হোন্ডা সিবি হরনেট ১০হাজার কিমি রাইডিং রিভিউ - রুহুল আমিন

শুধুমাত্র ঝুঁকির কথাটা বাদ দিলে একটি মোটরবাইক¬ আমাদের মত মধ্যম আয়ের ঘন বসতিপুর্ন একটি দেশের জন্য দ্যা মোস্ট ম্যাজিকাল এন্ড সুইটেবল ট্রান্সপোর্ট।

ছোট থেকেই প্রতিটি ছেলের মতই একটি মোটরবাইকের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে খেলতে বড় আমিও হয়েছি। কিন্ত ঢাকায় এসে যখন দেখলাম নিকটবর্তী গন্তব্যকে ছুবার জন্য অসামান্য ধৈর্য্য নিয়ে অনিশ্চতভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় তখন বুঝলাম আমার সেই ছোট বেলার মলিন স্বপ্নকে দৈনন্দিন পথচলার অবলম্বন করে নেবার সময় এসে গেছে। তাই

হর্নেট নিলাম আমার ২য় বাইক হিসেবে। প্রথম বাইকের বাজে পার্ফমেন্স আর হতাশজনক কাস্টমার সার্ভিসের জন্য মার্কেটের সবচেয়ে আস্থার ব্র্যান্ড হোন্ডা কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম সেইদিন যেদিন প্রথম চেস্ট রাইড দিলাম। সিটিং পজিশন,কন্ট্রোল আর ব্রেকিং ৫ মিনিট বাইক চালালে এর চেয়ে বেশি কিছু বুঝা যায় না। আমি এতটুকুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি কারন হোন্ডা নিয়ে ক্রস চেকিং এর কিছুই নেই যেহেতু আমার বাবারও হোন্ডা ছিল।



আমি মোঃ রুহুল আমিন,বর্তমানে একটি সফটওয়্যার কম্পানিতে কর্মরত।
হোন্ডা সিবি হর্নেট কিনেছিলাম ৬ই জুন ২০১৮ তে। বাইকটি যেদিন বাসায় আনলাম সেদিন কোনভাবেই ঘুম আসছিল না। বার বার ডান হাত কিস-মিস করছিল যেন থ্রোটল টানছি। পরেরদিন ভোর ৫টা বের হলাম একটু টেস্ট ড্রাইভ দিতে। এত সকালে বের হবার কারন হল আমার নাম্বার বা ব্যাংক স্লিপ কিছুই নেই।
টানতে টানতে হঠাত মনে হল চন্দ্রায় পৌছে গেছি। তো কি আর করার চলেই গেলাম রাজশাহী। সেই ট্যুর ছিলা ৫৮০ কিলোমিটারের (ঢাকা-রাজশাহী-চাপাই-ঢাকা) এরপর যা হল তা মটেও আমই কল্পনাতেও আনিনি। ১০ হাজার কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেছি এই ফ্যান্টাস্টিক মেশিনটি। ঘুড়েছি বাংলাদেশের প্রায় পুরোটাই। এত দীর্ঘ কিলোটারের অনুভুতিগুলো শেয়ার করছি এবার যা আপনাদের সিদ্ধান্ত নেবার প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করবে।




হর্নেটের মুল বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কথা বলিঃ

কমফোর্টঃ
মোটরবাইকের সিটিং পজিশন আর রাইডিং কিমফোর্ট যদি না থাকে তাহলে রাইডারের কনসেনট্রেশন ব্রেক হতে পারে যে কোন সময়ই। এ দিক দিয়ে হর্নেটকে আমি ৮০% মার্কস দিয়ে দিব। হর্নেট নিয়ে এ পর্যন্ত একটানা একদিনে ৫৮০ কিলোমিটার আর এক ট্যুরে ১৩০০ কিলোমিটার রাইড করেছি এবং এটি রাইডিং এ যথেষ্ট আরামদায়ক। দীর্ঘ পথ পারি দলেও আপনার ক্লান্তি ভাবটা আসবে না বা ব্যাক পেইন করবে না।

ইঞ্জিন পার্ফমেন্সঃ
নিয়মিত মেইন্টেনেন্স করলে এর ইঞ্জিন পার্ফমেন্সে পরিবর্তন আসবেনা আসা করি। হঠাত কোন সমস্যা,পাওয়ার লস,অতিরিক্ত ইঞ্জিন টেম্পারেচার এগুলো এই বাইকে পাবেন না।

ইঞ্জিন পাওয়ারঃ
হর্নেটের ইঞ্জিন পাওয়ার সম্পর্কে আমার ধারনা হয় যখন ডিম পাহাড়ে যাই আমার এক বন্ধু পিলিওন সহ। আমি ও আমার পিলিওন মিলে প্রায় ১৭০ কেজি । এই মস্ত বড় দুইজন মানুষ হর্নেটে চড়ে প্রায় ৩৪০০ ফিট পাহাড়ে হাফ ক্লাস টেনেই উঠে গেলাম আর বিন্দু মাত্র বুঝতেও পারলাম না। একবার ভেবেছিলাম আমার ক্লাস প্লেটটা হয়তো চেইঞ্জ করতে হবে কিন্ত সেই ট্যুরের পর আরো ৮০০০ কিলো চলেছে আমার হর্নেট এখনো ক্লাস প্লেট চেইঞ্জ করতে হয়নি

