মোটরসাইকেলের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেট দিনে দিনে আরও প্রশস্ত হচ্ছে এবং খুব দ্রুততার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের চাহিদা পুরন করা এবং গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন কোম্পনী গুলো বেশ ভাল মানে প্রোডাক্ট সরবরাহ করছে। তাদের মধ্যে জাপানিজ মটরসাইকেল ব্র্যান্ড হোন্ডা যেটা অনেক আগে থেকেই বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড। হোন্ডা তাদের গ্রাহকদের কম দামে অনেক ভাল মানের প্রোডাক্ট সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি হোন্ডা আমাদের লোকাল মার্কেটে তাদের নতুন একটি বাইক নিয়ে এসেছে এবং সেটা হল “হোন্ডা লিভো”। হোন্ডার এই বাইকটি ১১০ সিসি সেগমেন্টের এবং একটি কমিউটার বাইক হিসেবে স্টাইলিশ লুক এবং ভাল ফিচার রয়েছে।
এই বাইকটি তেমন একটা মাস্কুলার বাইক না এবং ১১০সিসির কমিউটার বাইক হিসেবে হবারও কথা নয়, কিন্তু বাইকটির বডি গ্রাফিক্স,স্টাইলিশ লুক এবং আধুনিক ফিচার সব মিলিয়ে বাইকটিকে অনেক সুন্দর করে তুলেছে। এই বাইকটির টার্গেটেড কাস্টমাররা হল যারা শহরে কিংবা গ্রামে একটু স্টাইলিশ কমিউটার বাইক নিতে চান, বিশেষ করে যারা তেল খরচের ব্যাপারে অধিক সতর্ক তাদের জন্যই এই বাইকটি। চলুন দেখে আসি বাইকটিতে কি কি আধুনিক ফিচার রয়েছে যেগুলো একজন গ্রাহকের খুব সহজেই নজর কাড়বে।
ডিজাইন এবং লুক
বর্তমানে একটি বাইকের খুব সাধারণ একটি বিষয় হল বাইকের আউটলুক।বাইকের আউটলুক যত সুন্দর হবে বাইকটি ততবেশি গ্রাহকদের নজর কাড়বে। ১০০ সিসি বাইক গুলোর মধ্যে “হোন্ডা লিভো” তে বেশ সুন্দর এবং নতুন ডিজাইনের বডি প্যানেল লক্ষ্য করা যায়। ফুয়েল ট্যাংকারটি কার্ভ হওয়ায় দেখতে বেশ এগ্রেসিভ লাগে এবং হেডল্যাম্পের চার পাশের বিকিনি ফেয়ারিং মডেল বাইকটিকে এজ শেপ এনে দিয়েছে। ফুয়েল ট্যাংকার বাদে সমস্ত বাইকটি যেমন প্যানেল, হেডল্যাম্প, মিরর, এবং সাসপেনশনে ব্ল্যাক আউট থিম রয়েছে। আপরাইট হ্যান্ডেলবার, ফুট রেস্ট পজিশন এবং চওড়া সিটিং পজিশন বাইকটিকে বেশ আরামদায়ক করেছে। ৬ টি স্পক বিশিষ্ট এলয় হুইল, আধুনিক ডিজাইনের মাফলার এবং সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক বাইকটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে পাশাপাশি বাইকটির সম্পূর্ণ ডিজাইনে পজিটিভ প্রভাব ফেলেছে।
ডাইমেনশন
এই বাইকটিতে বেশ ভাল ডাইমেনশন লক্ষ্য করা যায় এবং ডাইমেনশনের কারণে বাইকটির চেহারা আরও ফুটিয়ে তুলেছে। হোন্ডা তাদের এই বাইকটিতে ডাইমেনশন টাইপ বডি ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি লম্বায় 2020mm, চওড়ায় 746mm এবং উচ্চতায় 1099mm বডি ডাইমেনশন রয়েছে এর পাশাপাশি বাইকটির হুইলবেজ 1285mm, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স 180mm এবং ভাল সিট হাইট পুরো বাইকটিকে উন্নত আকার এনে দিয়েছে। ৮.৫ লিটার ফুয়েল ট্যংকারের সাথে বাইকটির ওজন রয়েছে ১১১ কেজি। এই ধরনের বডি ডাইমেনশন এবং ওজন আশা করা যায় যে বাইকারকে খুব ভাম কন্ট্রোল এনে দিবে।
ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন
