Owned for 0-3months [] Ridden for 0-1000km
কিওয়ে সুপারলাইট ১৫০ ক্রুজার রিভিউ - আদনান
কি কারনে মোটরসাইকেল কিনতে উৎসাহিত হলাম?
বিগত ৫বছর যদি আমি পেছন ফিরে দেখি তাহলে দেখতে পাবো বাইক চালানো শেখার পর থেকে বাইক চালানো ছিলো আমার অন্যতম শখ। আর বর্তমানে শখই প্রয়েজনে পরিনত হয়েছে। কেননা আমার বাসা থেকে অফিস কিছুটা দুরে। সেখানে যাতায়াতের জন্য এবং শহরেরই এই জঘন্য জ্যামে কিছুটা আরামদায়ক চলাচলের জন্য বাইকের বিকল্প কিছু নাই।
কেন এই মোটরসাইকেল কিনলাম?
ঠিক শতভাগ কারন বলতে পারছি না কিন্তু জিপসি বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো সব সময়েই। আমি সর্বশেষ যে বাইক চালিয়েছিলাম সেটি ছিলো Yamaha Enticer। আমার মতে জিপসি বাইক সব সময়েই অনেক আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ তো বটেই।মোটরসাইকেল খুজতে আমার নজর সব সময়েই ছিলো কোন বাইক আমার পারসোনালিটির সাথে মিলবে এবং দেখতেও অনেক স্টাইলিশ হবে। যখন নিজের বাইকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আমি KEEWAY Superlight দেখলাম। এটির মধ্যে সবকিছুর ছোয়া দেখতে পেলাম যা যা আমি চাই। আর তাই কোন দেরী না করেই বাইকটি কিনে ফেললাম।
KEEWAY Superlight কেনার অভিজ্ঞতা
আমি আমার নিজের পছন্দমতো সুবিধাসহ বাইক ইন্টারনেটে খুজতেছিলাম। সবমিলিয়ে পছন্দ হবে এবং আমার বাজেটের মধ্যেই হবে এমন বাইক পাবো কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিলোই। কিন্তু আমার সব চাহিদা KEEWAY Superlight পূরন করে দিবে আমি ভাবিনি, কেননা এর আগে আমি কখনও এই বাইকের নাম শুনিনি। আমি যখন দূর থেকে অন্য বাইকের পাশে এই বাইককে দেখলাম তখন তার রাজকীয় লুক দেখে আমার চোখ আটকে গেলো। বাইকের স্পেকস, সার্ভিস ফ্যাসিলিটি, দাম, অফার ইত্যাদি শোনার পরে আর দেরী করিনি এই বাইক কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ফাইনাল করতে।
KEEWAY Superlight এর সাথে পথ চলা
যখন আমি বাইক চালাই, তখন আনন্দ, আত্ন বিশ্বাস এবং স্বাধীনতার অসাধারন কম্বিনেশন পেয়ে থাকি এই বাইকটি থেকে। রাস্তায় এই বাইকে বসে আমার ফিলিংস সত্যিই অসাম। রাস্তায় যখন বাইকটি নিয়ে বের হই তখন মোটামোটি সকলেরই নজর থাকে আমার উপরে, ওহ স্যরি, ঠিক আমার উপরে না আমার বাইকের উপরে। এর স্টাইলিশ ডিজাইন, এবং শক্তিশালী ইনজিনের গর্জন সবাইকে আকর্ষিত করে। এমনকি মাঝে মাঝেই বিভিন্ন লোকের/পথচারীর প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়, ভাইক বাইকটি কেমন? কোযালিট কেমন বা দাম কেমন? ইত্যাদি। অনেকেই গাড়ীর লুক দেখে বাইকের দামের কথা শুনে বিশ্বাসই করতে চায় না। তাদের ধারনা আমি অনেক কমিয়ে দাম বলছি। সত্যি কথা বলতে কি, এই বাইকটি আমাকে রাস্তায় পর্যাপ্ত আরাম এবং আত্নবিশ্বাস দিয়েছে যখন আমি বাইকটি রা্ইড করি।
স্পীড ও মাইলেজ
