হোন্ডা সিবি শাইন ১২৫সিসি ৪৪০০০কিমি রাইড মোটরসাইকেল রিভিউ - জয়নাল আবেদীন

যাতায়াতের সুবিধার্থে আমাদের দৈনিন্দন জীবনে মোটরসাইকেল এর গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে যে কোন স্থানে যাওয়া সম্ভব। এটি সাহায্যকারী বাহন হিসেবেও আমাদের জীবনে অনেক ভুমিকা পালন করে। মোটরসাইকেল কিনার ইচ্ছা ছিল আমার ছোটবেলা থেকেই। আর্থিক সমস্যা ও বিভিন্ন কারণ বসত কিনতে পারি নাই। তবে আমি চাকুরি পাবার পরে সেই ইচ্ছাটি পূরণ হয়। আমার পরিচয় আমি জয়নাল আবেদীন। পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী। আমি একটি ওষুধ কোম্পানি চাকুরী করি। আমার এই চাকুরীর কাজের জন্য সব সময় এখানে ওখানে যেতে হয়। সঠিক সময়মত কোম্পানির কাজ করতে না পারলে অনেক সমস্যায় পড়ে যেতাম। বিশেষ করে যাতায়াতের সমস্যাটাই বেশি হত। ঠিক তখনই মোটরসাইকেল কিনার সিদ্ধান্ত নিই। আমি যাতায়াতের জন্যই মূলত এই মোটরসাইকেলটি কিনি। আমার মোটরসাইকেল এর নাম হুন্ডা সাইন ১২৫ সিসি। আমি এই মোটরসাইকেলটি “মিঠু হুন্ডা” বানেশ্বর বাজার, পুঠিয়া, রাজশাহী শোরুম থেকে কিনেছি। হুন্ডা সাইন ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটি আমার জীবনের প্রথম বাইক। এটি আমি প্রায় তিন বছর যাবত ব্যবহার করছি। তিন বছরে আমি প্রায় ৪৪,০০০ কিমি পথ অতিক্রম করেছি। আমার এই মোটরসাইকেলটি আমি নিজে এক হাতে চালাই। এই জন্য এখন পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ এর ইঞ্জিনে কোন প্রকারের সমস্যা অনুভব করি নাই। তবে তিন বছরের মধ্যে আমি এক বার মাত্র ব্যাটারি পরিবর্তন করেছি। এই মোটরসাইকেলটি এখনো চালালে মনে হয় এর ইঞ্জিনের শক্তি বিন্দু মাত্র কমে নাই। অর্থাৎ আমার এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স অসাধারণ। আজকের আমার এই রিভিউটি যদি শেষ পর্যন্ত সবাই পড়েন তাহলে জানতে পারবেন আমার এই হুন্ডা সাইন ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটি কতটা ভাল। আশা করি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাই সাথেই থাকবেন।

আমি যখন বানেশ্বর বাজারের শোরুমে যাই তখন আমি চিন্তা করি মোটরসাইকেল এর ডিজাইন আমি কিভাবে পছন্দ করব। এই সময় একটু বিভিষীকায় পড়ে যাই। শোরুমে ঢোকবার পরে হুন্ডা সাইন ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল এর দিকে এক বার চোখ পড়েই আমি আর চোখ ফিরাতে পারি নাই। আমি তখনই সাথে সাথে এই মোটরসাইকেলটি কিনার সিদ্ধান্ত নিই। এই মোটরসাইকেল এর ডিজাইনটা অবশ্য নজরকড়াই ছিল এবং এটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই হবে বলে মনে করি। আমি মোটরসাইকেলটি বাসায় নিয়ে আসার পরে প্রথমে মাইলেজ চেক করি। শোরুম থেকে আমাকে বলেছিল ১ লিটার তেলে ৫৫-৬০ কিমি পথ চলবে। নতুন কালে আমি ঠিক এই মাইলেজই পেয়েছি। কিন্তু বর্তমানে ৫০ কিমির মত মাইলেজ পাচ্ছি। তবে এই মাইলেজ নিয়েও আমি অনেক সন্তুষ্ট। কেননা, ১২৫ সিসি মোটরসাইকেল থেকে ৫০ কিমি মাইলেজ পাবা মানে অনেক কিছু।

মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন হল তার প্রাণকেন্দ্র। ইঞ্জিন যদি ভাল না হয় তবে সেই মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সেই দিক থেকে ৩ বছরে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে কোন সমস্যা না হওয়াতে আমি খুব সন্তুষ্ট। আমার মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। এছাড়া এটি অনেক শক্তিশালী এবং এর পারফরমেন্স অসাধারণ।

মোটরসাইকেলটির সিট বেশ নরম হওয়ায় আমি খুব আরামের সাথে দীর্ঘক্ষণ বসে চালাতে পারি। এর হ্যান্ডেলবারটিও দেখতে অনেক সুন্দর, যা রাইড করার সময় ভাল অনুভূতি এনে দেয়। এই মোটরসাইকেল এর ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভাল, এছাড়া সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকায় কন্ট্রোল করতে আমার অনেক সুবিধা হয়। এর চাকার গ্রিপ গুলো ভাল হওয়ায় তেমন একটা স্লিপ করে না। মোটরসাইকেল এর সাসপেনশন অনেক ভাল। কাচা রাস্তাতেও খুব বেশি পরিমানে ঝাঁকুনি অনুভব করি না। তবে আগে থেকেই রাতে হেড লাইটে আলো একটু কম হয়। তবে এর সুইচ গুলো দেখতে খুব সুন্দর এবং এটি ব্যবহার করতে আমার কোন সমস্যা হয় না। এর লুকিং গ্লাস দুটো থেকে আমি পিছনে রাস্তা পরিষ্কার দেখতে পাই। এই মোটরসাইকেলটি আমি হাই রোডে সর্বোচ্চ ৯৫ গতিতে তুলেছি। ৯০ এর উপরে গতি তুললে মোটরসাইকেলটি ভাইব্রেট করে। এছাড়া আমি একদিনে প্রায় ১৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘ যাতায়াতে আমার খুব একটা সমস্যা হয় না। এছাড়া আমি আগেও বলেছি যে, হাই স্পিডে মোটরসাইকেল চালানো আমি পছন্দ করি না। মিডিয়াম ভাবে মোটরসাইকেল চালালে দূর্ঘটনার হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যায়। যদিও দূর্ঘটনা আগে থেকে বলে আসে না।

আমি যখন এই মোটরসাইকেলটি কিনি তখন এর দাম অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে দামটা অনেক কম। তবে তখন দাম বেশি থাকলেও এই পণ্যের মান ও গুণাগুণ অনেক ভাল ছিল। এজন্য আমি দাম নিয়ে খুব একটা অসন্তুষ্ট না। তবে এখন দাম কমাতে এই মোটরসাইকেল বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।



ভাল দিকঃ ১/ ডিজাইন খুব ভাল, ২/ বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত, ৩/ ইঞ্জিনের পারফরমেন্স ভাল, ৪/ সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর, ৫/ তেল খরচ কম, ৬/ সিটিং পজিশন ভাল, ৭/ চাকার গ্রিপ গুলো ভাল, ৭/ এই মোটরসাইকেল এর কন্ট্রোল ও ব্রেক অনেক ভাল, ৮/ সাসপেনশন ভাল, ৯/ এর হ্যান্ডেলবার আমাকে ভাল অন
খারাপ দিকঃ ১ / বেশি গতিতে মোটরসাইকেল ভাইব্রেট করে, ২/ হেড লাইটে আলো কম হয়, ৩/ আগে দাম বেশি ছিল।

পরিশেষে বলতে চাই, ১২৫ সিসির মধ্যে যদি কেউ মোটরসাইকেল কিনতে চান তাহলে এই মোটরসাইকেলটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। আশা করি আমার মত আপনারাও ভাল অনুভূতি পাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

All HONDA bike price in bd

Honda CB Shine