কিওয়ে আরকেএস ১০০ ভি৩ মোটরসাইকেল রিভিউ - দিবাকর সাহা দীপ

আমি দিবাকর সাহা দীপ। পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে আমি ব্যবহার করছি কিওয়ে আর কে এস ভার্সন ৩ এই বাইকটি। কিওয়ে সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা ছিলনা পরে ফেসবুকে এবং বিভিন্ন গ্রুপে কিওয়ে এবং এর বাইকগুলো সম্পর্কে ধারনা লাভ করি। আমি এর পূর্বে কোন বাইক ব্যবহার করিনি এটিই আমার প্রথম বাইক। এই বাইকটি কেনার মুল কারণ হল বাইকটির স্টাইল, দাম কম,মাইলেজ তুলনামূলক বেশি এবং আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে ফেসবুক গ্রুপে এই বাইকের পক্ষে অনেক বেশি সাহায্যভাজন মানুষ ছিল তাই বাইকটি কেনা বা না কেনা নিয়ে কোনো দ্বিধা ছিলো না। আমি প্রায় ৪ মাস ধরে এই বাইকটি ব্যবহার করছি । এই ৪ মাসে আমি প্রায় ৩৮০০ কিমি চালিয়েছি। মোটরসাইকেলভ্যালীর আমন্ত্রনে আজ আমি আপনাদের সাথে এই ৩৮০০ কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।

বাইকটির ইঞ্জিন অনেক ভাল নয়েজ কম, ভাইব্রেট করে কম । আমি ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে লং ট্যূর বলতে বরিশাল, খুলনা, যশোর, নড়াইল গিয়েছি তাও একেবারে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে- মাটি কাদা ওয়ালা রাস্তায়। কখনও মনে হয়নি বাইকটি আমার জন্য বোঝা। কখনও বাইক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে পড়তে হয়নি।সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে এই বাইকটির ইঞ্জিন বেশ ভালো মনে হয়েছে।

আমার বাইকের ডিজাইন বলতে গেলে খুব ভালো এবং আকর্ষণীয়। বাইকের লুক, ফুয়েল ট্যাংক, মিটার, সব কিছুই অনেক আকর্ষনীয় করা হয়েছে।

বাইকটার কম্ফোরট বলতে গেলে পেছনের সাসপেনশনটা খুব বাজে মনে হয়েছে। একটু ঝাকিতেও সারা শরীর ব্যাথা বানিয়ে ফেলে। এছাড়া আমার কাছে অন্যান্য দিক বেশ ভালো মনে হয়েছে।সিটিং পজিশন অনেক ভালো, হ্যান্ডেলবারটা ভালো তবে ১৫০ সিসির মতো সোজা হ্যান্ডেলবার হলে কন্ট্রোলিং এবং লুক দুটোই ভাল লাগতো। সুইচগুলো ভালো কিন্তু সামনের হেডলাইট খুবই বাজে মানের। রাতের বেলায় বলতে গেলে কিছুই দেখা যায়না। আমার মনে হয় তাদের এসমস্ত দিক আরও উন্নত করা প্রয়োজন।



অন্যদিকে বাইকটির কন্ট্রোলিং অনেক ভালো।আমি টপ স্পীড ৯৫ উঠিয়েছি। ৮৫+ হওয়ার পর গাড়ি বেশ কাপছিল। ৯৫ তে ওঠার পর গাড়ির কাপা কাপি ভূমিকম্পের মতো লাগছিল প্রথম দিকে। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে গেছিল।ব্রেকিং অনেক ভাল। কিছুদিন আগে ৭৫+ স্পীড নিয়ে মাত্র ৫০ মিটারের মতো দূরে হঠাত দাঁড়িয়ে যাওয়া এক মাইক্রোর পেছনে ব্রেক করতে সক্ষম হয়েছিলাম কালশি রোডে। পেছনের চাকা মোটা হওয়ায় এবং যথেষ্ট গ্রিপ থাকায় সে যাত্রায় বেচে গিয়েছিলাম। বাইকটি সাসপেনশনের দিক দিয়ে আমাকে বেশ হতাশ করেছে। সামনের সাসপেনশন বেশ ভাল হলেও পেছনের সাসপেনশন অনেক জঘন্য ধাচের। টায়ারটা অনেক ভালো তবে অনেক স্পীডে ব্রেক করলে হালকা স্লিপ খায় তবে কন্ট্রোলের মধ্যেই থাকে বাইক।

বাইকটির মাইলেজ অনেক ভালো। কারণ আমার বাইকে ৬০+ মাইলেজ পাচ্ছি। জানিনা কেন। শো রুম থেকে বলা হয়েছিল ৫০+ পাবো। কিন্তু এত বেশি পাবো এইটা আসলেই অস্বাভাবিক আমার কাছেও। আমি মাইলেজ নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট।

বাইকটির কিছু ভালো দিক রয়েছে যেমন- আমি যেহেতু নতুন বাইক চালানো শিখেই এই বাইকটি কিনি সেহেতু আমার কয়েকটা জিনিসে খুব সমস্যা হতো প্রথম প্রথম। আর তা হচ্ছে গিয়ার শিফটিং। কিন্তু এই বাইকে গিয়ার ইন্ডিকেটর লাইট থাকার কারনে বুঝতে পারি গাড়িটি এখন কোন গিয়ারে আছে বা আমার গিয়ার এখন কমানো কিংবা বাড়ানো উচিত। আর সবথেকে বড় যে সুবিধাটা পাই গাড়িটি একটু নিচু এবং হালকা হওয়ায় আমার মতো যারা বাইক চালানো শিখেছে নতুন- তাদের জন্য অবশ্যই বেশ ভাল বাইক হিসেবে এটি জায়গা করে নিবে।

অন্যদিকে খারাপ দিক হল- বাইকের হেড লাইট,পেছনের সাসপেনশন,ঘাড় লকটা ঘাড়ে না থাকা।

বাইকটির আফটার সেলস সার্ভিস খুব ভালো আমি তাদের ঠিক করার মান এবং অন্যান্য সকল দিক আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে। কেউ যদি বাইকটি নিতে চান তবে আমার পরামর্শ থাকবে- বাইকটি ডিজাইন ও অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে দাম অনেক কম যার ফলে কম বাজেটের মধ্যে অনেক ভালো মানের একটি বাইক।

All KEEWAY bike price in bd

Keeway RKS 100 v3