Keeway RKS 100 Test Ride Review by Team MotorcycleValley
চায়না বেশিদিন যায় না। চাইনিজ ব্রান্ড বা চাইনিজ প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রচলিত কথা। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে নামী দামী ব্রান্ডের প্রোডাক্টগুলো অবলীলায় চায়নাতেই তৈরী হয়। তখন আস্থা নিয়ে সমস্যা হয় না। অথবা চাইনিজ ব্রান্ডের অনেক জনপ্রিয় প্রোডাক্ট পৃথিবীব্যাপী অনেক দেশে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর অতি মুনাফা অর্জনের স্বার্থে চায়না থেকে কমদামী পন্য বাংলাদেশে বাজারজাত করায় চাইনিজ পন্য সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারনের মাঝে কিছু ভুল ধারনা জন্মে গেছে। আশার কথা এই যে সময় বদলাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত অনেক চাইনিজ পন্যই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল মার্কেটের অবস্থা অন্য পন্যের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। জাপানিজ বা ইন্ডিয়ান ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্পীডোজ লিমিটডেক কর্তৃক আমদানী এবং বিপননকৃত কীওয়ে ব্রান্ড মোটরসাইকেল বাংলাদেশের মার্কেটে বিগত বছরগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে।
মোটরসাইকেল যে ব্রান্ডেরই হউক, নতুন অবস্থায় তার পারফরমেন্স ভালোই থাকে। ইনজিন সংক্রান্ত বা প্রকৃত সমস্যাগুলো চোখে পড়তে থাকে কিছু সময় ব্যবহার করলে। ঠিক একারনেই মোটরসাইকেলভ্যালীর পক্ষ থেকে ব্যবহৃত কীওয়ে আরকেএস ১০০ মোটরসাইকেলটি টেস্ট ড্রাইভের জন্য নেয়া হয়েছিলো যেটি ইতমধ্যেই প্রায় ৯০০০কিমি পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে। আমরা দেখতে চেয়েছি চাইনিজ পন্য হিসেবে ৯০০০কিমি পথ পাড়ি দেবার পরে তার পারফরমেন্স কেমন হয়ে থাকে। মোটরসাইকেলটি ব্যবহারে আমাদের অভিজ্ঞ একাধিক রাইডারকে ব্যবহার করেছি যারা উচ্চতায়, ওজনে এবং মানসিকতায় ভিন্ন ভিন্ন। ব্যবহার করা হয়েছে বর্ষায় গ্রামের কাদাযুক্ত রাস্তা থেকে শুরু করে চমতকার হাইওয়ে। উদ্দেশ্য ছিলো, একই বাইকের ভিন্নধর্মী রাইডারের থেকে ভিন্ন রকমের মতামত পাওয়া।
আবু সাঈদ মাহমুদ হাসান
উচ্চতা: ৫’ ৮”
ওজন: ৬৮ কেজি
তিনি গ্রামের মাটির রাস্তা, শহরের ব্যস্ততম রাস্তা এবং হাইওয়েতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন। কমিউটার বাইক হিসেবে বাইকটির পারফরমেন্স চমতকার লেগেছে বিশেষ করে টার্নিং রেডিয়াস কম থাকা, ভালো সিটিং পজিশন, আরামদায়ক সাসপেনশন এবং শক্তিশালী ব্রেকিং এর কারনে শহরে বা গ্রামের রাস্তার রাইডগুলো আরামদায়ক মনে হয়েছে। এর সংগে বাইকটির ওজন অন্যতম ভুমিকা রেখেছে। ১০০সিসি বাইক হিসেবে লং রাইডেও আরামদায়ক রাইডিং ফিলিংস ছিলো।শহরে বা গ্রামের রাতের রাস্তায় আলোর ঘাটতি নেই কিন্তু হাইওয়েতে ৫০কিমি এর অধিক স্পীডের সময় আলোর অভাব অনুভব করেছেন।
