ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন ব্যবহার করার পর আমি এখন ব্যবহার করছি হোন্ডা সিবিআর ১৫০ ২০২১ ইন্দোনেশিয়ান মডেল যেটা সদ্য বাংলাদেশে এসেছে। বাইকটা দেখার পর আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে কারণ বাইকের মধ্যে একটা ইউনিক ডিজাইন রয়েছে যেটা সচরাচর আমরা অন্যান্য হোণ্ডা বাইকে দেখতে পায়না এবং এই প্রথম হোন্ডা বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসেছে ইউনিক একটা বাইক যেটা সবার পছন্দ হবে বলে আমি মনে করি। হোন্ডা সিবিআর ১৫০ ইন্দো ভার্সন বাংলাদেশের মার্কেটে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শুরু থেকেই এই বাইকের প্রতি আমার একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল। বিশেষ করে সিবিআর মডেলের উপর আমার বেশি আকর্ষণ থাকার কারণে বাইকটার মধ্যেই আমার মনে হয় যে একটা বিশেষ ভাব রয়েছে যেটা অন্য কোন বাইকে লক্ষ্য করা যায় না। তো যখন বাংলাদেশের বাজারে এই হোন্ডা সিবিআর ২০২১ সালের মডেলটা আসলো তখন আমি চিন্তা করলাম যে এই বাইকটা আমি কিনবো এবং যেহেতু বাংলাদেশ অফিশিয়াল লঞ্চ করেনি, তাই আমি আনঅফিসিয়াল শোরুম থেকে বাইক কিনি এবং কেনার পরে এখন পর্যন্ত ২৫০০ কিলোমিটার চালিয়েছি।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই বাইকের কোন কোন বিষয় ভালো লেগেছে এবং কোন কোন বিষয়ে খারাপ লেগেছে সেগুলো আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এই বাইকটা যেহেতু নতুন তাই আপনারা ভালো একটা ধারণা পাবেন বলে আমি আশা করি। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই মোটরসাইকেলভ্যালীকে যে তারা আমাকে এই সুযোগটা করে দিয়েছেন, আপনাদের সবার সাথে বাইকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার। নিচে আমি আমার বাইকের স্বল্প অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
প্রথমে বলবো আমি এ বাইকের কিছু ভালো দিক যেগুলো আমি এখন পর্যন্ত পেয়েছি আমার বাইক থেকেঃ
-আমার কাছে এই বাইকের প্রথম যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হল এই বাইকের ডিজাইন এবং গঠন। এই বাইকের মধ্যে অনেক সুন্দর একটি ডিজাইন এবং গঠন রয়েছে যেটা আগের সিবিআর মডেলে ছিল কিন্তু এবার আরো বেশি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের সুন্দর বাইকের তালিকায় শীর্ষে থাকবে এই বাইকটা। সবকিছু বিবেচনা করে আমি এই বাইকের ডিজাইনটা পছন্দ করে নিয়েছি। তাই ডিজাইন নিয়ে আমার কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা খারাপ লাগার কোন কিছু নাই।
-ডিজাইনের পরে এইবার বলি এই বাইকটা চালিয়ে কেমন আরাম পেয়েছি। চালিয়ে আমার কাছে খুব আরামদায়ক মনে হয়েছে কারণ হ্যান্ডেলবার, সিটিং পজিশন এবং অন্যান্য বিষয় যথেষ্ট আরামদায়ক মনে হয়েছে। আমি আরামের দিক থেকে খুব ভালো সাপোর্ট পাই। বাইকটা আমাকে খুব ভালো আরাম প্রদান করে এবং আমি এতে সন্তুষ্ট।
-কন্ট্রোলিংটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে আগের সিবিআর থেকে আরও বেশি আপডেট করা হয়েছে। আপডেট মনে হয়েছে এই কারণে যে বাইক আমি যখন রাইড করি তখন একটা প্রিমিয়াম ও এগ্রেসিভ অনুভূতি হয় যেটা আগের সিবিআর ১৫০ বাইকে একটু কম লাগতো। এই বাইকের টায়ার পারফরমেন্স খুবই ভালো এর ফলে চালিয়ে কন্ট্রোলিং খুব ভালো পাওয়া যায়। আমি যেকোন রাস্তায় অনেক ভালো কন্ট্রোলিং পেয়েছি বিশেষ করে এর ডুয়েল চ্যানেল এবিএস থেকে আমি খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি, খুব ভালো কাজ করে। তারপরে আছে আপসাইড ডাউন সাসপেনশন সেটাও খুব ভাল কাজ করে এবং সবকিছু মিলিয়ে হোন্ডা সিবিআর ১৫০ ২০২১ ইন্দো খুব ভালো কন্ট্রোল প্রোভাইড করে।
