হোন্ডা আসলেই হোন্ডা একথা সকলকে মানতেই হবে। আমিও একথাটা মানতাম না কিন্তু যখনই হোন্ডার বাইক কিনি তারপর থেকে এই কথাটার গুরুত্ব দিতে লাগলাম যে হোন্ডা হোন্ডাই। আমি মোঃ বাশার পেশায় ব্যবসায়ী। আমার বাসা একটু গ্রাম্য অঞ্চলে যার ফলে ব্যবসায়ীক বিভিন্ন কাজে আমি মোটরসাইকেল বেশী ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে আমি ব্যবহার করছি হোন্ডা সিবি ট্রিগার ১৫০ সিসির বাইকটি।এই বাইকটির পূর্বে আমি ব্যবহার করেছি ডিস্কোভার ১৩৫ সিসি। হোন্ডা সিবি ট্রিগার বাইকটি আমি প্রায় দেড় বছর ধরে ব্যবহার করছি। এই দেড় বছরে বাইকটি আমাকে কোনো ঝামেলায় ফেলেনি। আজ সময় হয়েছে এই বাইকটির একটি রিভিউ দেওয়ার।
হোন্ডা সিবি ট্রিগার বাইকটির তেমন স্টাইলিশ লুক নেই তবে আমি মনে করি যে বাইকটিতে অনেক মার্জিত লুক রয়েছে। বাইকটির ডিজাইনটা অনেক সুন্দর। তবে অনেকেই বলে থাকে যে ট্রিগারের নাকি ডিজাইন ভালো না কিন্তু আমি মনে করি যে বাইকের ডিজাইন যেমন হোক এর পারফরমেন্সটাই আসল। অন্যদিকে বাইকটির যথেষ্ট ভালো বিল্ড কোয়ালিটি রয়েছে। আমি গ্রামের বিভিন্ন খারাপ রাস্তায় এই বাইকটি নিয়ে রাইড করেছি এবং আমার কাছে এর অনেক ভালো বিল্ড কোয়ালিটি মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বলবো যে হোন্ডা সিবি ট্রিগারে অনেক ভালো ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি রয়েছে।
বাইকটি চালিয়ে আমি যথেষ্ট ভালো আরাম অনুভব করেছি। সিটিং পজিশনটা অনেক আরামদায়ক। আমি একটানা ১০০ কিমি এর বেশী রাইড করার পরেও কোনো ধরনের ব্যাক পেইন অনুভব করিনি।সিটিং পজিশনের সাথে মিল রেখে হ্যান্ডেলবারটা ধরে আমি অনেক আরাম অনুভব করি এবং হ্যান্ডেলবারটা অনেক নরম হওয়ায় বাইকটি চালিয়ে অনেক মজা পাওয়া যায়। হ্যান্ডেলবারের সাথে সংযুক্ত সুইচগুলোর মান বেশ ভালো। কিন্তু বাইকটির হেডল্যাম্পের আলোটা খুব একটা বেশী না যার ফলে গ্রামের অন্ধকার রাস্তায় এবং হাইওয়েতে হেডল্যাম্পের আলোর অনেক ঘাটতি দেখা যায়।
আমি বাইক ছাড়া খুব কমই চলাচল করি এবং আমার কাছে এই বাইকটি কন্ট্রোলিংটা অনেক ভালো মনে হয়েছে। আমি এই পর্যন্ত বাইকটির টপ স্পীড প্রায় ১১২ কিমি তুলতে সক্ষম হয়েছি আমি আরও বেশী টপ স্পীড তুলতে পারতাম কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকার ফলে এর বেশী ঝুকি নেই নি। ১১২ কিমি প্রতি ঘণ্টায় টপ থেকে সোজা ২০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র বাইকটিতে ভালো ব্রেকিং থাকার ফলে। ডাবল ডিস্ক ব্রেকিং এর ফলে এর ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে আমাকে কখনও ঝামেলায় পড়তে হয় না। বাইকটি চালিয়ে অনেক কম ঝাঁকুনি আমি অনুভব করি কারণ এর পেছনের মনোশক সাসপেনশন অনেক কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। আমি এর টায়ারে আজ পর্যন্ত কোনো স্কীড পায়নি। তবে গ্রামের কাদাযুক্ত রাস্তায় টায়ারে খুব একটা ভালো গ্রিপ পাওয়া যায় না।
ইঞ্জিন পারফরমেন্স নিয়ে বলতে গেলে হোন্ডাকেই অপমান করা হবে কারণ এত ভালো মানের ইঞ্জিন আমি অন্য কোনো বাইকে খুজে পায়নি। আমি একটানা অনেকক্ষণ রাইড করার পরেও ইঞ্জিন পারফরমেন্সের কোনো কমতি খুজে পায়নি । অন্যদিকে ১৫০ সিসির বাইক হিসেবে আমি দারুণ মাইলেজ পাচ্ছি যেটা ৪৮ কিমি প্রতি লিটারে। আমি মনে করি এতো ভালো ইঞ্জিন পারফরমেন্সের পাশাপাশি দুর্দান্ত মাইলেজ অন্য কোনো কোম্পানীর বাইকগুলোতে খুব কমই খুজে পাওয়া যায়।
সার্ভিসিং সেন্টারের মান বলতে গেলে আমার কাছে খুবই বাজে লেগেছে কারণ তারা খুব একটা দক্ষ ও অভিজ্ঞ না। আমার মনে হয় হোন্ডা কোম্পানিকে তাদের সার্ভিসিং মানটা আরও উন্নত করা উচিত যদিও ছোট খাটো সমস্যা ছাড়া আমি এই পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যায় পড়িনি।
সমস্ত কিছু বিবেচনা করে আমি বলবো যে ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে বাইকটির কোয়ালিটি অনুযায়ী এর দামটা আমার কাছে ঠিক মনে হয়েছে। যদি কেউ এই বাইকটি নিতে চান তবে আমি বলবো যে কোনো দিকে না তাকিয়ে বাইকটি নিতে পারেন কারণ “হোন্ডা ইজ হোন্ডা”।