কিওয়ে আর কে এস ভার্সন ১ বাইকটি কিনি ১৩ মার্চ ২০১৫ সালে কিওয়ের মেইন শো-রুম স্পীডোজ লিমিটেড থেকে যেটা ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত। আমি বাইক নিয়ে লং ট্যুর সহ বিভিন্ন দৈনন্দিন করে থাকি। এই বাইকটি আমার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে দিয়েছে। এইভাবেই আমি আমার বাইক নিয়ে প্রায় ২ বছর অতিবাহিত করেছি এবং এই ২ বছরে আমি প্রায় ২২ হাজার কিমি রাইড করেছি। এই দুই বছরে আমি এই বাইক চালিয়ে এই বাইক সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেড়ে গিয়েছে । আমি উপযুক্ত সময় নিয়ে এই বাইকটি সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পেরেছি এবং সেই ধারনার আলোকে সময় হয়েছে আজ এই বাইক সম্পর্কে কিছু বলার। আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।
বাইক কেনার পর থেকে আমি প্রতি ১ বছর পরপর বাইকের এনিভারসারি পালন করে থাকি সেটা একটা সেলফির মাধ্যমে এবং লক্ষ্য করে দেখি আমার বাইকের কি কি পরিবর্তন হয়েছে। পরপর ৩ বছর আমি এটা করেছি । আমি বিডি কিওয়ে রাইডারের একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করেছি এবং তাদের সাথে ১০০ কিমি, ২০০ কিমি এবং ৩০০ কিমি এর বেশী ভ্রমন করে বেড়িয়েছি। লং ট্যুরের জন্য আমি মনে করি এটা অনেক ভালো একটি বাইক। আমি পিলিয়ন নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টার মতো রাইড করেছি এবং আমার কাছে এর ইঞ্জিনটা ওভার হিটিং মনে হয় নি।
ব্রেক ইন পিরিয়ড পার করার পর থেকে আমি এই বাইকটি যত চালিয়েছি ততই অবাক হয়েছি। ১০০ সিসির বাইক হিসেবে আমি ৮০ কিমি স্পীডেও কোনো ভাইব্রেশন পায়নি। অন্যান্য ১০০ সিসির বাইকগুলো ৮০ কিমি এর একটু বেশী টপ স্পীড দিয়ে থাকে কিন্তু আমার বাইকটা আমাকে টপ স্পীড দিয়েছে ৯৩ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। আমি ১০ সেকেন্ডে প্রায় ০-৬০ কিমি স্পীডে তুলতে সক্ষম হয়েছি তাও আবার ৮৫ কেজি ওজন,হাফ ফুয়েল ট্যংকার লোড এবং মনোশক সাসপেনশন নিয়ে। আমি মনে করি এই বাইকটা অনেয়াসেই ৭ সেকেন্ডে এই স্পীড তুলতে সক্ষম হবে যদি আবার কখনো সুযোগ পায় তবে এটা আবার করার চেষ্টা করব। বাইকটির যথেষ্ট ভালো কন্ট্রোলিং, ব্রেকিং, গ্রিপিং রয়েছে বিশেষ করে বাইকটিকে খুব অনায়াসেই যে কোন স্পীডে ব্রেক করে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আনা যায়।
আমার বাইক নিয়ে আমি ১০ মে ২০১৬ সালে আমার পুরনো স্বপ্ন পুরন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার কাজিন নাহিদের সাথে আমি ঢাকা- পতেঙ্গা-কক্সবাজার একটা ট্যুর দিয়েছি । ট্যুরটা ছিল প্রায় ৪ দিনের এবং এই চার দিনে আমি প্রায় ১১২৫ কিমি রাইড করেছি। এমনটি একদিনেই আমরা প্রায় ৪৭৫ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। এই সময়ে আমি আমার বাইকের কোনো সমস্যা অনুভব করিনি যেভাবে চালিয়েছি সেভাবেই চলেছে। সেটা ছিলো ১৮ ঘণ্টার একটি জার্নি এবং এই জার্নিটা আমার আজীবন মনে থাকবে।
আমি প্রায়শই চাই আমার বাইকের টপ স্পীড চেক করার কিন্তু বিভিন্ন
কারণে সে আর করা হয় না। আমার বাইকের বয়স যখন ১৩০০০ কিমি তখন একদিন আমাদের রাইডার গ্রুপের এক ভাইয়ের সাথে এয়ার পোর্ট রোডে রেস দেই। প্রথম সুযোগেই আমি আমার বাইক প্রায় ৯৩ কিমি প্রতি ঘন্টায় তুলে ফেলেছিলাম এবং পরের সুযোগে আমি ৯৬ কিমি প্রতি ঘণ্টায় টপ স্পীড তুলেছি। এরপর আমি ভাবলাম যে এবার কিছু হতে চলেছে মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার বাইকের স্পীড ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।
