প্রায় ১ বছর ৩ মাস এবং ১৮০০০ কিমি বয়স্ক আমার Honda CB 150R streetfire টা কিনেছিলাম Hafsa Mart এ প্রি বুকিং এর মাধ্যমে। তার আগে উইংস বিডি অফিসে অশান্তি লাগিয়ে দিয়েছিলাম- বাইক কবে আসবে, কবে আসবে বলে চেঁচামেচি করে! কারণ, এই বাইকটার ম্যাট ব্ল্যাক-রেড স্পেশাল এডিশনটা আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছিল! প্রথম দেখাতেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এসেছিল- কি বাইকরে সালা! হাহাহা...তার ওপর Honda ব্র্যান্ড নেমটা তো আলাদা একটা ব্যাপার সব সময়ই!
আগেই বলে নিই, ফেয়ারড বাইক আমার কখনোই খুব একটা ভাল লাগে না, তাই দেখনদারিটা একেক জনের কাছ্র একেক রকম। তবে স্ট্রীট ফায়ার নিয়ে রাস্তায় গত একটা বছরে সব থেকে বড় সাড়াটা পেয়েছি এর লুক নিয়ে। বাইকটার লুক সব দিক থেকেই পারফেক্ট- না খুব পাংকু, আবার একেবারেই লেবেন্ডিস না! এর লুকে একটা অন্যরকম স্মার্টনেস আছে বলেই আমার মনে হয়, বিশেষ করে বাইকটার সাইড ভিউ এবং অ্যাঙ্গেল ভিউ। তবে বাইকটায় আর যাই থাক, ইঞ্জিন কিল সুইচ-হেডলাইট অন/অফ সুইচ-বিপার ইত্যাদি দরকারি কিছু বস্তু অনুপস্থিত! এইটা হোন্ডা কেন করে আমি বুঝি না! অবশ্য স্পিডোমিটারটা কিন্তু দারুণ এবং ইউনিক এই বাইকের!
স্ট্রিটফায়ারের ইঞ্জিন কনফিগারেশন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না। সবাই তো এর বড় ভাই CBR সম্পর্কে জানেনই! একে naked CBR ও বলা যায় তাই। ওয়াটার কুলড EFI ইঞ্জিন যার ecu সিস্টেমটা PGM. মোটামুটি ৮-১০টা সেন্সর কাজ করে এর PGM-FI সিস্টেমে, যে কারণে খুব ক্রিটিক্যাল ওয়েদার কন্ডিশন বা নিম্ন মানের ফুয়েল পেলেও এই ইঞ্জিন কাজ চালিয়ে নেয়। তবে এই সেন্সর গুলো আমাদের কথিত বাংলা ভাষায় 'বেশি বুঝে' টাইপের হওয়ার কারণে অনেকক সময়ই যা করতে চাই তা হয় না! হাহাহা। তবে এই সেন্সর গুলো ইঞ্জিন ফাংশান স্মুথ করার সাথে সাথে আরেকটা যে বড় সাপোর্ট দেয় সেটা হল মাইলেজ। এই পাওয়ার কনফিগারেশনের একটা ইঞ্জিন যদি শহর এলাকাতেই ৪২-৪৫ কিমি মাইলেজ দেয়, তাহলে ব্যাপারটা অবশ্য ওয়াও! তাই না?
আমি ৯০০ টাকার তেলে একদিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম আপ-ডাউন করেছি এবং ফেরার পথে পুরোটাই বৃষ্টি, তারসাথে বাইকারদের জন্য ভয়াবহ ক্রস উইন্ড মোকাবেলা করে; একজন পিলিয়ন ছিল সাথে এবং আমাদের সম্মিলিত ওজন, মাশা আল্লাহ পৌণে দুইশ কেজি তো হবেই! ঢাকায় ল্যান্ড করে আমি প্রথেমেই এই Honda CB 150R streetfie কে একটা স্যালুট ঠুকেছি এই চরম বিরুদ্ধ পরিবেশে দুই দুইটা বাচ্চা হাতি ক্যারি করেও পুরোটা সময় আমাকে 'কোন ব্যাপারই না' ফিলিংস দেয়ার জন্য! প্রত্যেকটা কর্ণারিং, কার্ভে ক্রস উইন্ডের বিরুদ্ধে পিলিয়ন সহ এর ব্যালেন্স, একটানা চলার পরও পারফরম্যান্সের এতটুকুও কমতি না পড়া, বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় টায়ারের গ্রিপ এবং nissin ব্রেকিং সিস্টেমের পারফরম্যান্স দেখে আমার পিলিয়নই বারবার বলছিল- এইটাই শালার হোন্ডা!( সে অ্যাপাচির প্রাক্তন রাইডার, বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত! হাহাহা)। হেডলাইটটার লো বীম হাইওয়ে রাস্তার পুরো সাড়ে ৯ মিটার উইডথ কাভার করে থাকায় অন্যরকম কনফিডেন্স পেয়েছি নাইট রাইডিং এ, হাই বীমটাও দারুণ! তবে লো বীমের ফোকাসিংটা আমাদের দেশের রাস্তা অনুযায়ী আরেকটু কাছে হলে ভাল হত। পিলিয়ন সহ 118kmph স্পীড তুলেছি without any extra effort! তবে আরেকদিক একা একা কুমিল্লা থেকে আসার পথে 138kmph স্পীড তুলেছি, এটাই আমার সর্বোচ্চ, এর থেকে বেশি আর চেষ্টা করিনি কখনো। হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৫৫, সিটিতে ৪২-৪৫।
মাইলেজের বিষয়ে একটা ব্যাপার আছে। ওই যে বলেছি না, বেশি বুঝে! 5-5.5 rpm এ গিয়ার শিফট করলে যে মাইলেজ পাবেন, 7k তে শিফট করে চালালে আরেকটু কম পাবেন! আবার ইঞ্জিন অয়েলটাও একটা ফ্যাক্টর। আমি Motul 7100 দিয়ে ৪৫+ ও মাইলজ পেয়েছি, আর 300v দিয়ে পেয়েছি ৪০এর মত; কিন্তু 300v তে পারফরম্যান্সটা হয় জটিল! দুটোই ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল।
কন্ট্রোলিং-হ্যান্ডলিং-কম্ফোর্ট -সাসপেনশন নিয়ে বেশি শব্দ খরচ করব না, জাস্ট বলব- ওয়াও! তবে, পিলিয়নের জন্য এই বাইকে বেশিক্ষণ বসে থাকাটা একটা শাস্তি!
