2017-01-14
Owned for 1year+ []
Ridden for 10000km+
কিওয়ে আরকেএস ১৫০ মোটরসাইকেল রিভিউ - তানভীর আহমেদ
শুভেছা সকলকে। আমি তানভীর আহামেদ (বয়স ২২), ড্যাফডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধায়ন করছি এবং কিওয়ে আরকেএস ১৫০ চালাচ্ছি। বাইকটির ১০,০০০ কিমি পূর্ণ হবার কারণে আজ আমি এই বাইক টির একটি রিভিউ দেবার চেষ্টা করবো।
প্রথমতঃ
আমি বাইক চালাতে পারতাম না এমন কি সাইকেল ও না । অন্য সবার মত বাইক থাকবে এটা আমার ছোট কালের স্বপ্ন ও ছিল না । ২০১৫ সালের শেষের দিক কার সময়য়ের ঘটনা, ভার্সিটি যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ই ধানমণ্ডি যেতে হয় কিন্তু রাস্তার জ্যাম, বাস এর চাপ এর জন্য প্রায় প্রতিদিন ই জেতে দেরি হত। তখন থেকেই আমি এই সমস্যার এর একটি সমাধান খুজছিলাম। প্রথমেই ইচ্ছা ছিল সাইকেল কিন্তু আমি ওজনে ভারি হবার কারণে সেই ইছা বাদ দিলাম, অই অবস্থায় গাড়ী কেনার মত সাহস ছিল না আমার তাই শেষ পর্যন্ত ঝুঁকতে হল বাইক এর দিক এই। শুরু হয়ে গেল বাইক শেখার পালা, আল্লার রহমতে ২ঘনটায় ব্যালাঞ্চ করে ফেললাম। আমার প্রথম বাইক ছিল আমার বড় ভাই এর বাইক হোন্ডা সাইন, সময়টা জানুয়ারি ২০১৬ এর। তার পর কিছুদিন ওইটা দিয়ে প্র্যাকটিস করলাম । তারপর কিছুদিন চালালাম ইয়ামাহার ফেযার দিয়ে।
কেন কিওয়ে ??
আমি বাইক কেনার সময় ভাবছিলাম এমন কিছু একটা আমার দরকার যেটার মধ্যে স্টাইল,মাইলেজ,আর আরামদায়ক হবে আমার জন্য আর অবশই আমার সাধ্যের মধ্যেই হবে। আমি ছোট কাল থেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জন করি, সেই জন্য ই আমি অন্য কোন ব্রান্ড খুঁজতে থাকি, এক পর্যন্ত পেয়ে গেলাম কীওয়ে আর কে এস ১৫০ । কেনার সময় অনেক মানুষ বলেছিল অপরিচিত ব্রান্ড না নিতে কিন্তু আমার ভাল লেগে গিয়েছিল , প্রেম এ
পড়ে গিয়েছিলাম।
যাই হোক ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল বিকালে বাইক টি আমার হয় ।
শুরুর শুরু:
বাইক টি মধ্যে প্রথম চাবি রেখেছিল আমার বাবা আর স্টার্ট করেছিল আমার মা, অনেক আননদের মুহুর্ত ছিল আমার জন্য। যখন প্রথম চালান শুরু করলাম বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এইটা আমার বাইক । যদিও এখন ও বাইক টিতে একই রকম টেস্ট পাই তাও সেই প্রথম দিনের টেস্ট/ অনুভূতি আসলেই ভোলার নয়।
গত ৯ মাস এ আমি বাইক টি চালিয়েছি ১০,০০০ কিমি। এবার আসি বাইক টির সম্পর্কে ভালোলাগা আর মন্দ লাগা গুলো বলি ।
প্রথমে আসুন জেনে নেই বাইক টির স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে:
ভাল দিকঃ
এই বাইক টি প্রায় সব দিক গুলি ই ভাল লেগেছে তার পরেও বিশেষ কিছু দিকঃ
- অসম্ভব সুন্দর দেখতে পুরাই স্পোর্ট লুক।
- পেছনের চাকা যথেষ্ট মোটা (১২০/৮০-১৭’’)। আমি অনেক ভেজা রাস্তায় ও ভাল গ্রিপ পেয়েছি, কাদার মধ্যেও তেমন একটা পেছল খায় নি।
- পেছনের মনো-সাস্পেন্সন হওয়া টা এই বাইক এর একটা শক্তিশালী দিক। যেটা একই দামের অনন্য বাইক এর নেই ।সাস্পেন্সন টি অনেক আরাদায়ক,আমি আমার পিলিওন এর কাছে কখনই কমপ্লেইন পাই নি যে কখন ঝাঁকি লেগেছে খুব ।
- বাইক এর কন্ট্রোল নিয়ে আমার কোন কমপ্লেইন নেই। খুব ভাল কন্টলিং, এমন কি টারনিং এর সময় ও কোন অসুবিধা হয়নি।
- সামনের ব্রেক খুবভাল মনে হয়েছে।
- বাইকটির যে প্লাস্টিক অংশ আছে সেইটা খুবই ভালমানের মনে হয়েছে।
- এই বাইকটির আর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর ইনজিন এর আওয়াজ্, খুব ইউনিক এবং অন্য কোন বাইক এর সাথে মিল পাবেননা।উচ্চ আরপিএম এ শব্দের কোন পরিবর্তন হয়নি।
