মোটরসাইকেল প্রেমীদের কাছে “হোন্ডা” একটি বহুল পরিচিত নাম। হোন্ডা এই দেশে তাদের ভালোবাসা রেখে গেছে যার জন্য তারা তাদের নামটা মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। অনেকেই মোটরসাইকেলকে মোটরসাইকেল বলেন না তারা হোন্ডা বলে থাকেন। হোন্ডা এতটাই পরিমাণে বিশ্বস্থতা অর্জন করেছে যে তাদের নাম এখন বাইকপ্রেমি মানুষের মুখে মুখে। হোন্ডা যে কোন বাইক প্রথম অবস্থায় দেখে কেউ অনাগ্রহ বা খারাপ মন্তব্য প্রকাশ করে না বরং তারা সেই বাইক রাইড করার পর তাদের মন্তব্য তুলে ধরে এবং মন্তব্য অধিকাংশই পজিটিভ আসে। আমাদের দেশে যেখানে হোন্ডা তাদের কিছু ভালোবাসা মানুষের মাঝে রেখে গেছে সেখানেই তারা আবারো দীর্ঘবিরতির পর নতুন নতুন স্টাইলিশ ও আধুনিক বাইক নিয়ে গ্রাহকদের সামনে হাজির হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে হোন্ডার প্রায় ১০ টির ও বেশি মোটরসাইকেল বিদ্যমান এবং সেগুলো চাহিদার দিক দিয়ে শীর্ষে। তেমনি একটি ১৫০ সিসির বাইক হচ্ছে হোন্ডা সিবি ট্রিগার। দেখতে মার্জিত, সুন্দর পাওরফরমেন্স সব কিছু মিলিয়ে গ্রাহকদের ১৫০ সিসি বাইকের চাহিদা পূরণ করে এই সিবি ট্রিগার। চলুন আজকে দেখে নেওয়া যাক এই বাইকটিতে হোন্ডা আরও কি কি ফিচারস যোগ করেছে।
ডিজাইন
হোণ্ডা তাদের এই বাইকটিকে খুব মার্জিত ভাবে ডিজাইন করেছে। উপরের অংশে হ্যান্ডেলবার থেকে শুরু করে টেল ল্যাম্প পর্যন্ত এবং নিচের অংশে এলয় রিম থেকে শুরু করে পেছনের এলয় রিম পর্যন্ত সব কিছুতেই হোন্ডা তাদের ডিজাইনের সুনিপুনতার পরিচয় দিয়েছে। সুন্দর সিটিং পজিশন ও মনোশক সাসপেনশন এর লুকটাকে আরও স্টাইলিশ করেছে। এছাড়াও ফুয়েল ট্যংকারে মাসুকুলিন ট্যাংক ও হোন্ডার সুন্দর লোগো ডিজাইনকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।
ডাইমেনশন
ডাইমেনশনের উপর বাইকের আউটলুক অনেকটা নির্ভরশীল। হোন্ডা সিবি ট্রিগারের ডাইমেনশনে রয়েছে লম্বায় ২০৪৫মিমি চওড়ায় ৭৫৭মিমি এবং উচ্চতায় ১০৬০ মিমি । অন্যদিকে বাইকটির সিট উচ্চতা রয়েছে ৭৮০ মিমি, হুইলবেজ রয়েছে ১৩২৫ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে ১৭৫ মিমি। কম বেশি ১৫০ সিসি অন্যান্য বাইকের তেল ধারণ ক্ষমতা থাকে ১২ লিটার একইসাথে এই সিবি ট্রিগার বাইকের ফুয়েল ট্যাংকার ক্যাপাসিটি হচ্ছে ১২ লিটার । এই সব কিছু মিলিয়ে বাইকের ওজন ১৩৭ কেজি যা ১৫০ সিসি বাইকের জন্য আদর্শ একটি ওজন।
ভিস্কাস এয়ার ফিল্টার
ভিস্কাস এয়ার ফিল্টারের ফলে ধুলা-বালি কম ধরবে এবং ইঞ্জিন পারফরমেন্স বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। অন্যান্য এয়ার ফিল্টারগুলো সাধারণত ৪০০০ কিমি পর পরিষ্কার করতে হয় এবং ১২০০০ কিমি পর পর পরিবর্তন করতে হয় কিন্তু ভিস্কার এয়ার ফিল্টার ১৬০০০ কিমি পর পরিবর্তন করতে হয় ।
ইঞ্জিন