আরেকটা জটিল বিষয় এই বাইকটার, সেটা হল ব্যাংক অ্যাঙ্গেল সেন্সর। এর কাজ হল, কর্ণারিং এর সময় আপনার আইডিয়ায় সামান্য ভুল হয়ে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বিপজ্জনকভাবে বেশি হেলে পড়লে ইঞ্জিন অটোমেটিক শাট ডাউন হয়ে আপনাকে ব্যালেন্সে আসার রাস্তাটা সহজ করে দেবে যেটা আমি ফেস করেছি ভুলতা হাইওয়ের কোন রকম রোড মার্কিং বিহীন এক মোড়ে! একেবারে জানে বেঁচে গেছি, জাস্ট এই ব্যাংক অ্যাঙ্গেল সেন্সর ফাংশনের কারণে। এই ব্যাপারটা বাংলাদেশের রাস্তায় চলা আর কোন বাইকে নেই!
গুণগান অনেক হল, এখন কিছু বিষোদগার করব! পাস লাইট, হেডলাইট অন/অফ সুইচ আর ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই সে কথা তো বলেছিই। আরেকটা যে বিষয় সেটা হল, এর জটিল রকম ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং সিস্টেম। আপনি সহজে এই বাইকে এক্সট্রা লাইটিং করতে পারবেন না; অবশ্য হেডলাইটটা এত ভাল যে এরকম কিছুর প্রয়োজন হয় নি। কিন্তু, পাস লাইট সুইচ ইনস্টল করতে গিয়ে বা সিকিউরিটি সিস্টেম ইনস্টল করার সময় অ্যালার্মের সাথে ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালাতে সম্পূর্ণই ব্যার্থ হয়েছে মেকানিক, শুধু এর জটিল ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং এর কারণে। খুব দক্ষ কাউকে ছাড়া এর ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমে হাত দেয়াটা বিপজ্জনক। আমি কোন রকম হেডলাইট অন/অফ সুইচ লাগিয়ে চলছি, ওটাই দিনের বেলা আমার পাসলাইট সুইচ! হাহাহা..
আরেকটা খারাপ দিক ছিল এর স্টক চেইন স্প্রোকেট সেট আর টাইম চেইন অ্যাডজাস্টার! দুটোই প্রচুর শব্দ উৎপাদনকারী ছিল! তারপরও সেই চেইন স্প্রোকেট আমি ১৫০০০ কিমি পর্যন্ত চালিয়েছি। আর টাইম চেন অ্যাডজাস্টার ইঞ্জিন ঠান্ডা অবস্থায় টকটক শব্দ করলেও এর জন্য মাইলেজ-পারফরম্যান্সে কোন সমস্যা হয় নি কখনো, তবুও শব্দটা বিরক্তিকর লাগে বলেই পালটে নিয়েছি।
এর এয়ার ফিল্টারটা নোংরা হয় একটু দ্রুতই (৫-৬হাজার কিলো)!
বল রেসারটা আমাদের দেশের রাস্তার পাল্লায় পড়ে বেশিদিন টেকার মত না! তবে এটাও সামলে নিয়েছে ওই টেম্পার চলে।যাওয়া বল রেসারটা!
এই ১৮০০০ কিমি এ ম্যান্ডেটরি চেঞ্জ হিসেবে ফ্রন্ট ব্রেক প্যাড আর এয়ার ফিল্টারই আছে। সাথে চেন স্প্রোকেট আর বল রেসার। এছাড়া ৩০০০ কিমি পরপর করা রেগুলার সার্ভিসিং ছাড়া আর মেজর কোন সার্ভিসিং এখনো প্রয়োজন পড়ে নি। সব মিলিয়ে আমি বলব, এখন রাস্তায় যে কয়টা প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির বাইক চলছে, তার মধ্যে প্রাইসের হিসেবে এই Honda CB 150R streetfire টা সেরা! কয়েকবার গাড়ির ধাক্কায় পার্কিং অবস্থায় পড়ে গিয়েও এর বডিতে কোন ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নও নেই! body fairing ও যথেষ্ট মজবুত! সব কিছু মিলিয়ে আসলে, এমনি এমনিই বলে না- Honda is Honda!
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। সবাইকে ধন্যবাদ!