হোন্ডা তাদের ইঞ্জিন তৈরিতে আপোষহীন।তারা সর্বদা চেষ্টা করে যে গ্রাহকদের সাধ্যের মধ্যে ভাল মানের ইঞ্জিন সরবরাহ করা এবং ত্রুটি মুক্ত ইঞ্জিন তৈরি করা। “হোন্ডা লিভো” তে রয়েছে পাওয়ারফুল ১০৯ সিসির সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যেটা ম্যাক্স পাওয়ার 8.2 BHP @ 7500 RMP এবং ম্যাক্স টর্ক 8.3 Nm @ 5500 RMP দিতে সক্ষম।এই ইঞ্জিন ভাল এসেলেরেশন এবং টপ স্পীড যেটা ৮০ কিমি প্রতি ঘন্টায় দিবে এছাড়াও HET প্রযুক্তির সাহায্যে ভাল মাইলেজ পাওয়া যাবে। ইঞ্জিনের কমপ্রেশন রেশিও হল 9.9:1 এবং ইঞ্জিন চালু করার জন্য রয়েছে ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্ট অপশন। বাইকটিতে ৪ টি ট্রান্সমিশন গিয়ার বক্স রয়েছে এবং সেগুলো সব সামনের দিকে ।
মিটার কনসোল এবং ইলেকট্রিক্যাল
হোন্ডা লিভোর মিটার কনসোল তেমন একটা আপডেট না তবে এনালগ মিটারে প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। এটির মিটার কনসোল ১০০ বা ১১০ সিসি বাইকের মত। গ্রাহকদের জন্য মিটার কনসোলে থাকছে RPM indicator, Low Fuel Indicator, Fuel Guage, speedometer, fuel indicator ইত্যাদি অর্থাৎ একজন বাইকারের প্রয়োজনীয় সব কিছুই এর মিটার কনসোলে রয়েছে। মিটারটিতে ডিজিটাল ফিচার থাকলে বেশ আপডেটেড হত।
ইলেকট্রিক সাইডের কথা বলতে গেলে বেশ আপডেটেড এবং স্টাইলিশ। 12V 3(MF) মেইন্টেনেন্স ফ্রী ব্যাটারি, সামনে হ্যালোজিন বাল্ব, এলিডি সাইড ইনডিকেটর, পাওয়ার ফুল টেল ল্যাম্প, ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন এছাড়াও পাস সুইচ,হাইবিম-লোবিম সুইচ বাইকটির ইলেকট্রিক্যাল সাইডে রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ১১০ সিসির বাইক হিসেবে ফিচার গুলো বেশ সন্তোষজনক।
সাসপেনশন
“লিভো” সাসপেনশন অন্যান্য ১০০ সিসি সেগমেন্টের বাইকের মতই আছে। বাইকের সামনের দিকে রয়েছে টেলিস্কোপ সাসপেনশন এবং পেছনের দিকে রয়েছে স্প্রিং লোডেড হাইড্রলিক রেয়ার সাসপেনশন। বাইকটির রেয়ার সাসপেনশন ৫ টি ধাপে এডজাস্টেবল রয়েছে যেটা রাইডারকে বেশ কম্ফোরট দিবে।
টায়ার এবং ব্রেকিং
কমিউটার বাইক হিসেবে অন্যান্য ১১০ সিসির বাইকের মতই ব্রেকিং এবং টায়ার রয়েছে। এই বাইকটির সামনের এবং পেছনে চাকা তেমন চওড়া না যার ফলে বেশ ভাল মাইলেজ পাওয়া যায়। সামনের চাকার মেজারমেন্ট 80/100-18 এবং পেছনের চাকাতেও একই মেজারমেন্টের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে এবং সামনে পেছনে দুটি চাকাই টিউবলেস যেটি সাধারনত এই সেগমেন্টের বাইকে কমই দেখা যায়।
অন্যদিকে ব্রেকিং এর কথা বলতে গেলে বাইকটিতে ডিস্ক এবং ড্রাম দুটি ব্রেকিং সিস্টেম আছে। সামনের চাকার 240mm এর ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের চাকায় 130mm ড্রাম ব্রেক রয়েছে। আশা করা যায় যে এই ধরনের টায়ার এবং ব্রেকিং ভাল গ্রিপ এনে দিবে এবং রাইডার বেশ আরামের সাথে রাইড করতে সক্ষম হবে।
শেষ কথা
হোন্ডা সর্বদা চেষ্টা করে যে তাদের গ্রাহকদের হাতে ভাল মানের এবং আপডেট ফিচার সমৃদ্ধ বাইক তুলে দেওয়া এবং তারা ইঞ্জিন তৈরিতে কোন ঘাটতি রাখে না যার ফলে তারা এপর্যন্ত গ্রাহকদের মন জয় করেছে এবং গ্রাহকরা হোন্ডার প্রতি আস্থা রেখেছে। তারা সম্প্রতি ১১০ সিসি হোন্ডা লিভো বাজারে নিয়ে এসেছে। হোন্ডা লিভো বাজারে চারটি বিভিন্ন কালারে পাওয়া যাবে সেগুলো হল- Aathletic Blue Metallic, Pearl Amazing White, Imperial Red Metallic and Dark Black ।এছাড়াও বাইকটির দুটি মডেল রয়েছে একটি হল self-drum-alloy এবং আরেকটি হল self-disc-alloy। সুতরাং বাইকটির আউটলুক, ইঞ্জিন আউটপুট, এবং আধুনিক ফিচার সব কিছুই বেশ আপডেটেড। বিশেষ করে কমিউটার লাভার দের বাইকটি বেশী নজর কাড়বে। আশা করা যাচ্ছে যে ১১০ সিসির এই বাইকটি লোকাল মার্কেটে বেশ ভাল প্রভাব ফেলবে।