“ওয়ান হার্ট হোন্ডা” এই ট্যাগ লাইনটি মোটরসাইকেল জগতে খুব জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তার পেছনে কারণ হচ্ছে অসংখ্য গ্রাহক এবং আশানুরূপ আফটার সেলস সার্ভিস। সারা বিশ্বব্যাপী হোন্ডা’র মোটরসাইকেলগুলো বেশিরভাগ গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এবং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটি প্রথম শ্রেণির তালিকায় রয়েছে। সেই প্রডাক্টের তালিকায় রয়েছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০ সিসি যা আমাদের দেশের প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির একটি বাইক। সম্প্রতি তারা নিয়ে এসেছে রেপসল ভার্সন সাথে সংযুক্ত আছে এবিএস ফিচারস এবং এটি গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি করেছে।
আমরা যদি নতুন এই সিবিআর ১৫০ এর কিছু ফিচারসের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যে , এখানে ডুয়াল চ্যানেল এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম(এবিএস) ব্যবহার করা হয়েছে যা ব্রেকিং এ আর ভালো অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। ডিওএইচসি – ঁ স্পীড পিজিএম-এফআই ইঞ্জিন নিশ্চিত করে সর্বাধিক মাইলেজ , পারফরমেন্স এবং টর্ক। এই মডেলটিতে তৈরি করা হয়েছে মুলত রেসিং ও স্পোর্টস প্রেমি বাইকারদের জন্য। নতুন ডিসপ্লে এর মিটার কনসোল গিয়ার ইন্ডিকেটর সহ সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সাহায্য করে। অধিকন্তু ইমারজেন্সি স্টপ সিগন্যাল চালু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেছনের দুইটা ইন্ডিকেটর লাইট জ্বলে উঠবে। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা এই বাইকের সাথে সংযুক্ত আছে । তাই চলুন পরিচিত হই আরও সেই সব ফিচারসগুলোর সাথে।
আকর্ষণীয় নতুন ফিচারসমুহ
ডিওএইচসি ৬ স্পীড ইঞ্জিন -
সিবিআর এর এই ভার্সনে হোন্ডা ব্যবহার করেছে ডিওএইচসি ৬ স্পীড ইঞ্জিন যা ইঞ্জিনের লো মীড টর্ক ভালো সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
নতুন এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রাস্তার অবস্থা, রাইডার দের রাইডিং স্টাইল ও চাহিদা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ডুয়েল চ্যনেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন প্যানেল মিটার কনসোল
বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে স্পোর্টস এবং চমৎকার ফুল ডিজিটাল ডিসপ্লে প্যানেল সাথে গিয়ার ইন্ডিকেটর যা একটি স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইকের জন্য খুবই দরকার এবং এই বাইকটি সেসকল ফিচারস ব্যবহার করা হয়েছে।
নতুন এডজাস্টএবল ফ্রন্ট এবং প্রো লিংক রেয়ার সাসপেনশন
যে কোন প্রিমিয়াম বাইকের ক্ষেত্রে কম্ফোরট এবং ব্যালেন্স বেশি অগ্রাধিকার পায় এবং সেটা নিশ্চিত করার জন্য হোন্ডা এখানে ব্যবহার করেছে প্রো-লিংক রেয়ার সাসপেনশন যা যে কোন পরিস্থিতিতে রাইডারকে ভালো স্ট্যাবিলিটি ও আরাম প্রদান করবে। এটি ব্যবহার করা হয়েছে “সিবিআর১০০০আরআর” এবং সিবিআর৬০০আরআর৪৫সি” তাই বলা যায় যে এটা অবশ্যই হাই পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে।
নতুন ইমারজেন্সি স্টপ সিগন্যাল
ইমারজেন্সি লাইটটি জ্বলে উঠবে তখনই যখন রাইডার রাইডিং অবস্থায় ইমারজেন্সি ব্রেক করবে । এতে করে পেছনের দুইটা টেল ল্যাম্প হ্যাজারড লাইটের মত এক সাথে জ্বলে উঠবে।
