এই রিভিউটা যখন লিখতে বসেছি ততক্ষণে বাইক ৯১২ কিলোমিটার চলেছে। বাইকটা কেনা দুই সপ্তাহ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চালাই, যেহেতু নতুন কিনেছি তাই আগ্রহের মাত্রা টা একটু বেশি তবে বেশি আগ্রহ ছিল বাইক এর পারফরমেন্স নিয়ে।
এই বাইক কেনার আগে এই বাইক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না, মার্কেটে এ পরিচিত সব ব্রান্ড এর বাইক দেখা হয়ে গেছিলো কিন্তু টাকার সাথে ঠিক মিল হচ্ছিলো না, আবার আমি যা যা চাইতেছিলাম ঠিক সে গুলো পাচ্ছিলাম না। প্রায় প্রতিদিনই বাইক দেখলাম অনলাইনে বসে থেকে। একদিন রাতে Masum Talukder ভাই মেসেজ দিয়ে জানালো Keeway RKS 100 আর Keeway RKS 125 সম্পর্কে। ওই রাতে বাইকটা সম্পর্কে অনেক কিছু দেখলাম অনলাইনে।
অনলাইনে বাইক দেখার সময় যদিও লুক ভালো ভাবে বুঝতে পারছিলাম না তাই তখনো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলাম না। তবে যখনই বাইকটার ওজন আর ডিস্ক ব্রেক দেখি তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে সকালে রাজশাহীর যেখানেই শো-রুম আছে সেখানে গিয়ে বাইকটা দেখে আসবো। এই দিকে রাতেই মাসুম ভাই এর সাথে একটু কথা হয়েছিলো বাইকটা কেমন হবে, আর নানান কথা বার্তা।
পড়ের দিন খুব সকালে রাজশাহীর শো-রুম এ কল দিয়ে ওঁদের অফিস এ যাই। শুরুতে গাড়িটা তেমন ভালো লাগেনি, আমি আর বউ দুইজন মিলে গিয়েছিলাম। আমি গাড়িতে বসলাম ওঁ একটা ছবি তুলে দিলো। দেখলাম ভালোই লাগছে।
এখন সমস্যা হচ্ছে এই বাইক কোনদিন চালাইনি তাই বুঝছি না কেমন হবে এইটা। ওদেরকে জানালাম যে টেস্ট রাইড এর ব্যাবস্থা করতে পারবে কি না, বেশ কিছুক্ষণ পড়ে ওরা জানালো এক জন আসছে এই মডেল এর বাইক নিয়ে। যদিও ওই বাইকটা ২-৩ মিনিটের বেশি চালাইনি।
ওই মুহূর্তে মতামত নীয়ে নিলাম দুই জনে যে এই বাইকটা কিনছি। আর বাইকটা কেনার ক্ষেত্রে যে confusion ছিল তা দোকানের প্রত্যেকটা মানুষের ব্যাবহার আর কথা বার্তাই অনেকটা দূর হয়ে গেছিলো। এইভাবেই Keeway RKS 100 গাড়িটা কেন হয়।
পারফর্মেন্স
প্রথম ৪৫০ কিলো আমি ৫০ এর উপড়ে স্পীড তুলিনি যদিও একদিন টেস্ট এর জন্য ৭০ তুলেছিলাম পেছনে পিলিওন ছিলো। এর পরে মবিল পরিবর্তন করে টপ স্পীড ৮০ কিলো তুলতে পেরেছিলাম ওই সময় রাস্তাই গেঞ্জাম থাকার জন্য আর তোলা সম্ভব হয়নি আর আমি একাই বাইক চালাচ্ছিলাম।
১। আমার কাছে এখন যা মনে হয় বাইক ৫০-৫৫ স্পীড এর মধ্যে থাকলে একটু ভাইব্রেট করে এর পরে যদি আরও স্পীডে উঠানো যাই তাইলে আবার স্মুথ হয়ে যাই।
২। ৮০ কিলো প্রতি ঘণ্টাই চালিয়েছি, ভাইব্রেট এর কোন সমস্যা হয়নি।
৩। লং বলতে ১০০ কিলো টানা চালিয়েছি, প্রখর রোদের মধ্যে, ইঞ্জিন থেকে কোন হিট পাইনি।
৪। সামনে ও পিছনের চাকা চিকন হবার কারণে বাঁকা রাস্তা + খারাপ রাস্তাই একটু বেশি সাবধানে চালাতে হয়
৫। ৭০ এর উপড়ে উঠলে পিলিওন ছাড়া গাড়ি হালকা ভাসে বাতাসে
৬। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করার পড়ে সাইলেন্সার থেকে টক টক আওয়াজ আসে
৭। হেড লাইট দিলে সব সময় একই রকম থাকে, পিকাপ এর সাথে এইটার সম্পর্ক নাই এইটা খুবই কাজের জিনিশ অন্ধকার রাস্তার জন্য।
৮। ডিজিটাল মিটার থাকার কারণে সব কিছু খুব ভালোভাবে দেখা যায়
৯। Indicator এর কোন সাউন্ড নাই, তাই আলাদা ভাবে একটা কি যেন লাগাইতে হয় সাউনড এর জন্য
এখন পর্যন্ত বাইকটা খুব পছন্দ হয়েছে। তবে যারাই এক বাইক কিনতে চান কিছু বিষয়ের মধ্যে এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন, এই company বাংলাদেশ এ নতুন তাই অনেক ধরনের ঝামেলা পোহাতে হইতে পারে যেমন সার্ভিস, পার্টস এই সবে। বুঝে শুনে দেখে এর পরে বাইক কিনবেন। আপনার যা পছন্দ সেইটাই এই পৃথিবীর সেরা বাইক, তাই হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসা করে লাভ হবে না কোনটা কিনবেন। বাইক চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট মাথায় দিবেন। অতিরিক্ত গতি খুব বেশি প্রয়োজন না হলে লিমিট এর মধ্যে বাইক চালানো উত্তম।
আমার তো কেন যেন মনে হয় বাইক হচ্ছে মৃত্যু দূত যেকোনো সময় বাক্স বন্দি করে নিতে পারে।
সবাই ভালো থাকবেন আর সাবধানে বাইক রাইড করবেন।