হোন্ডা এমন একটি নাম, যা বিশ্বাস এবং গুণগতমানকে সকলের সামনে, বিশেষত বাইকারদের সামনে উপস্থাপন করে। বাংলাদেশের বাজারেও হোন্ডার সেই খ্যাতি বজায় রয়েছে। ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা অনুযায়ী হোন্ডাকে পিছনে ফেলে রাখা বেশ কঠিন। বাংলাদেশের নিরিখে গতানুগতিক কমিউটার বাইক এখনও জনপ্রিয়। রাইডারদের জন্য হোন্ডার এই সেগমেন্টে বেশ দীর্ঘ লাইনআপ বরাবরই রয়েছে এবং হোন্ডা লিভো তাদের মধ্যে একটি। হোন্ডা লিভো আসার পরে এই বাইকটির আকর্ষণীয় ডিজাইন, ফিচার এবং পারফরম্যান্সের কারণে সবার মধ্যে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা দেখা গিয়েছিল এই বাইকের। সম্প্রতিএই বাইকটিরএকটি নতুন গ্রাফিক্স সম্পন্ন ডিস্ক ভার্শন বাজারে নিয়ে এসেছে হোন্ডা। ডিস্ক ব্রেকিং এবং নতুন কসমেটিক পরিবর্তনগুলির সাথে এই বাইকটি সারা দেশে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক হোন্ডা লিভোর এই ডিস্ক ভার্শনে নতুন কী কী রয়েছে।
হোন্ডা লিভো ডিস্কে নতুন যা যা থাকছেঃ
১। এজি ফ্রন্ট লুক এবং ডাইনামিক গ্রাফিক্স:
লিভোবাজারে প্রথম থেকেই একটি আকর্ষনীয় ডিজাইনের সাথে উপস্থিত ছিল, সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন কালার স্কিম বাজারে আসে। নতুন এই ডিস্ক ভেরিয়েন্টটি সামনে থেকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলা হয়েছে। এই নতুন লিভো বাইকের হেডলাইট এবং ডিটেইল্ড এয়ার ডাক্ট ডিজাইন বাইকটিকে কোরে তুলেছে আরো স্টাইলিস। এছাড়াও নতুন ডিস্ক ভেরিয়েন্টের জন্য দেয়া হয়েছে নতুন গ্রাফিক্স এবং 3 ডি উইং মার্ক। সব কিছু মিলিয়ে এই বাইকের নতুন গ্রাফিকাল পরিবর্তনগুলো এই বাইকটিকে করে তুলতে পারে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।
২। স্ট্রং রেয়ার এপিয়ারেন্স এবং এন্টিসিং মাফলার:
নতুন ডিজাইনকৃত লিভো বাইকের টেইল ল্যাম্প এবং গ্র্যাব রেইল এই বাইকটিকে বেশ আকর্ষন দিবে পেছনের লুকের ক্ষেত্রে।পাশাপাশি, সাইড আউটলুকের ক্ষেত্রে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যাবহার করা হয়েছে টু পিস আধুনিক ডিজাইনের মাফলার বা এক্সহষ্ট পাইপ।
৩। 5-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল রেয়ার সাসপেনশনঃ
আগের মডেলটির পিছনের দিকে ছিল রেগুলার ডুয়াল শক সাসপেনশন, তবে হোন্ডা এই নতুন লিভো বাইকের জন্য ব্যাবহার করেছে 5-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল স্প্রিং লোডেড হাইড্রোলিক সাসপেনশন। এই ধরণের সাসপেনশন যেকোনধরণের রাস্তায় আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করে। সামনে টেলিস্কপিক ফর্ক সাস্পেনশনের ব্যাবহার রয়েছে এই বাইকে, যা আগের মডেলেও দেখা গিয়েছে।
৪। ডিজিটাল অ্যানালগ মিটার:
লিভোর পূর্ববর্তী মডেলটি সম্পূর্ণ অ্যানালগ মিটার কনসোল সহ বাজারে ছিল। তবে এই বাইকের জন্য হোন্ডা ব্যাবহার করেছেডিজিটাল অ্যানালগ মিটারের কম্বিনেশন, যাতে করে ব্যবহারকারীরা ডিজিটাল অ্যানালগ উভয় ফিচারই মিটারটিতে ব্যবহার করতে পারেন।বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফিচার যেমন লো-ফুয়েল ইন্ডিকেটর,স্পিডোমিটার, টার্ন ল্যাম্প ইন্ডিকেটর, ঘড়ি ইত্যাদি সকল ফিচারেরই দেখা মিলবে এই মিটারে।
৫। মেইনটেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারি এবং ভিসকস এয়ার ফিল্টার:
