আমার অনেক শখ ছিলো যে নিজেই একটা বাইক কিনবো। দীর্ঘদিন বন্ধু-বান্ধবের বাইক চালানোর পরে আমার এমন শখ জাগে। নিজে নিজের বাইক ব্যবহার করার মজাই অলাদা । আমি এই মজাটা উপলব্ধি করতে পারলাম কিওয়ে আরকেএস ১৫০ সিবিএস বাইক কেনার পর। এই বাইকটা আমি এক বন্ধুর পরামর্শে কিনেছিলাম । নতুন বাইক তারপরে আবার অজানা ব্র্যান্ড সব মিলিয়ে আমি অনেক দ্বিধার মধ্যেই ছিলাম ।যেহেতু বাইকের প্রতি আমার বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা আছে তাই এটা কিনে শোরুম থেকে বের করে একটু থ্রটল ঘুরিয়ে বুঝতে পারলাম যে না এটা কোন খারাপ বাইক না। বাইকটা আমাকে যথেষ্ট আরাম দেয় এবং আমার চলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে এর স্পোর্টস লুক এনে দিয়েছে অন্যরকম এক অনুভূতি।
আমি আজ থেকে প্রায় ২ মাস আগে রাজশাহীর নিউ শুভ এন্টারপ্রাইজ,রানীবাজার থেকে বাইকটা কিনেছিলাম। কেনার সময় তাদের আচরন আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। নিউ শুভ এন্টারপ্রাইজের মালিক শামিম ভাই ও ম্যানেজার রাজিবুল ভাই দুজনই খুবই আন্তরিক কিন্তু একটা বিষয় তাদের খুবই দুঃখজনক যে তাদের সার্ভিস করতে হয় রাস্তায় মানে নির্ধারিত কোন স্থান নাই। তাদের সার্ভিস সেন্টারটা আমি বলবো যে আরেকটু উন্নত করা দরকার কারণ এরকম চলতে থাকলে গ্রাহকদের আস্থা হারাবে।
আমি এই বাইকটা প্রায় ৩৫০০ কিমি রাইড করেছি। রাইডের এই সময়ে বাইকটা আমাকে তেমন কোন সমস্যা ফেলেনি। আমি মূলত শহরের মধ্যেই বেশি যাতায়াত করি এবং স্পীডের পক্ষপাতি একদমই না। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে আমার টপ স্পীড ৬০ কিমি/ঘন্টা এর কারণ আমি স্পীড পছন্দ করি না। আমি বাইক নিয়ে চলতে পছন্দ করি। আমার চালানো অভিজ্ঞতা থেকে যা যা ভালো লেগেছে এবং যা যা খারাপ লেগেছে সেগুলো আমি আজকে তুলে ধরবো।
প্রথমেই বলবো সিটিং পজিশনের কথা সিটিং পজিশটা আরামদায়ক আছে। বসে একটু নরম অনুভূতি পাওয়া যায়। আমার স্ত্রী বা অন্য কোন সহযাত্রী নিয়ে বসতে কোন সমস্যা হয় না।
হ্যান্ডেলবারটা ভালো লাগেনি আমি নিজেই পরবর্তীতে হ্যান্ডেলবারটা পরিবর্তন করে সুজুকি জিক্সারের হ্যান্ডেলবার লাগিয়ে নিয়েছি। এখন আর কোন সমস্যা হয় না । লুকিং গ্লাসগুলো স্টাইলিশ।
আমাকে একটা বিষয় নিয়ে বিশেষ করে রাতে সমস্যায় পড়তে হয় সেটা হল এর হেডল্যম্পের আলো। হেডল্যাম্পের আলোটা একদমই কম। আমি কোম্পানীর কাছে অনুরোধ করব যে তারা যেন আরও শক্তিশালী হেডল্যাম্প ব্যবহার করে।
নেকেড বাইক হিসেবে কন্ট্রোল বেশ ভালো আছে। আমি শহরের মধ্যে ভালোভাবেই করনারিং,কন্ট্রোল করতে পারি।
একটা বিষয় আমার প্রথম প্রথম খুবই আশ্চর্য লাগতো যে বাইকের পেছনের ব্রেক ধরলে সামনেরটাও কাজ করে। পরে জানতে পারলাম যে আমার বাইকে সিবিএস ব্রেকিং আছে এবং আগের যে বাইকগুলো চালিয়েছি তার থেকে সিবিএস ব্রেকিং এ ভিন্ন অনুভূতি পেয়েছি। ব্রেকিং আমি বলবো ভালোই ।
আমি বাইক বেশিক্ষন চালাই না কিন্তু আমাকে বেশিরভাগ সময় একটু ভাংগা রাস্তা পারি দিতে হয় যার ফলে সাসপেনশনের পারফরমেন্স বুঝতে পারি। মনোশক ও সামনের টেলিস্কোপিক আমাকে খুব সুন্দর আরাম এনে দেয়। বেশি ভাংগা রাস্তাও আমার কাছে অনেক কম ভাংগা লাগে মানে খুবই ভালো কাজ করে। আরেকটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে বাইকটার মনোশক সাসপেনশন থাকার ফলে খুব ভালো কন্ট্রোল পাওয়া যায়।
আমরা সকলেই একটা বিষয় নিয়ে বেশি মাথাব্যাথা করে থাকি সেটা হল মাইলেজ। অনেকেই আবার মাইলেজ তোয়াক্কা করেন না তারা শুধু আরাম দেখেন। আমার কাছে মাইলেজটা একটু চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শো-রুম থেকে বলেছিলো যে ৪৫-৫০ কিমি/লিটার মাইলেজ পাবো কিন্তু আমি পাচ্ছি তার থেকে একটু কম। সোজা কথায় আমি ট্যাংকি ফুল রাখি এবং মনে হয় যে তেল বেশি পুড়ছে। মাইলেজ আরেকটু বেটার করা উচিত।
আমি সবচেয়ে যে বিষয়টা নিয়ে বেশি খুশি সেটা হল বাইকের দাম। এরকম বাইক প্রথমেই দেখে মনে হয়েছিলো যে দামটা অনেক বেশি হবে কিন্তু দামটা একদমই কম মাত্র ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯০০ টাকা। এই দামে এত সুন্দর বাইক সত্যিই অকল্পনীয়। আমি দামের জন্য কিওয়ে কোম্পানীকে ধন্যবাদ জানাই। আর এই দামের মধ্যে তারা এই বাইকে অনেক ভালো ভালো প্রযুক্তি দিয়েছে যা অন্য বাইকে দেখা যায় না।
এইবার এক নজরে দেখে নেই বাইকের ভালো খারাপ দিকগুলো
ভালো দিক
-দেখতে খুবই সুন্দর
-চালিয়ে আরাম
-কন্ট্রোল ভালো
-টায়ারের গ্রিপগুলো ভালো মানের
-আধুনিক প্রযুক্তির সব কিছু আছে
খারাপ দিক
-হেডল্যাম্পের আলোটা কম
- হ্যান্ডেলবারটা ভালো দেয় নি
কেউ যদি বাইকটা নিতে চান তবে আমি আবশ্যই বলবো যে নেন । আমার কাছে যে যে সমস্যা মনে হয়েছে আপনাদের কাছে সেটা নাও হতে পারে। আর কোম্পানীর কাছে পরামর্শ যে রাজশাহীতে দ্রুত সার্ভিস সেন্টার করা উচিত এবং তাদের পার্টসের সহজলভ্যতা করা দরকার । এই ছিলো আমার আরকেএস ১৫০ সিবিএস এর রিভিউ।