স্পেসিফিকেশন
ডিজাইন
মটো জিপি রেপসল রঙয়ের সাথে হোন্ডা সিবিআর১৫০ এর রয়েছে এরো ডাইনামিক ডিজাইন । বাইকটির কালার কম্বিনেশন করা হয়েছে মটোজিপিট্র্যাকরেস এর চলমান রেপসলের আদলে যা একটি ভিন্ন ক্রেজ যোগ করেছে। এগুলো ছাড়াও আরও রয়েছে উভয় দিকে স্টাইলিশ ডিস্ক প্লেট, দুই স্টেপ হ্যান্ডেলবার, স্প্লিট সিটিং পজিশন এবং অসাধারণ কালার কম্বিনেশন যা বাইকটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বডি ডাইমেনশন
বাইকটির সকল বডি পার্টস স্থাপন করা হয়েছে ডাইমন্ড ফ্রেমের উপরে এবং পরিমাপগুলো হচ্ছে লম্বায় ১৯৮৩মিমি, চওড়ায় ৬৯৪ মিমি , উচ্চতায় ১০৭৭মিমি , হুইলবেজে রয়েছে ১৩১১ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৬ মিমি। আরও রয়েছে ১২ লিটার তেল ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ফুয়েল ট্যংকার এবং এবিএস সব বাইকটির ওজন রয়েছে ১৩৭ কেজি।
ইঞ্জিন
১৪৯ সিসি । ৪ স্ট্রোক , ডিওএইচসি , ৪ ভালভ ইঞ্জিন এই বাইকটি দেখা যায় এবং এই ইঞ্জিন ম্যাক্স পাওয়ার ১৭.১ পিএস(১৬.৮৭ বিএইচপি) @ ৯০০০ আরপিএম এবং ম্যাক্স টর্ক ১৪.৪ এনএম @ ৭০০০ আরপিএম। কম্প্রেসার রেসিং রয়েছে ১১:৩ এবং ভেস্কাস পেপার ফিল্টার সংযুক্ত আছে। গিয়ারের দিকে রয়েছে ৬ স্পীড ম্যানুয়াল গিয়ার বক্স এবং ইঞ্জিন চালু করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন।
টায়ার এবং ব্রেকিং
টায়ার এবং ব্রেকিং নিয়ে হোন্ডা কখনই আপোষ করে না। সামনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ১০০/৮০_১৭ এম/সি ৫২পি এবং পেছনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ১৩০/৭০-১৭ এম/সি ৬২পি । তার মানে হচ্ছে চাকাগুলোর সাইজ ১৭ এবং দুইটাই এলয়। টায়ারগুলো সম্পূর্ণ টিউবলেস । এখন আসি আসল পরিবর্তনের দিকে। তারা ব্রেকিং সিস্টেমে ব্যবহার করেছে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস সাথে ডাবল ডিস্ক ব্রেক। উভয়চাকাতেই হাইড্রুলিক ডিস্কের সাথে এবিএস রয়েছে এবং সেটা শুধুমাত্র মটোজিপি এডিশনের জন্য।
সাসপেনশন
ভালো মানের সাসপেনশন আরাম এবং কন্ট্রোল প্রদানে সহায়তা করে এবং এই বাইকটি এসেছে মটোজিপি ডিএনএ আদলে তাই সাসপেনশনের দিক এখানে অন্তর্গত। আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করার জন্য পেছনের সাসপেনশনে ব্যবহার করা হয়েছে সিংগেল সাসপেনশন ( প্রো লিংক সিস্টেম) যা হোন্ডার হাই সিসি বাইকগুলোতে লক্ষ্য করা যায়। তাই বলাবাহুল্য যে এটা যে কোন রাইডিং কন্ডিশনে অনেক আরাম এবং স্ট্যাবিলিটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে সামনের দিকে তারা ব্যবহার করেছে টেলিস্কোপিক ফরক।
ইলেক্ট্রিক্যাল
ইলেক্ট্রিক্যাল সকল ফিচারস যেমন টার্ন ল্যাম্প, টেল ল্যাম্প , হ্যাজারড লাইট এবং বিশেষকরে শক্তিশালী ১২ ভোল্ট ৬০/৫৫ ওয়াট হেডল্যাম্প পরিচালনা করার জন্য এমএফ ১২ ভোল্ট-৫ ব্যাটারি স্থাপন করা হয়েছে।
পরিশেষে
সম্পূর্ণ ফিচারস দেখার পর বাইকটির সাথে অন্য সিবিআর ১৫০ এর তুলনা করলে দেখা যায় যে সব দিক থেকে মোটামুটিভাবে সিবিআর রেপসল এগিয়ে এবং এর বিশেষ কিছু সুবিধাও পরিলক্ষিত হয়। তাই নতুন এই বাইকটির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভ কামনা রইল এবং দেখার বিষয় হল এই মেশিনটা আমাদের দেশের কাস্টমারদের কতটুকু সন্তুষ্ট করতে সক্ষম।