মিকদাদ বিন হক ইথার
উচ্চতা ৬’
ওজন ৮২ কেজি
আরামদায়ক টুস্টেপ সীট, চমতকার সাসপেনশন এবং ভালো ব্রেকিং তার রাইডিং কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিজাইন খুবই চমতকার। ইলেক্ট্রিক স্টার্ট, পাসিং সুইচ, ডিজিটাল মিটার, গিয়ার ইনডিকেটর, ফুয়েল ইনডিকেটর সহ আধুনিক সকল সুবিধাই এই বাইকে রয়েছে। মন্দের মধ্যে ৫০-৬০কিমি স্পীডে হ্যান্ডেলবারে কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভত হয়।
আসিফ রেজা
উচ্চতা ৫’ ১১”
ওজন ৯০ কেজি
আউটলুক ভাল, ব্রেকিং অনেক সুন্দর যেটা ১০০ সিসি বাইক হিসেবে অন্যান্য কোন বাইকে পাওয়া যায় না, পিলিয়ন এবং রাইডিং পজিশন অনেক কম্ফোরট, আঁকাবাঁকা রাস্তায় অনেক ভাল কন্ট্রোলিং, সাসপেনশন ভাল হওয়ায় ঝাঁকুনি অনেক কম বোঝা যায়। সমস্যার কথা বলতে গেলে ইঞ্জিন পাওয়ার কম যার ফলে স্পীডে তুলতে বেশী সময় লাগে, পিক আপ পাওয়ার আরেকটু বেশী হলে ভাল হতো। গিয়ার শিফটিং স্মুথ নয়।
আজিজুল হাকিম মারুফ
উচ্চতা: ৫’৫”
ওজন: ৭০ কেজি
ব্যবহৃত মোটরসাইকেল হিসেবে ডিজাইন, রং বা পার্টসের দুর্বলতা চোখে পড়েনি। ডিজাইন বেশ ভালো, স্পোর্টি লুক চোখে পড়ার মতো, সিটিং পজিশন আরামদায়ক, সাসপেনশন এবং ব্রেকিং সমানভাবে কার্যকর। ইলেক্ট্রিক্যাল ফীচার এবং সুইচগুলো আকর্ষনীয় এবং মজবুত। পিলিয়নসহ ৮৮কিমি স্পীডে চালাতে কোনো ধরনের সমস্যা মনে হয়নি।
ফলাফল
আমাদের রাইডারগন রাইড দিয়েছেন ৯০০০কিমি অধিক পথ চলা একটি ১০০সিসি ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। যার গায়ে “চাইনিজ ব্রান্ড” এই তকমা লাগানো রয়েছে। আমরা বিবেচনায় নিয়েছিলাম বাইকটির ডিজাইন, ফীচারস, পারফরমেন্স এবং দামের বিষয়টি। সার্বিক বিবেচনায় ডিজাইন এবং ফীচারসগুলো ছিলো চমতকার। যন্ত্রাংশের মান ভালো। বাইকের কমফোর্ট এবং কন্ট্রোল নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। হাইওয়ে, শহরের ব্যস্ত রাস্তা, গ্রামের রাস্তা এবং পিলিয়ন সহ গড় মাইলেজ পাওয়া গেছে ৫৮কিমি/লিটার। পারফরমেন্সের ঘাটতির কথা বলতে গেলে স্পীড উঠতে সামান্য সময় নেয় এবং রাতে ৫০কিমি/ঘন্টার অধিক গতিতে হেডলাইটের আলোর স্বল্পতা মনে হয়েছে। বাইকের মাসকুলার এবং স্পোর্টি ডিজাইনের সাথে চিকন টায়ার কিছুটা বেমানান মনে হয়েছে, যদিও একারনেই মাইলেজ কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। তবে দামের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে সমস্যাগুলো কিছুটা ইগনোর করা যায় বা এই সমস্যাগুলো সমাধানে নজর দিলে বাইকটি আরো বেশি ক্রেতাবান্ধব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।