বডি এন্ড চেসিসঃ
এর বডিতে যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে তা নিম্নমানের এটা সত্যি। এত মাস্কুলার আর পাওয়ার মেশিনে এই স্বস্তা প্লাস্টিক যায় তবে সেটাকে ১৬ আনাই পুষিয়ে দিয়েছে এর চেসিস। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রত্যাশিত নয়েস পাইনি। ব্যালেন্সিং এর ক্ষেত্রেও রি হেভি বিল্ডেড চেসিস সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

হর্ন এন্ড হেডলাইটঃ
এর স্টক হেডলাইট আর হর্ন আপনাকে সাপোর্ট দিবে যদি আপনি সিটি রাইডার হয়ে থাকেন তবে যদি ট্রাভেলার কিংবা এক্সট্রিম হাইওয়ে প্লেয়ার হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই এর হর্ন চেইঞ্জ করে ডুয়েল হর্ন আর হেডলাইট টেঞ্জ করে আর পাওয়ারফুল এল ই ডি লাগিয়ে নেবেন আর অবশ্যই এসি মুড টাও চেঞ্জ করে নেবেন।

পিলিওন কমফোর্টঃ
হর্নেটের সিট অনেক হার্ড আর পিলিওনের জন্য মোটেও আরামদায়ক না। এক্ষেত্রে মানিয়ে নিতে হবে আপনার রাইডিং পার্টনারকে।

মাইলেজঃ
এর মাইলেজ এই সেগমেন্টের প্রতিযোগী বাইক গুলোর চেয়ে কম। সিটি আমি ৩২-৩৫ আর হাইওয়েতে আমি পেয়েছি ৪০ যেখানে এফ জেড এস ভি ২ তে ৪৫-৫০ পাওয়া পাওয়া যায়।

ভাইব্রেশনঃ
নর্মালি এর ভাইব্রেশন নেই বললেই চলে তবে ১০৫ এর পর থেকে এর ভাইব্রেশন পাবেন।

কন্ট্রোলঃ
যারা এফ জেড এস চালান তারা হর্নেট চালালে কিছুটা সিমিলারিটি খুজে পাবেন অর্থাৎ হর্নেট এফ জেড এস মতই ভেরি ইজি টু টেক ইটস কন্ট্রোল । এতটুকু বলতে পারি বাইক চালানোর ৫ মিনিটের মাথাতেই এর কন্ট্রোলিং এর ওয়াও ফ্যাক্টার আপনাকে ইনসপায়ার্ড করবে নিয়ে যেতে চাইবে লং রাইডে।

ইঞ্জিন সাউন্ডঃ
এর ইঞ্জিন সাউন্ড একেবারেই এর লেভেলে পরে না তবে ইঞ্জিন থেকে এক্সট্রা নয়েজ পাবেন না।

সুইচ,চাপা ও থ্রোটলঃ
হর্নেটের সুইচ,চাপা আর থ্রোটল এততাই নিম্নমানের যা বলে বুঝে যাবে না। থ্রোটল খুব থিক তাই আনরেস্ট হবে লং রাইডে । আপনি হ্যান্ড গ্লাভস না পড়ালে খবর আছে। আবার বাইক ওয়াস করার পর সুইচগুলো কেমন যেন পানি জমে কাজ করতে চায়না। কয়েকবার আমার হর্ন ডাইরেক্ট হয়ে আমাকে এমবারেজড করেছিল।

পার্টস প্রাইস এন্ড এভেলাবিলিটিঃ
হোন্ডার পার্টসগুলো ইন্ডিয়ার তৈরি তাই এগুলো এভেইলেবল আর প্রাইস রিজেনেবল। তবে মজার ব্যাপার ১০ হাজার কিলোতে আবার এয়ার ফিল্টার আর স্পার্ক প্লাগ ছাড়া কোন পার্টসের প্রয়োজন পরেনি।

মেইন্টেইনেন্সঃ
নিয়মিত চেইন লুব আর ইঞ্জিন ওয়েলের বাইরে আর কোন এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছুর প্রয়োজন পড়বেনা হর্নেট ইউজারদের। চেইন লুব হিসেবে আমি ম্যানল আর ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে মতুল সিন্থেটিক ইউজ করে ভাল সার্ভিস পাচ্ছি।

আফটার সার্ভিসঃ
হোন্ডার আফটার সার্ভিস ভালো তবে সার্ভিস সেন্টার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। প্রচুর ভির জমে যায়। তবে টুকিটাকি সার্ভিস করাবার জন্য সার্ভিস সেন্টারে না গিয়ে এলাকার মেকানিক দিয়েই তুকিতাকি কাজ করিয়ে নিতে পারেন।


সবমিলিয়ে এই বাইকটি বেস্ট ভ্যালু ফর মানি। দীর্ঘদিন রাফ ইউজ করতে পারবেন বিন্দুমাত্র চিন্তা ছাড়া। এটি আমি রিকমেন্ড করবো যারা এক্সট্রিম ট্রাভেল পছন্দ করেন তাদের যদি বাজের ২ লাখের মধ্যেই লিমিটেড থাকে তবে হর্নেটের বাইরে কিছু ভাবার দরকার নেই। পরিশেষে সবার সাথে সুর মিলিয়েই বলতে হয় হোন্ডা ইজ হোন্ডা।

All HONDA bike price in bd

Honda CB Hornet 160R SD