হোন্ডা তাদের ইঞ্জিন পারফরমেন্সের দিক দিয়ে গ্রাহকদের মুগ্ধ করেছে এবং গ্রাহকরা হোন্ডার ইঞ্জিনের প্রতি বিশ্বাসী। হোন্ডা সিবি ট্রিগারে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০ সিসি এয়ার কুল্ড, ৪ স্ট্রোক, এসআই ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন ১৪ বিএইচপি@ ৮৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ১২.৫ এনএম @ ৬৫০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক উৎপাদন করতে পারে। সেই সাথে হোন্ডা দাবি করে যে তাদের এই বাইকটি মাইলেজ দিবে ৬৫ কিমি প্রতি লিটারে এবং টপ স্পীড দিবে ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখার জন্য আছে ভিস্কাস এয়ার ফিল্টার এবং ইঞ্জিন চালু করার জন্য ইলেকট্রিক ও কিক স্টার্ট অপশন রয়েছে। আমাদের দেশে ১৫০ সিসির প্রত্যেকটি বাইকের সাথে ৫ স্পীড গিয়ার বক্স রয়েছে এবং হোন্ডা সিবি ট্রিগার তার ব্যাতিক্রম নয়।
চেসিস
হোন্ডা সিবি ট্রিগারে ব্যবহার করা হয়েছে ডাইমন্ড ফ্রেম চেসিস এবং এই চেসিসের ফলে রাস্তায় ভালো স্টাবিলিটি ও মজবুত গঠন অনুভব করা যায়।
ব্রেকিং
হোন্ডা তাদের ব্রেকিং নিয়ে কখনও আপোষ করে না । তারা হোন্ডা সিবি ট্রিগারের সামনের চাকায় ব্যবহার করেছে ২৪০ মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ব্যবহার করেছে ড্রাম ব্রেক। আশা করা যায় এই দুই ব্রেকিং সিস্টেম থেকে গ্রাহকদের ভালো পারফরমেন্স পাবে।
সাসপেনশন
সাসপেনশন নিশ্চিত করে স্মুথ রাইডিং অনুভূতি। সিবি ট্রিগারের সামনের দিকে রয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পেছনে রয়েছে আরামদায়ক মনোশক। এই মনোশক সাসপেনশন রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়কেই আরামদায়ক রাইডিং অনুভূতি দিবে ।
টায়ার
সিবি ট্রিগারের সামনে এবং পেছনে উভয় দিকেই টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এলয় রিমের সাথে সামনের টায়ারের পরিমাপ হচ্ছে 80/100 17 MC 46P পেছনের টায়ারের পরিমাপ রয়েছে 110/80 17 MC 57P। আশা করা যায় উভয় টায়ার থেকেই ভালো গ্রিপ পাওয়া যাবে।
মিটার কনসোল
বাইকটির রয়েছে ফুল ডিজিটাল মিটার এবং রাতের রাইডে মিটারটি অনেক সহায়ক। মিটার কনসোলে রয়েছে স্পীডো মিটার, আরপিএম মিটার, ওডো ও ট্রিপ মিটার, ফুয়েল ইনডিকেটর সহ বাইকারের যাবতীয় প্রয়োজনীয় ফিচারস।
ইলেকট্রিকাল
ইলেকট্রিক্যাল দিকে রয়েছে ১২ ভোল্ট-৪ এম্পায়ারের ব্যাটারী। ৩৫/৩৫ ওয়াট এর হেডল্যাম্প। এলিডি টেল ল্যাম্প, সাইড ইনডিকেটর সহ প্রয়োজনীয় ফিচারস।
পরিশেষে
সবশেষে বলা যায় যে হোন্ডা একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে বাইকারদের মনে আস্থা রেখে চলেছে তাই তাদের খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। হোন্ডার বাইক কেনার জন্য এখন কেউ পরামর্শ নিতে চায় না কারণ তারা হোন্ডা ব্র্যান্ড ভ্যালূ সম্পর্কে ভালো জ্ঞ্যাত। ১৫০ সিসির ঠান্ডা আউটলুকের এই বাইকটি বাংলাদেশের মার্কেটে অনেক সাড়া ফেলবে বলে আশা করা যায়।