আমি
মোঃ দুলাল হোসেন পেশায় একজন এসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর (এ এস আই)অব পুলিশ। আমার গ্রামের বাসা পাবনা সাথিয়া কিন্তু আমার কর্মক্ষেত্র রাজশাহীতে যার কারণে বর্তমানে রাজশাহীতে থাকা হয়। সম্প্রতি আমার বাইকের ইউজার রিভিউ এর জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল বিষয়ক ওয়েবসাইট মোটরসাইকেলভ্যালীর পক্ষ থেকে একটি আমন্ত্রন পাই। সেই জন্য আজ আমি আমার বাইক নিয়ে আপনাদের সাথে ভাল মন্দ কিছু দিক শেয়ার করতে চাই। আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।
আমি প্রথম মোটরসাইকেল চালানো শিখি ২০০৮ সালে। বাইকটি আমার অফিস থেকে দেওয়া এবং সেই বাইকটি ছিল বাজাজ সি টি ১০০ সিসি। বাইক চালানো শেখার কোন বিশেষ কারণ ছিল না তবে অফিসের প্রয়োজনে মূলত বাইক চালানো শেখা হয়। বাইক চালানো শেখার পর থেকে বিভিন্ন বাইক নিয়ে অফিসের কাজে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করি এবং যতদিন যেতে লাগল মোটরসাইকেলের চাহিদা আরও বাড়তে লাগল। আমি বুঝতে পারলাম যে এখন আমার নিজের একটি বাইক দরকার। সবকিছু ভালই চলছিল এবং অবশেষে আমি আমার প্রথম বাইক
Keeway RKS 125 কিনে নিলাম। এই বাইকটি কেনার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন কারণ ছিল না। আমি জানতে পারলাম যে এই ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটি বাজারে নতুন আসছে এবং বাইকটির মাইলেজ,পারফরমেন্স সব কিছু জানতে পেরে বাইকটি কেনার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। বাইকটির দাম ছিল আমার সাধ্যের মধ্যেই যার কারণে বেশী দেরি না করে ঝটপট কিনে নিলাম।
আমি বাইকটি কিনি ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। বাইকটির পারফরমেন্স বলতে গেলে আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই ভাল। কেনার পর থেকে আমি মোট ৭০০০ কিমি এর মত পথ পাড়ি দিয়েছি। আমি আগেও বলেছি যে, পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে মোটরসাইকেল থাকা টা বেশ জরুরী কেননা যে কোন প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অনায়াসে যাতায়াত করা যায়। সেই কারণে আমি বেশী মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমন করতাম এবং ভ্রমন করার সময় অন্যান্য বাইকের তুলনায় এই বাইকের পারফরমেন্স আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আমি আমার বাইকের পারফরমেন্স নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। আমি সাধারণত বাইক নিয়ে শহরের রাস্তায় বেশী চলাচল করি কিন্তু একদিন অফিসের কাজে আমাকে লং ট্যুরে যেতে হয় সেটা ছিল মাত্র ৯০ কিমি। আসলে এটাকে লং ট্যুর না বলে মিনি লং ট্যুর বলা যেতে পারে। আমি একদিনে মোট ৯০ কিমি পারি দিয়েছি এর বেশী দেওয়া আমার পক্ষে আর সুযোগ হয়নি।