বাংলাদেশের রাস্তার অবস্থার উপর ভিত্তি করে দিন দিন দুই চাকার বাহনগুলো অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা পাবলিক যোগাযোগ মাধ্যম পছন্দ করেন না তাদের জন্য মোটরসাইকেল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহন। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো অসহনীয় জ্যাম এড়ানোর জন্য মোটরসাইকেলের বিকল্প নেই বললেই চলে। অনেকেই মোটরসাইকেলে চেপে অফিসে বা বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত করে এতে অনেকাংশেই সময় বেঁচে যায়। আমিও ঠিক সেটাই করি। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অপেক্ষায় না থেকে যে কোন জায়গায় বাইক নিয়ে অনায়াসেই যাতায়াত করি। আমি যাতায়াতের জন্য পূর্বে ব্যবহার করতাম কিওয়ে আরকেএস ১২৫ কিন্তু গত কিছু দিন যাবত ব্যবহার করছি এস্কেপ মেশিন নামে পরিচিত এবং বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি বাইক বেনেলী টিএনটি। এটা আমার জীবনের ব্যবহৃত দ্বিতীয় বাইক। আজকে আমি বেনেলী টিএনটি নিয়ে আপনাদের সাথে এর প্রথম রাইডিং অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।
বেনেলী বাইক কেন কিনলাম ?
টেস্ট রাইড দিয়ে এই বাইকের ব্রেকিং, এক্সেলেরেশন, সাসপেনশন দেখে প্রেমে পড়ে যাই। আর মনে মনে বাইক পরিবর্তনের চিন্তাও করছিলাম। এইটা চালিয়ে যতটা ভালো লেগেছে বাইক শো তে হোন্ডা হরনেট ও রোডমাস্টার রেপিডো চালিয়ে ওতটা ভালো লাগে নি। তাই সব দিক চিন্তা ভাবনা করে এই বাইকটা কিনে ফেলি।
বেনেলীর ইঞ্জিনের পারফরমেন্স
যেহেতু নতুন বাইক ব্রেক ইন পিরিয়ডে আছি তাই ইঞ্জিনের বিষয়টা খুব ভালোভাবে আঁচ করতে পারিনি। আমি ৫ গিয়ারে ৫.৫ আরপিএম এ ৭০ এর মত স্পীডে তুলেছি। কোন ভাইব্রেশন পাইনি এবং বেশি আরপিএম এ আরও স্মুথ হয়ে যায়।
ডিজাইন
পৃথিবী খ্যাত সেরা ডিজাইনের মধ্যে বেনেলীর বাইকের ভালো পজিশন রয়েছে। ১৫০ সিসির এই বাইকটির ডিজাইন অসাধারণ। আমার নেকেড বাইক আগে থেকেই পছন্দ তাই এই বাইকের ডিজাইন দেখে প্রথমেই ভালো লেগে যায়। আমার কাছে ডিজাইন সব দিক থেকে একদম পারফেক্ট লেগেছে।
বিল্ড কোয়ালিটি
যেহেতু আগে এই বাইক বাংলাদেশে আসে নি তাই বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে একটু সন্দিহান ছিলাম। টেস্ট রাইড দেওয়ার সময় এবং পরবর্তীতে তাদের শো-রুমে দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। ট্যাংকি ও সাইড কীট প্লাস্টিকের হলেও এর বিল্ড এক কথায় অসাধারণ এবং দেখেই প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বলে মনে হয়।
সিটিং পজিশন
সিটিং পজিশন এগ্রেসিভ না তাই লং রাইড বা বেশিক্ষন রাইডে কোমর ব্যাথা বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হবে না। কমিউটার ও স্পোর্টস বাইকের মাঝামাঝি সিটিং পজিশন যে কোন রাইডে অনেক ভালো সাপোর্ট দিবে।
হ্যান্ডেলবার
অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের মত নিচু না । সিটি কমিউটিং এর জন্য আদর্শ।
সুইচ
সুইচগুলো আপাতত ভালোই আছে কিছু দিন ব্যবহার করার পর আরও ভালো বোঝা যাবে।
হেডল্যাম্প
