একটা রিস্ক ছিলো যে এইটা চায়না মেইড কিন্তু চায়না ইম্পোর্টেড এবং ব্র্যান্ড হাংগেরিয়ান জানার পর কেনার ইচ্ছা প্রবল হয়। কারণ আমার জানামতে এটা চাইনিজ এসেম্বলড।
যাইহোক অবশেষে ২৭/৩/২০১৮ তে কিনেই ফেললাম কীওয়ে আরকেএস ১৫০ সিবিএস (১৫০সিসি)।
ডিউরেশন তাহলে ১৯ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত প্রায় এগারো মাস । এভারেজ ৯০০ কিমি প্রতিমাসে। অনলাইনে বাইকের বিভিন্ন বর্ণনা আছে। আমি সেসব দিকে না গিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আমার বাইকের ভালো দিকগুলো -
লুক এন্ড ফিলের বিষয়ে দেখাগেল সবারই পছন্দ এই বাইকটি। ব্লু গ্লসি কালার, নজরে পড়ে সবার আগে।বাইকটির কাউন্টার ব্যালেন্সও অসাধারণ। বাউলি কাটতে কোন ইম্ব্যালেন্স লক্ষ করা যায়নি। কর্ণারিং এবং ব্রেকিং দুটাই আমার মনের মতো হয়েছে। বাইকটির কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কম।
রাইড হাইট নিচু , এবং মনোশকড অ্যাবসর্ভারের কারণে বাইকটিতে শরীরের উপর প্রেশার অনেক কম ফেলে। বাইক চালিয়ে হাত পা ব্যাথা তেমন হয়নাই।
সর্বোচ্চ রাইড দিয়েছিলাম ২২৪ কিলো (চন্দ্রগঞ্জ, চৌমুহানী, ফেনী, কুমিল্লা - কুমিল্লা, লালমাই, হাজীগঞ্জ, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, চন্দ্রগঞ্জ।) তেল লেগেছিলো প্রায় ৫.৫ লিটার।
সর্বোচ্চ স্পীড উঠিয়েছি ফেনী চিটাগাং হাইওয়েতে ১১৭ কিমি/ঘ. (১৯০কেজি পিলিওন সহ)।
মাইলেজ ৪৩+ ।
লং ড্রাইভ দিয়েছিলাম চন্দ্রগঞ্জ-মুসাপুর প্রজেক্ট (২বার), চন্দ্রগঞ্জ- রায়পুর, চন্দ্রগঞ্জ- সুবর্নচর চেয়ারম্যান ঘাট। চন্দ্রগঞ্জ- আলেকজান্ডার মেঘনাপাড়, চন্দ্রগঞ্জ- মজু চৌধুরীর হাঁট, চন্দ্রগঞ্জ-সীতাকুন্ড, চন্দ্রগঞ্জ- কুমিল্লা। চন্দ্রগঞ্জ হলো লক্ষ্মীপুর নোয়াখালী জেলা সীমান্তের একটি মফস্বল শহর।
ব্রেক ইন পিরিওড এ একবার ৮৫ স্পীড উঠিয়েছিলাম। বাকি সময় সঠিক ভাবেই পার করেছি। শুরুতে ৭৫ স্পীডে ভাইব্রেট করতো। এনজিকে ইরিডিয়াম স্পার্কপ্লাগ লাগানোর পর সেটা কমে গেছে ধরতে গেলে নাই হয়ে গেছে, স্টিয়ারিং হ্যান্ডেল ভাইব্রেট করে বডি স্মুথ থাকে।
৩২০০ পর্যন্ত জিক এম৭ ২০-৪০ ব্যবহার করতাম। এরপর হুন্ডাই ৪টি এক্সটিয়ার এরপর এবার দিবো মটুল ৩০০০।
একদিন বাস ওভারটেক করতে গিয়ে সামনে হঠাৎ কুকুর এসে পড়ে। বাসের কারনে আগে কুকুরটি দেখতে পাইনি। আল্লাহর রহমতে সিবিএস ব্রেকের কারণে শেষ রক্ষা হয়। তবে নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে রাস্তার অপর পাসে পড়ে গিয়ে বাম পায়ে ব্যাথা পাই। সিবিএস ব্রেক খুবই কার্যকরী এবং বিপদের বন্ধু। গত ৪-৫ দিন আগেও হার্ডব্রেক করে কুকুর থেকে রেহাই পাই।
একদিন ৮০ + স্পীড থেকে ব্রেক করি। কারণ সামনে অটোরিকশা হঠাৎ রাস্তার মাঝে চলে এসেছিলো। ব্রেক কাজ করে ১০ফুটের মধ্যে থেমে যায়।
আপনারা অনেকেই জানেন সিবিএস ব্রেক ফ্রন্ট ব্রেকে ৪০% এবং রেয়ার ব্রেকে ৬০% একসাথে ফোর্স করে। সেটা হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছি কয়েকবার।