বাইক কেনার পর থেকে এই পর্যন্ত আমি মাইলেজ পাচ্ছি শহরে ৪৫-৫০ কিমি প্রতি লিটারে এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি ৫০-৫৫ কিমি প্রতি লিটারে। আমার বাইকের চাকার সাথে সাথে সময়ের চাকাও ঘুরেছে এবং আমি যখন আমার বাইক নিয়ে প্রায় ১৫০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি তখন আমার কাছে আগের থেকে মাইলেজটা অনেক কম কম লাগছিলো।বাইকের সাইলেন্সার পাইক দিয়ে কালো ধোয়া বের হচ্ছিলো। এটা দেখে আমি অনেক চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং বাইকটি আমি হেড সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে হেড মেকানিক বললেন- পিস্টন ঠিক আছে কিন্তু ভাল্ভটা পরিবর্তন করতে হবে। তখন মোটের উপর প্রায় ১৮০০০ কিমি চালিয়েছি এবং আমি ভাবলাব যে আসলেই এটা পরিবর্তন করা দরকার এর ফলে ইঞ্জিন ভালো থাকবে এবং আমি ঝামেলা মুক্ত থাকবো। কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী তারা আমাকে ফ্রিতে সে সমস্যা সমাধান করে দেয়। এক কথা না বললেই নয় যে কিওয়ের আফটার সেলস সার্ভিস অনেক ভালো এবং মানসম্পন্ন।
বর্তমানে বাইকটি প্রায় ২২০০০ কিমি চলেছে এবং এই দুই কিংবা দেড় বছরে আমার রেগুলার পার্টস যেমন এয়ার ফিল্টার, ব্রেকশু, চেইন সেট পরিবর্তন করা হয়েছে সেই সাথে বড় পরিবর্তন বলতে আমাকে শুধু ইঞ্জিন ভালভটাই পরিবর্তন করতে হয়েছে এছাড়া তেমন আর কোনো বড় সমস্যা হয়নি। আমি এখনও টপ স্পীড ১০০ কিমি এবং ৪৫-৫০ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি। পিকাআপ এর টানটা একটু কমে এসেছে তবে এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়না। বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি অনেক টেকসই। হাতে গোনা কয়েকবার আমার বাইকটি পড়ে গিয়েছি কিন্তু তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই আমি বলবো যে আমি আমার বাইকের পারফরমেন্স নিয়ে অনেক খুশি।
আমি যেহেতু ২ বছর যাবত বাইকটি ব্যবহার করছি তাই বাইকের কিছু দিক আমার কাছে খুব ভালো যেগুলো বাইকের ভালো দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেগুলো হল- তেজী আউটলুক, অনেক স্পীড এবং অসাধারণ কন্ট্রোলিং এর পাশাপাশি অসাধারণ আরামদায়ক একটি বাইক। অন্যদিকে আমি এই বাইকটির কিছু খারাপ দিক খুঁজে পেয়েছি সেগুলো হল- সিট হাইটটা কম, হেডল্যাম্পের আলো কম, পেছনের সাসপেনশনটা তেমন ভালো না। বাইকটির ইঞ্জিন শব্দটা তেমন স্মুথ না কিছু সার্বিক পারফরমেন্স বিবেচনা করলে ইঞ্জিন সাউন্ড আমলে না নেওয়ায়ই ভালো।
সবশেষে আমি বলবো যে এই বাইকটি তাদের জন্য যারা একটা স্টাইলিশ বাইক চান এবং রেগুলার রাইডের পাশাপাশি বাইকটি হাইওয়েতে এবং বিভিন্ন রোড কন্ডিশনের জন্য অনেক মজার একটি বাইক। বাইকটি শহরের মধ্যে আরামে রাইড করার উপযোগী এবং হাইওয়েতেও অনেক ঝামেলাবিহীন একটি বাইক। আপনি এই বাইকের ভালো স্পীডের পাশাপাশি ভালো মাইলেজ পাবেন। সেফটি ফাংশান এবং আধুনিক ফিচার আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিবে।
যারা রেগুলার ব্যবহার করবেন তাদের উদ্দেশ্য বলছি যে বাইক হল একটা মেকানিক্যাল জিনিস তাই পারফরমেন্স নির্ভর করে কোয়ালিটি এবং মেইনটেনেন্স এর উপর। তাই ম্যানুয়াল বুক এবং কোম্পানীর পরামর্শ মতো আপনার বাইকের যত্ন নিন আশা করি আপনি ভালো পারফরমেন্স পাবেন।
সবার রাইডিং আনন্দদায়ক হোক, ধন্যবাদ সবাইকে।