KEEWAY Superlight বাইকটি ১৫০ সিসি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অনেকেই বলে থাকে তারা এই বাইকে ৪২-৪৫কিমি/লিটার মাইলেজ পেয়ে থাকে। আসলে মাইলেজ বিষয়টি গাড়ীর পাশাপাশি রাস্তা, জ্যাম ইত্যাদির উপরে অনেকাংশেই কম বেশি হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি ক্রুজার বাইকে অনেক স্পীড মুখ্য বিষয় নয় এবং Superlight যেহেতু একটি ভারী ক্রুজার বাইক, তবুও সে ১১৫কিমি/ঘন্টা স্পীড খুব সহজেই দিয়ে থাকে। বাইকটি আমি এরই মধ্যে ৪০০কিমি এরও বেশি চালিয়েছি এবং সেই প্রেক্ষাপটে আমি ২৪-২৬কিমি/লিটার মাইলেজ পাচ্ছি এবং ব্রেক-ইন-পিরিয়ড শেষ হলে ৩০+কিমি/লিটার মাইলেজ পাবো আশা করি। সবচেয়ে বড় কথা বাইকটিতে আমি আমার মনের মতো কমফোর্ট পাচ্ছি তা্ই মাইলেজ এবং টপস্পীড নিয়ে আমি খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না।
Superlight এর ভালোদিক গুলো
প্রথমেই বলতে হবে এটি আরামদায়ক। বাইকটির সীট, হ্যান্ডেল বার, ওভারঅল ডিজাইন আমাকে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি এমনকি একটানা ঘন্টার উপরে রাইড করার পরেও। বাইকটি অনেক ভারী মনে হতে পারে কিন্তু এই কারনেই এটি আমাকে দেয় অসাধারন ব্যালেন্স এবং হ্যান্ডেলিং করার সুবিধা। কমফোর্ট, ব্যালেন্স এবং হ্যান্ডেলিং এই তিনের সমন্বয়ে আমি এই বাইকের উপরে পাই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন। এই বাইকটির লুকস এবং কমফোর্ট আমাকে সব সময়েই বিস্মিত করে।
খারাপ দিক
আসলে খারাপ দিক নির্ভর করে রাইডার তার বাইকে কি আশা করে, সেটি না পেলেই তার খারাপ লাগা শুরু হয়। আমি এই বাইকের ইনজিন কিলিং সুইচটি অনেক মিস করি। যদিও এটি মডিফাই করে ইনস্টল করে নেয়া যাবে। অন্য বাইকের তুলনাতে এই বাইক বেশি চওড়া বলে জ্যামের ভেতরে চলতে বা লেন পরিবর্তন করতে কিছুটা সমস্যার মধ্যেই পড়তে হয়। বাইকের পারফরমেন্স এবং কমফোর্টনেসের কাছে এই ছোটখাটো বিষয়গুলো ইগনোর করার মতোই।
কিভাবে আমি বাইকের যত্ন নেই?
ভালো যত্ন ছাড়া কোনো মেকানিক্যাল যন্ত্রই বেশিদিন টেকে না। তাই আমি আমার বাইকের যত্ন নিতে কার্পন্য করি না। প্রথমেই খেয়াল রাখি ইনজিন ওয়েল। যেহেতু বাইকটি একেবারেই নতুন তাই ৩৫০কিমি পরেই ইনজিন ওয়েল পরিবর্তন করি। ব্রেইক-ইন-পিরিয়ডে প্রতি ৫০০কিমি পর পর অবশ্যই ইনজিন ওয়েল পরিবর্তন করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি কখনই যেখানে সেখানে থেকে বাইকে তেল নেই না। বাইকের সেরা পারফরমেন্সের জন্য সেরা তেলই প্রয়োজন। বাইকটিকে আমি প্রতিদিন পরিস্কার করি। আমি কখনই অতিরিক্ত স্পীডে চালাই না কারন আমি বিশ্বাস করি আমার বেচে থাকার প্রয়োজন। সুন্দর ভাবে বাইক চালানো ইনজিন দীর্ঘস্থায়ী করে এবং ভালো রাখে, আর আমি এই কাজটিই করি।
অন্যের প্রতি পরামর্শ
মোটরসাইকেল অনেকেরই পছন্দের জিনিস এবং চালাতেও ভালোবাসে। আপনি যদি আরাম, লুক এবং কনফিডেন্স রাইড চান তাহলে KEEWAY Superlight হবে আপনার সেরা সিদ্ধান্ত। মাইলেজের কথা ভেবে হয়তো আপনি হতাশ হতে পারেন কিন্তু ১৫০সিসি শক্তিশালী ইনজিনের ক্রজারের আরাম এবং স্টাইলের কাছে মাইলেজের কথা আপনার মনেও আসবে না।
উপরেই সবই আমার বাইক নিয়ে আমার দৃষ্টিভংগী। এটির সাথে অন্যের দ্বিমত থাকতেই পারে। আমি আপনাকে বলবো Superlight চালাতে তাহলে বুঝবেন কেনো আমি এর উপরে এতো সন্তুষ্ট।