-ইঞ্জিনের শক্তিটা আগের সিবি আর বাইকে যেমন খুব বেশিছিল এই সিবিআর বাইকে ইঞ্জিনটা আমার কাছে অনেক রিফাইন মনে হয়েছে কারণ আমি যখন রাইড করি তখন আমার কাছে খুব ভালো একটা অনুভূতি হয় এবং ইঞ্জিন দ্রুত এক্সেলেরেট করতে সক্ষম ।আমি ইঞ্জিনের শক্তিটা ২৩০০ কিলোমিটার রাইড করে খুব ভালো অনুভুতি পেয়েছি এবং আমি মনে করি যে হোন্ডা খুব ভালো সময় দিয়েছে এই ইঞ্জিনটা তৈরি করতে।
-যেকোন রাস্তায় আমি এই বাইকের সাসপেনশন ব্রেকিং এগুলো থেকে খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনের রাইডে আমি বাইক থেকে খুব ভালো সাপোর্ট পাই এবিএস ব্রেকিং এর কারণে । যেহেতু এই বাইকের ডুয়েল চ্যানেল দেওয়া আছে তাই আমার কাছে ব্রেকিং নিয়ে খুব একটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার কিছু নাই। আমার কাছে ব্রেকিং এর পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো ব্রেকিং এর সাথে সামঞ্জস্য যেমন সাসপেনশন এগুলোর পারফরম্যান্স খুব ভালো লেগেছে।
-রাইড করে স্মুথ অনুভূতি হয় কারণ এটা হোন্ডার বাইক, আর হোন্ডা মানেই হচ্ছে স্মুথনেস। আমি সিবিআর থেকেও অনেক ভালো স্মুথনেস পাচ্ছি । আমি আশাবাদী যে এই বাইকটা আমাকে অনেকদিন এরকমভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাবে।
এবার বলি এই বাইকের কিছু মন্দদিক
-আমার কাছে চেইনের শব্দটা খুব বিরক্তিকর মনে হয়েছে কারণ আমি যখন রাইড করি তখনই চেইনের শব্দটা আমার রাইডিং অনুভূতিটা নষ্ট করে। আমার মনে হয় যে হোন্ডা তাদের চেইনের এর বিষয়টা একটু মাথায় নিয়ে মোটরসাইকেল বাজারজাত করা উচিত। এই শব্দটার সমস্যার সমাধানটা খুব অচিরেই দেওয়া উচিত। পারফরমেন্সে এই নিয়ে কোনো ঘাটতি হয়না তবে শব্দটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে।
-শুরু থেকে আমি ইঞ্জিনের ওভারহিট অনুভব করছি কারণ এ বাইকের ইঞ্জিনটা এখনো নতুন হয়ে আছে। নতুন অবস্থায় যেকোনো ইঞ্জিন গরম হয় স্বাভাবিক কিন্তু আমার কাছে এটা অস্বাভাবিক গরম মনে হচ্ছে। আমি জানিনা কেন তবে এবার সার্ভিসিংয়ে নিয়ে আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা তাদেরকে অবগত করব।
-দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে কারণ এই সেগমেন্ট আমরা জানি যে প্রিমিয়াম বাইকের এর মধ্যে অন্যান্য ব্রান্ডের বাইকের দাম তুলনামুলক কম। হোন্ডা কর্তৃপক্ষের উচিত বাংলাদেশের বাজারজাত করার আগে দামটা একটু বিবেচনা করা।
শহরের মধ্যে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাই ওয়েতে ৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার। এ দিকে আমি একদিনে ২৫০ কিলোমিটার একটানা রাইড করেছি। বাইকের টপ স্পীড নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নাই। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় যে বাইকটা খুব ভালো পারফর্মেন্স দিবে এবং বাংলাদেশের আরেকটা সেরা বাইক হতে যাচ্ছে এই হোন্ডা সিবিআর ২০২১ সালের মডেল। তাই আপনারা যারা একটি কিনবেন তারা অবশ্যই বাইকটা নির্দ্বিধায় কিনতে পারেন। এখন হয়তো অফিশিয়ালি বাজারে নিয়ে এসেছে তাই পার্টস নিয়েও ঝামেলা হবে না ।