। তাই এটি ব্যবহার করতে এবং সার্ভিসিং করাতে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
২) এর কন্ট্রোলিং আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। খুবই অল্প জায়গার মধ্যে এই বাইকটি ঘুরানো সম্ভব।
৩) এর ব্রেকিং খুবই সুন্দর এর 140 রেয়ার টায়ারটি জরুরী মুহূর্তে ব্রেকের সময় খুব সাহায্য করে। আমি ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই বাইক কি রাইড করেছি তাও বেশ ভালই ব্রেকের সাড়া পেয়েছি।
৪) এতে টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক যুগের চাহিদার কথা মাথায় রেখে।
৫) এর পিলিওন সিট টি বেশ ভালো। ফ্যামিলির কারো বকা খেতে হবেনা এই বিষয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
৬) হোন্ডা কোম্পানির গাড়ি হিসেবে এর খুবই সুন্দর একটি মার্কেট রয়েছে তাই বলাই যায় এর রিসেল ভ্যালু অনেক ভালো হবে।
৭) যেখানে অনেকেই বাইকের সাউন্ড এর সমস্যার জন্য হলার অথবা মাফলার ইউজ করে সেখানে এই বাইকটির সাউন্ড বেশ ভালো। বলতে গেলে জেন্টেল সাউন্ড।
৮)বাইক টি তে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর গতি,থ্রোটল রেসপন্স বেশ ভালই লেগেছে।বাইকটি চালানোর সময় আমি সহজেই কয়েকটি ওভারটেকিং করেছি। যদিও আমি টপ চেস করিনি,তাও আমার কাছে অনুভব হয়েছে খুব সহজেই 120-22 উঠে যাবে।
9) এই বাইকটি লুকের উপরে হোন্ডা কোম্পানি বেশ ভালই সময় দিয়েছে। ট্যাং বেশ মাসকিউলার। বলতে বাধ্য হচ্ছি বাইকটির একটি ভাব আছে।
১০) বাইকটির বেশ তেল সাশ্রয়ী 160cc অনুযায়ী।
১১) এই বাইকটিতে ফুল ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে ফুয়েল গেজ, ট্রিপ মিটার, স্পীড মিটার,আর পি এম মিটার, টেকো মিটার ও ঘড়ি রয়েছে।

অসুবিধা
১) এই বাইকটি লুক অনেক ভালো হলেও বিল্ডিং কোয়ালিটি আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে। বাইকটি চালানোর সময় লক্ষ্য করে দেখেছি বেশ নিম্নমানের ও পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে এতে।
২) বাইকটিতে যে হেডলাইট ব্যবহার করা হয়েছে তার আলো মোটেও সন্তোষজনক নয়।
৩) বাইকটির চেইন আমার একদমই ভালো লাগেনি । সামান্য স্পিডের জন্য এমন চেইন এর ব্যবহার ঠিক পেটে হজম হয়নি আমার।
৪) হোন্ডা কোম্পানি এই বাইকটিতে সাসপেনশনের জন্য পিছনে যে মনো শক টি ব্যবহার করেছে তা মোটেও ভালো না। 200 কিলোমিটার চালিয়ে আমার কোমর ও পশ্চাৎদেশের খবর হয়ে গিয়েছিল।
৫) বাইকটির সিটটি আমার কাছে খুবই শক্ত লেগেছে এটি নিতান্তই একটি টুলের ওপরে বসে থাকার অনুভূতি প্রদান করে। এই সিটটি যে কারো পশ্চাৎদেশে সুন্দর করে ছাপ ফেলতে সক্ষম।
৬) আমি এই বাইকটিতে হালকা একটু কম্পন অনুভব করেছি। হ্যাঁ তা খুবই সামান্য তবে হাইরেভ এ এই কম্পন ইফেক্টিভ হতে পারে।
৭) লুকিং গ্লাস টি আমার কাছে ভাল মানের মনে হয়নি। চলন্ত অবস্থায় এই লুকিং গ্লাসে পিছনের যানবাহনগুলো স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় না, লাফালাফি করে। নিম্নমানের গ্লাস ব্যবহারের ফলে এমনটি হয়ে থাকে।
৮) এর ইঞ্জিন খুবই গরম হয়। 100 কিলোমিটার চালানোর পরে এতোটাই গরম অনুভূত হয়েছিল যে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে দাড়িয়ে গিয়েছিলাম। ইঞ্জিনের সাথে সাথে এর ট্যাং এর দু'সাইডে হালকা গরম হয়ে যায়।
৯) এর সাউন্ড খুবই সুন্দর কিন্তু ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হওয়ার পরে সাউন্ড একটু ফ্যাঁসফ্যাঁসে হয়ে যায়।
১০) এর ইন্ডিকেটর লাইট গুলি একদমই ফ্লেক্সিবল নয়। যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। এখন বেশিরভাগ বাইকেই ফ্লাক্সিবল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই বাইক এ সেটি ব্যবহার করা হয়নি, এটি একটু খটকা লাগার বিষয়।
১১) এই বাইকের হ্যান্ডেল এর অবস্থান কিছুটা অসুবিধাজনক। তাই একটানা বেশিক্ষণ চালালে হাত ঝি ঝি ধরে এবং কাঁধে একটু ব্যথা অনুভূত হয়। টানা 100 কিলোমিটার চালিয়ে আমি এই সমস্যাটি অনুভব করেছি।
১২) এই বাইকটিতে নিম্নমানের সুইচ ব্যবহার করা হয়েছে। হর্ন এর সুইচটি বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল ব্যথা করে। এতটা নিম্নমানের সুইচ আশা করা যায় না।
১৩) আমি এই বাইকে ডান চাপা টির অভাব বোধ করেছি। এই বাইকে ডান চাপা না থাকায় কোন ইঞ্জিন কিল সুইচ, হেডলাইট এর সুইচ নেই।
১৪) এই বাইকটিতে কোন রেয়ার টায়ার গার্ড ব্যবহার করা হয়নি তাই বাইক কেনার পরে অতিরিক্ত কিনে লাগাতে হয়।

এইগুলোই ছিল এই বাইকের মূল সমস্যা।অনেকেই আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন কারণ এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত।

আর যাই হোক না কেন এর শক্ত শকাপ এবং শক্ত সিট আমাকে হায়দার হোসেনের বিখ্যাত "আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার"গানটি মনে করিয়ে দিয়েছিল। এই ব্যাপারে সবারই একমত হতেই হবে।
অনেকেই পিছনের শকাপটি পরিবর্তন করে হাঙ্ক এর শকাপ লাগায়, যা করা আমার মতে উচিত নয়।

প্রতিটি বাইকেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে সে গুলোকে নিজের মতো সমাধান করে নিলে একটি বাইক থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে হোন্ডা কোম্পানি যদি আর একটু নজর দেয় তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া সাধারণ ব্যবহারকারীদের পক্ষে খুব সহজ হয়ে যাবে। আমি আরও একটি বিষয় নজর দিতে চাই তা হলো ইন্ডিয়াতে আমি হর্নেট চালিয়েছিলাম সেই বাইকটি আমাদের দেশে যে হর্নেট টি চলছে তার থেকে ফার বেটার। কতৃপক্ষ যদি এই দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে তাহলে তাদের বিক্রি আরো বেড়ে যাবে।

পরিশেষে বলতে চাই
হর্নেট বাইক টি দাম অনুযায়ী বেশ ভালো। আশা করি বাকি সমস্যার গুলো কোম্পানি খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করবে।

All HONDA bike price in bd

Honda CB Hornet 160R SD