হোন্ডা ড্রিম নিও এবং হোন্ডা লিভো দুটোই স্বনামধন্য ব্যান্ড হোন্ডার প্রডাক্ট। এই বাইক দুটির ইঞ্জিন ক্ষমতা, টায়ার ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় একে অপরের সাথে মিল রয়েছে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার অমিল রয়েছে যা এর পারফরমেন্সে ভিন্নতা নিয়ে আসবে এবং রাইডারকে এই দুইটা বাইক দুই ধরনের অনুভূতি দিবে। আমরা যদি বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটের কথা চিন্তা করি তবে দেখা যাবে যে মোটরসাইকেলের চাহিদা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ এখন নামীদামী কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের সাধ্যের মধ্যে তাদের বাইকে সব টুকু দেবার চেষ্টা করছে । ১১০ সিসি সেগমেন্টের মধ্যে যদি আমরা ভালো ফিচারস সমৃদ্ধ, ব্রান্ড ভ্যালূ, সহনীয় দাম ইত্যাদি বাইক খুঁজি তাহলে অবশ্যই হোন্ডা লিভো এবং হোন্ডা ড্রিম নিও এই দুটি বাইকের কথা উল্লেখ করতে হয়। যেহেতু একই সেগমেন্টের মধ্যে একই ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক তাই মাঝে মাঝে গ্রাহকদের দুটো বাইক এর মধ্যে একটি বেছে নিতে একটু হিমশিম খেতে হয়। তাই আমরা গ্রাহকদের কে আরও সহজভাবে বুঝানোর জন্য হোন্ডা লিভো এবং হোন্ডা ড্রিম নিও এই দুইটি বাইকের বিশেষ পার্থক্য তুলে ধরবো।
ডিজাইন
বাইকের ডিজাইন বয়সভেদে বিভিন্ন রাইডারের কাছে বিভিন্ন রকম লাগতে পারে। কেউ কেউ ভালো ডিজাইনের বাইক চান আবার কেউ সাধারণ ডিজাইনের বাইক কিনতে চান। প্রথমে আসি হোন্ডা লিভোর আউটলুকস নিয়ে। হোন্ডা লিভো ১১০ বাইকটির আউটলুক মাস্কুলার এবং বেশ আধুনিক। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে ১৫০ সিসির বাইকে মাস্কুলার বডি কিট থেকে থাকে ঠিক তেমনিভাবে হোন্ডা লিভো ১১০ সিসির বাইকে মাস্কুলার বডি কিট ব্যবহার করা হয়েছে যা এর লুকস কে আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে। এছাড়া হেডল্যাম্প, টেলল্যাম্প সব কিছুতেই হোন্ডা লিভো দেখতে বেশ আধুনিক। তাই তরুণদের কাছে ১১০ সিসির সেগমেন্টে প্রথম পছন্দ হবে হোন্ডা লিভো।
অন্যদিকে হোন্ডা ড্রিম নিও বাইকটির লুকস সাধারণ এবং এটি বেশিরভাগ মাঝারি কিংবা তার থেকে একটু বেশি বয়সের রাইডার পছন্দ করে থাকেন। ড্রিম নিও তে তেমন কোন মাস্কুলার কিট ব্যবহার করা নাই কিন্তু আধুনিক ডিজাইনের কিছু গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়েছে যা এর সাধারণ লুক দিয়ে রাইডারকে আকৃষ্ট করে।
তাই ডিজাইন ও লুকস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে তরুণদের বেশি আকৃষ্ট করবে হোন্ডা লিভো এবং মাঝারি কিংবা তার থেকে বেশি বয়সের রাইডারদের আকৃষ্ট করবে হোন্ডা ড্রিম নিও। অতএব দুটো বাইকের লুকের গুরুত্ব রয়েছে।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিনের দিক দিয়ে হোন্ডা লিভো এবং হোন্ডা ড্রিম নিও একই ফিচারস বহন করে। হোন্ডা লিভো তে ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী ১০৯.১৯ সিসি এয়ার কুল্ড,৪ স্ট্রোক সিংগেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন যা ৮.২৫ বিএইচপি @ ৭৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ৮.৬৩ এনএম@ ৫৫০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। একই সাথে হোন্ডা ড্রিম নিও তে এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা একই পরিমাণ শক্তি যোগাতে সক্ষম। তাই ইঞ্জিনগত দিক থেকে লিভো এবং ড্রিম নিও তে কোন অমিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
টায়ার
টায়ারের দিক থেকে হোন্ডা লিভো এবং ড্রিম নিও একই ফিচারস বহন করে। হোন্ডা লিভো ও ড্রিম নিও উভয় বাইকেই সামনে ৮০/১০০-১৮ মিমি এবং পেছনে ৮০/১০০-১৮ মিমি টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। তাই টায়ারের দিক থেকেও এই দুটি বাইকের কোন অমিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
ডাইমেনশন ও ওজন
আমরা জানি যে ভালো ডাইমেনশন এবং ওজনের ফলে বাইকের পারফরমেন্স আরও ভালো হয়। বাংলাদেশের রাস্তা বিবেচনায় হোন্ডা লিভোর ডাইমেনশন রয়েছে লম্বায় ২০২০ মিমি, চওড়ায় ৭৪৬মিমি এবং উচ্চতায় ১০৯৯ মিমি অন্যদিকে হোন্ডা ড্রিম নিও বাইকের ডাইমেনশন রয়েছে লম্বায় ২০০৯ মিমি, চওড়ায় ৭৩৭ মিমি এবং উচ্চতায় ১০৭৪ মিমি। এদিকে ওজন একটা বাইকের সঠিক রাইডিং এবিলিটি ও ব্যালেন্স নির্ভর করে। ওজন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে ড্রিম নিও এর ওজন ১০৭ কেজি এবং হোন্ডা লিভো ১১১ কেজি। তাই ডাইমেনশন ও ওজনের দিক থেকে হোন্ডা ড্রিম নিও এর থেকে একটু হলেও ভালো পারফরমেন্স পাওয়া যাবে হোন্ডা লিভো তে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে হোন্ডা লিভো এবং ড্রিম নিও তে একই বডি ফ্রেম অর্থাৎ ডাইমন্ড বডি ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে।
ব্রেকিং
বাইকের কন্ট্রোল, স্পীড নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি নির্ভর করে সে বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমের উপর। ব্রেকিং এর দিক দিয়ে হোন্ডা ড্রিম নিও হোন্ডা লিভোর থেকে কিছুটা পিছিয়ে। লিভো তে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪০ মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং হোন্ডা ড্রিম নিও তে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক। কিন্তু হোন্ডা লিভোর ড্রাম ভার্সন বাজারে বিদ্যমান তাই সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ড্রিম নিও ড্রাম ব্রেক এবং লিভো ড্রাম ব্রেক বাইকের পারফরমেন্স একই । মোট কথায় বলা যায় যে হোন্ডা লিভো ড্রাম ব্রেক ড্রিম নিও এর থেকে ব্রেকিং এর দিক থেকে অধিক পারফরমেন্স দিতে সক্ষম।
আমরা আমাদের উপরিউক্ত পর্যালোচনায় ড্রিম নিও এবং লিভো বাইকের ভিন্নতা খুঁজে বের করেছি। এখন গ্রাহকদের বিষয় তারা তাদের চাহিদা মত কোন বাইকটি গ্রহন করবেন। তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে যে সর্বদা উন্নতমানের ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক ব্যবহার করা।