ইনশাল্লাহ কোন একদিন এর থেকে বেশী কিমি চালাব। ছোট ট্যুরের থেকে লং ট্যুরের জন্য বাইকটি বেশ আরামদায়ক বলে আমি মনে করি। এছাড়াও বাইকটির ডাইমেনশান, কন্ট্রোল, হ্যান্ডেল বার সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে। স্প্লিট সিটটি হ্যান্ডেল বারের অবস্থানের সাথে ম্যাচিং করা যার জন্য রাইডিং করার সময় তেমন ব্যাক পেইন হয়না এবং আরামের সাথে রাইড করা যায়। হাই ক্লাস সাস্পেনশন এবং ব্রেকিং এর জন্য আমার কাছে বাইকের কন্ট্রোলিংটা অনেক ভাল মনে হয়। তবে কিছু কিছু সময় আমি খেয়াল করেছি যে এর পেছনের ব্রেকটা অনেক শক্ত যার কারণে পেছনের ব্রেক বেশী চাপ দিলে টায়ার স্লিপ করে, এমন হতে পারে বাইকটি একেবারে নতুন বলে কড়া ব্রেকিং এর সাথে আমি এখনও হয়তো অভ্যস্ত হতে পারিনি।
বাইকটির মাইলেজ নিয়ে আমি অনেক সন্তুষ্ট কেননা শহরেরে রাস্তা চালিয়ে আমি ৪০-৪৫ কিমি প্রতি লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি। হাইওয়েতে আমি মাইলেজ টা তেমন খেয়াল করিনি তবে আমার ধারণা শহরের থেকে অবশ্যই হাইওয়েতে মাইলেজ বেশী হবে। ভাল মাইলেজ এর পাশাপাশি আমি ভাল টপ স্পীড পাচ্ছি। আমি সর্বচ্চো ৭২ কিমি প্রতি ঘন্টায় এর টপ স্পীড তুলেছি।আমার মনে হয় এর টপ স্পীড ১০০ এর কিছুটা বেশী হবে কিন্তু রাস্তা খারাপ এবং আমার চেষ্টা না থাকার ফলে আমার বাইকের টপ স্পীড ৭২ কিমি প্রতি ঘন্টায় সিমাবদ্ধ রেখেছি।আমার কাছে যেটা আরও ভাল লেগেছ সেটা হল আমার বাইক ৫০ কিমি প্রতি ঘন্টায় থাকার সময় মনে হচ্ছে বাইকটি বাতাসে ভাসছে(স্মুথ হয়ে যায়) আমি জানি না এটা খারাপ দিক না ভাল দিক কিন্তু আমি আন্তরিকতার সাথে সেটি উপভোগ করি।
কিছু ভাল দিক
- বাইকটির কালার কম্বিনেশন এবং আউটলুক আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে,মানুষ মনে করে থাকে যে এটা অনেক দামি একটি গাড়ি এবং মানুষ অধীর আগ্রহের সাথে আমার বাইকের দিকে তাকিয়ে থাকে।
- আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে এর সাস্পেনশন অনেক আরামদায়ক যেটা হয়ত বলে বুঝাতে পারব না এবং এটি অফ রোড বা অন রোডে বেশ আরামদায়ক। ব্রেকিংটাও যথেষ্ট ভাল মনে হয়েছে।
- লং ড্রাইভের জন্য অসাধারণ একটি বাইক।
- মাইলেজ এবং স্পীড অনেক ভাল
কিছু মন্দ দিক
- পেছনের চাকার ব্রেকটা আমার কাছে বেশ শক্ত মনে হয়েছে যেটা বেশী চেপে ধরলে পেছনের চাকা স্লিপ করে।
- হেডলাইটের প্রটেক্টর(উইন্ডস্ক্রীন) থাকলে ভাল হত এবং হেড ল্যাম্পের পাওয়ারটা আরেকটু বেশী হলে ভাল হত।
- আমার মতো লম্বা রাইডাদের জন্য সিটিং হাইট অনেক ছোট ।সিটিং হাইট আরও বৃদ্ধি করলে ভাল হয় তবে মাঝারি কিংবা ছোট আকারের রাইডাদের জন্য এটি ভাল বলে আমি মনে করি।
- স্প্লিট সিটের জন্য ফ্যামিলি নিয়ে রাইড করা যায় না। এটা যেহুতু স্পোর্টস ক্যাটাগরি মোটরসাইকেলের মধ্যে পড়ে না সেহুতু স্প্লীট সিট না রাখাই ভাল।
আমার কাছে মনে হয়েছে যে কিছু জিনিস আরও ভাল করা উচিত ছিল কিন্তু সবমিলিয়ে বাইকটি আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আমি আমার বাইকে রাইডিং করার সময় বেশ উপভোগ করি। সবমিলিয়ে আমার বাইকের রেটিং ১০ তে ৮ দিব।
রাইডিং করার সময় হেলমেট পরে রাইড করবেন এবং প্রয়োজন ছাড়া অযথা বেশী স্পীডে বাইকে চালাবেন না। সবার জন্য শুভ কামনা রইল ।