বাইকের হেডল্যাম্পের আলো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। লো বিমে সুন্দর ফোকাসড আলো পাওয়া যায়। হাই বিমে চালানো হয়নি তবে টেস্ট করে ভালোই লেগেছে। আর হেডল্যাম্পের আলো থ্রটলের সাথে সম্পর্কিত না হওয়ার ফলে যে কোন গতিতেই ভালো ভাবেই দেখা যায়। এই বাইকের হেডল্যাম্প এলিডি না হওয়ায় হাইওয়েতে নিশ্চিত সমস্যা পড়তে হবে। কেউ যদি রাতে ভ্রমন করে তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে যে অবশ্যই এলিডি ভালো মানের লাইট লাগিয়ে নেওয়া।
গতি
যেহেতু ব্রেক ইন পিরিয়ডে আছি তাই সেভাবে স্পীড দেখা হয়নি। প্রাথমিকভাবে চালিয়ে ধারনা করা যায় অনায়সে ১২০ কিমি/ঘন্টা সম্ভব।
ব্রেক
ব্রেকিং এ আমি বাংলাদেশের নন –এবিএস বাইকের পরেই রাখব। পেছনের ১৩০ সাইজের টায়ার ও সিবিএস ব্রেকিং এর ফলে যে কোন স্পীডে আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্রেকিং করা যায় যেটা আমি অন্য বাইকে পাইনি।
সাসপেনশন
সামনে ইনভার্টেড ফরক ব্যবহার করা হয়েছে যা সব চাইতে ভালো। আর পেছনের মনোশক যথেষ্ট নরম ও আরামদায়ক। আমার আশংকা ছিলো অন্যান্য বাইকের মত প্রথম অবস্থায় মনোশক হার্ড থাকবে কিন্তু এমন কিছু হয় নি। শুরু থেকেই পেছনের সাসপেনশন খুবই নরম।
টায়ার
সামনে ১০০ এবং পেছনের ১৩০ সাইজের টায়ার ভালো গ্রিপ দেয়। আমি এই স্বল্প সময়ে গ্রিপ নিয়ে কোন সমস্যায় পড়িনি।
মাইলেজ
এখন মাইলেজ ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে পারছি না। আরও কিছু দিন পর ধারণা পাওয়া যাবে। তবে ৪০ এর বেশি পাচ্ছি মনে হচ্ছে যা ব্রেক ইন পিরিয়ডের পর আরও বেড়ে যাবে।
সার্ভিস সেন্টার
সার্ভিস সেন্টারের মান নিয়ে স্পীডোজ সব সময় সচেতন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাইকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক সার্ভিস মান নিচে নেমে গিয়েছে। তবে তাদের টপ ম্যানেজমেন্ট এটা স্বীকার করে আগামী ৩ মাসের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
দাম
বেনেলী বাইরের দেশে একটি প্রিমিয়াম বাইক কোম্পানী এবং কোয়ালিটি ও পারফরমেন্স অনুযায়ী দাম একেবারেই হাতের নাগালের মধ্যেই বলা চলে। বাইকটি ইন্ডিয়াতে রিলিজ হবে কিছু দিনের মধ্যে এবং সেখানে এক্সপেক্টেড প্রাইস ১ লাখ রুপি। সে তুলনায় এ দেশে ১ লক্ষ ৮০ হাজার যুক্তিযুক্ত।
ভালো দিক
-অসাধারণ ব্রেকিং
-খুব ভালো কন্ট্রোলিং
-আরামদায়ক সাসপেনশন
মন্দ দিক
-ফুল ডিজিটাল মিটার হওয়া স্বত্বেও কোন ঘড়ি নাই যা আমার জন্য অনেক উপকারী ছিলো।
-কোন ক্রাশ গার্ড নাই তাই সাইড কিট নিয়ে একটু সাবধানে থাকতে হয়।
-বাইকে মুছার কাপড় রাখার কোন জায়গা নাই তবে সাইড কিটে রাখা যায় অবশ্য।
-স্পোর্টস বাইক হওয়ায় পেছনের সিট উঁচু। একারণে বাইকটি দেখতে সুন্দর লাগলেও পিলিয়ন( বিশেষ করে মহিলা) হলে আরাম ফিল নাও হতে পারে।
এই বাইক যারা কিনবেন তাদের কাছে আমার পরামর্শ
বাইকটি কেনার আগে অবশ্যই টেস্ট রাইড দিবেন। আপনার টাকা, আপনার সিদ্ধান্ত। শুধুমাত্র রিভিউ এর উপর নির্ভর করবেন না আবার আশেপাশের মানুষের কথায় সিদ্ধান্ত নিবেন না । তবে এই দামে এরকম কোয়ালিটির বাইক বাংলাদেশে আর নেই। আপনি টাকা থাকলেই যে অন্য বাইক কিনবেন সেটা না, বরং টেস্ট রাইড দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন। আশা করি নিরাশ হবেন না।