আমার ওজন বেশি তাই আমি সিবিএস (রেয়ার )ব্রেকটা একটু টাইট রেখেছি। সাধারণত ১ সেকেন্ড ১৫, ৩ সেকেন্ড ২৫, ৪ সেকেন্ডে ৪৫+ , ৭ সেকেন্ড ৭০+ স্পীড উঠে যায়। যাকে বলা হয় রেডি পিকআপ। লং ড্রাইভে অশান্তি লাগেনা।
মডিফিকেশন তেমন কিছুনয়, এদিকে রাত্রে হাইওয়েতে সিএনজি ওয়ালাদের থেকে রক্ষা পেতে সামনে পেছনে কয়েকটি এলইডি লাগানো হয়েছে। আর সিটকভার স্টকটির উপর কালার ম্যাচ করে একটি কভার দেয়া হয়েছে। সামনে টাইটেল হোল্ডার লাগিয়েছি। স্টক স্পার্কপ্লাগ পাল্টে এনজিকে ইরিডিয়াম লাগিয়েছি।
খারাপ দিকগুলো-
লোকাল সার্ভিস সেন্টার। এরা আদিকালের পেন্টিয়াম প্রসেসরের মতো। খালি লোডিং আর লোডিং। এরা সেলিং স্ট্রাটেজিও দুর্বল। আমিতো অনলাইনে রিভিউ বা খোঁজ খবর নিয়ে গেছি। নাহলে প্রথম ইম্প্রেশনে দুর্বল।
বাইকের লুকিং গ্লাসগুলো আরো ভালোমানের হওয়া উচিৎ।
বিভিন্ন পার্টসগুলো এভেইলেবল হওয়া দরকার।
বামপাসের হোল্ডার (ক্লাচ লিভার ও গ্লাস ধারক ওয়াই চাপা) ভেংগে গিয়েছিলো। এটা পাল্টাতে দুই সপ্তাহ লেগেছে।
বাইকের সাইড স্ট্যান্ডটি বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অনুযায়ী শর্ট। দুইবার পাসে পড়ে গিয়েছিলো কাদায় গেঁড়ে। তবে এটা পাল্টিয়ে নেয়া যায়।
সব বাইকের মতই ডিজিটাল ওয়েল মিটার লো-কভারেজে সমস্যা করে। ফুল থাকলে ভালই দেখায়, কিন্তু ৩ লিটারের নিচে নামলে মাথা নস্ট হয়ে যায়।
আর শীতকালিন সকালে স্টার্ট নেয়ার সমস্যা তো আছেই। সেটা অবশ্য চোক দিয়ে সেট করে ফেলি আর সমস্যা হয়না।
কিছু কথা:
বাইকটি দিয়ে বাউলি ও কর্ণারিং করা যায় স্মুথলি (ভেবে চিন্তে কাজগুলো করবেন- হিরোগিরী করতে যাবেন না রাস্তায়) । কয়েকবারই এপাচি, পালসার ইত্যাদি ওভারটেক করতে পেরেছিলাম (হয়তো উনাদের স্পীড কম ছিলো ) । ফেনী -চিটাগং রোডে কয়েকটি বাস ওভারটেক করতে পেরেছি ১১০+ স্পীডে। (ওভারটেক অযথা নয় দেখেশুনে করা উচিৎ। মনে রাখবেন ১০ মিনিট দেরি হলেও আপনি বেঁচে থাকবেন। কিন্তু ১০ সেকেন্ড জোরে চালাতে গেলে শেষ হয়ে যাবেন। আর গন্তব্যও মিস করবেন।)
বাইকের স্টক ব্যটারিতে একস্ট্রা লাইট লাগালে চিন্তাভাবনা করে লাগাবেন। মাঝে মধ্যে কিক স্টার্ট করা ভালো হবে।
আমার পছন্দের কারণ -
১। লুক এন্ড ফিল ২। ব্যালেন্সিং ৩। রাইড হাইট ৪। হ্যান্ডেল বার টি খুবই প্র্যাকটিকেল ৫। ক্লেন্স রাবারগুলো অসাধারণ দিয়েছে। একস্ট্রা কভার ছাড়াই সুন্দর এক্সেলারেশন করা যায়। হাত ঘামালেও সমস্যা মনে হয়না। ৬। রেয়ার ভিউ মিরর খুবই প্রাকটিকাল এবং সুন্দর ডিজাইনের। ৭। দেখতে অনেকটাই স্পোর্টস লুক কিন্তু ক্রুইজের জন্যও দারুন।
আমি হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি - ৪০-৪৫ কিমি প্রতি লিটারে।
এই ছিলো কিওয়ে আরকেএস সিবিএস ১৫০ নিয়ে আমার ব্যবহার অভিজ্ঞতা। সবাই সাবধানে বাইক রাইড করবেন। ধন্যবাদ।