হোন্ডা ব্যবহারকারীর জন্য এই বাইকে রাখা হয়েছে মেইনটেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারি, যাতে তারা বাইকটি ব্যবহার করার সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, পাশাপাশি ভিসকস ফিল্টারথাকার কারনে বাইকের পারফর্মেন্স আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আসা করা যায়। এই বাইকের নতুন 12V 3Ah(এমএফ) ব্যাটারি 12V 35 / 35W বাল্ব টাইপের হেডল্যাম্পসহ অন্যান্য লাইটগুলো পরিচালিত হবে।
৬। লো রোলিং রেজিস্ট্যান্স টিউবলেস টায়ারঃ
কমিউটার বাইক হিসাবে প্রত্যেকেই নিজের বাইক থেকে ভাল মাইলেজ চায়। এই ক্ষেত্রে, হোন্ডা লো রোলিং রেজিস্ট্যান্স টায়ারকে স্থাপন করেছে লিভো ডিস্ক ভেরিয়েন্টের জন্য, যা জ্বালানী খরচ কমাতে সক্ষম। উভয় দিকের জন্য তারা এবার টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করেছে এবং সেগুলি 80 / 100-18মাপের।
হোন্ডা লিভো ডিস্ক ভেরিয়েন্টের অন্যান্য ফিচারসঃ
বডি ডাইমেনশনঃ
লিভোর নতুন ডিস্ক ভেরিয়েন্টের বডি ডাইমেনশন আগের মডেলের মতোই রয়েছে এবং এটি ডাইমোন্ড টাইপ ফ্রেমের উপরে তৈরী।আমরা যদি ডিস্ক ভেরিয়েন্টের বডি ডাইমেনশনের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে এই বাইকে রয়েছে ২০২০ মিমি দৈর্ঘ্য, ৭৩৮ মিমি প্রস্থ এবং ১০৯৯ মিমি উচ্চতা। হুইলবেস এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স যথাক্রমে ১২৮৫ মিমি এবং ১৮০ মিমি রয়েছে। এই বাইকের জন্য সীট হাইট রাখা হয়েছে ৮০০ মিমি। ফুয়েল ট্যাঙ্ক ৮.৫ লিটার এবং এই যাবতীয় পরিমাপের সাথে ডিস্ক ভেরিয়েন্টটির ওজন ১১১ কেজি।
ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশনঃ
লিভোর ডিস্ক ভেরিয়েন্টটি হন্ডা ইকো টেকনোলজি (এইচইটি) সম্বৃদ্ধ, যা এখন সর্বশেষতম ইমিশন সিস্টেমের সাথে মিলিত হয়েছে। এছাড়া যদি ইঞ্জিনের স্পেসিফিকেশনের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে রয়েছে ১০৯.১৯ সিসি এয়ার কুলড, 4 স্ট্রোক, বিএস-IV ইঞ্জিন যা ৮.৪৩ পিএস (৮.৩১ বিএইচপি) @ ৭৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ৯.০৯ এনএম @৫০০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক উৎপাদন করে। হোন্ডার মতে এই ইঞ্জিনটি কমপক্ষে ৮৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে চলবে এবং জ্বালানী খরচও হবে বেশ কম।4-স্পিড গিয়ারবক্স রাখা হয়েছে ট্রান্সমিশনের জন্য। ইঞ্জিনটি অন করার জন্য রয়েছে ইলেক্ট্রিক এবং কিক স্টার্ট উভয় অপশন।
ব্রেক:
এবার আসি আসল কথা নিয়ে, নতুন লিভো মডেলটিতে সামনে ডিস্ক ব্রেক দেয়া হয়েছে এবং এ কারণেই এটির নামকরণ করা হয়েছে ডিস্ক ভেরিয়েন্ট। ২৪০ মিমি ডিস্ক প্লেট দেয়া হয়েছে সামনের অংশে এবং পিছনের দিকটিতে রয়েছে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেকস।
শেষকথাঃ
হোন্ডা লিভো ডিস্ক ব্রেক ভেরিয়েন্টটি অ্যাথলেটিক ব্লু মেটালিক, ইম্পেরিয়াল রেড মেটালিক এবং ম্যাট এক্সিস গ্রে এই তিনটি আকর্ষণীয় কালার স্কীমে পাওয়া যাবে। লিভোর আগের রেকর্ডগুলি পর্যবেক্ষণ করে আমরা ধরে নিতে পারি যে এই বাইকটিও একটি মাস্টার পিস। নতুন যুক্ত হওয়া ফিচারগুলো এবং গ্রাফিক্সের কারণে এই বাইকটি সম্ভবত আরও ভাল পারফর্ম করতে পারে। এখন নতুন হোন্ডা লিভো ডিস্ক ভেরিয়েন্টের পারফর্মেন্স এবং এর গ্রহনযোগ্যতা নির্ভর করছে সম্পুর্ন এর ব্যাবহারকারীদের মতামতের উপর।