- বাইকটি তুলনামূলক হাল্কা হবার দরুন, এবং রেডী পিকাপ থাকার কারণেখুবদ্রুতস্পিড উঠে । ০-৬০ কিমি/ঘন্টা উঠতে সময় নেয় মাত্র ৪.৫ সেকেন্ড, ০-১০০ কিমি/ঘন্টা উঠতে সময় নেয় ১২ সেকেন্ড।
- ইউটিউবলিঙ্ক (https://www.youtube.com/watch?v=57xsrx9CTA0)
- বাইকটি তে একদমই ভাইব্রেশন নেই। ১১০ কিমি/ঘন্টা তেও তেমন ভাইব্রেশন অনুভব করা যায় না, এই পর্যন্ত আমি বাইকটিতে স্পিড তুলেছি ১৩১ কিমি/ঘন্টা কিন্ত লক্ষণীয় ভাইব্রেশন পাইনি।
- বাইটির ইঞ্জিন তেমন একটা গরম হয়না , সুরুর দিকে কিছুটা গরম হলেও ১০০০ এরপর আর হয়নি।
- আমি বাইকটিতে এখন পর্যন্ত ৪২+/- কিমি/লিটার (ঢাকায়) বাইরে ৪৫ +/-কিমি/লিটার পেয়েছি, ব্রেক-ইন পিরিয়ডে পেয়েছিলাম ৩০-৩৩কিমি/লিটার।
- বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকটি যথেষ্ট বড়। ১৬ লিটার।(১৪.৫+১.৫), যেটি লং টুর এর জন্য সুবিধা জনক।
- বাইকটির সকল পার্টস স্পীডওজ (আমদানিকারক) এর কাছে আছে, এবং বাইরেও পাওয়া যায়।
আফটার সেলস সার্ভিসঃ
স্পিডওস বাংলাদেশে কীওয়ে আমদানি করছে, সে হিসাবে তারা সার্ভিস দিচ্ছে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের বিশাল একটি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। এছাড়াও তাদের অন-কল সার্ভিস, মোবাইল সার্ভিসিং টিম রয়েছে। ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্রগ্রাম, রাজশাহীতেও সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।যদিও এখনও তারা সারা বাংলাদেশ এ থানা পর্যায়ে সরাসরি সার্ভিস সেন্টার করতে পারেনি তাই তারা ডিলার এর মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছে যদিও আমার মনে হয় তাদেররও সার্ভিস সেন্টার বাড়ানো উচিত।
মন্দলাগাঃ
- বাইকটির সবচেয়ে দুর্বল বেপারটি হচ্ছে বাইটির চাকা টিউব-লেসআসেনা, যেটি বাংলাদেশের রাস্তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যদিও অল্প কিছু টাকা খরচ করে টিউব-লেস করে নেওয়া যায়।
- বাইকটির হেড-লাইট এর আলো খুবই দুর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে, তবে একটি নব এর সাহায্যে আলোর ফোকাস সামনে পেছনে করা যায় এতে কিছুটা সুবিধা হয় রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে।
- বাইকটির সামনের চাকা টি পেছনের টির মত খুব ভাল না , পেছল খায়, গ্রীপ তেমন একটা পাই নি।
- বাইকটির ফোর্ক লক টি বাইক টির ঘাড়ে অবস্থিত যেটা একটু পুরাতন মডেল এর মত মনে হয়, সাথে সাথে যদি কেউ লক না খুলে বাইক স্টার্ট দেয় তবে বাইকটি গোল হয়ে ঘুরতে থাকবে যেটি বিপদজনক ও বটে।
- বাইকটি কিছুটা খাটো তাই লম্বা দের জন্য কিছুটা অসুবিধা করতে পারে যদিও আজকাল বাইক কে উচু করা যায়।
- বাইটির পেছনে ড্রাম-ব্রেক যেটা ডিস্ক ব্রেক হলে ভাল হতো।
টুর সমূহঃ
আমি বাইক টি নিয়ে খুব দূরে যাই নি । ঢাকার ভেতরে কিছু টুর দিয়েছি সেগুলি উল্লেখ করলাম
উপরের টুর গুলোতে আমি কোন ধরনের ঝামেলার মুখুমুখি হইনি। প্রত্যেকটি টুরে আমি অনেক স্মুথ ভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি।
পরিশেষে বলা যায়, কিওয়ে আর কে এস ১৫০ এমন একটি বাইক যা সবাই পছন্দ করবে। যারা একটু দ্রুতগতির সাথে কম্ফোর্ট আর স্টাইল এর কমবো চান তাদের জন্যই এই বাইক। আমার একটাই অনুরোধ যারা চাইনীজ/অপরিচিত বাইক কে না দেখে না শুনে অপছন্দ করেন তাদের কে একবার বলব প্লিজ বাইক টিতে একটি রাইড দিন আপনার সব ধারণে বদলে যাবে ইন-শা-আল্লাহ।
সকলেই সাবধানে বাইক চালান, এবং অবশই অবশ্যই আপনি ও আপনার পিলিওন কে হেলমেট ব্যবহার করতে বলুন । ধন্যবাদ।