৮০ বা ৯০ এর দশকে বাংলাদেশে দাপটের সাথে যে মোটরসাইকেলটি চলতো সেটি ছিলো সরাসরি জাপান থেকে আমদানীকৃত পৃথিবীখ্যাত ব্রান্ড হোন্ডার জনপ্রিয় মডেল হোন্ডা ৫০সিসি যেটি হোন্ডা কাব নামেও পরিচিত। সেই হোন্ডা ৫০সিসি মোটরসাইকেলের মাধ্যমে আমি প্রথম মোটরসাইকেল চালানো শিখি ১৯৮৮সালে। তখন আমার বয়স ছিলো ১২ বছর। লাল রং এর ক্লাচবিহীন ৩গিয়ারের মোটরসাইকেলটি চালাতে যেমন সহজ ছিলো, চালিয়েও তেমনি আরাম ছিলো। সেই থেকেই শুরু। এরপরে সময়ের পরিক্রমায় আরো অনেক মোটরসাইকেল চালাতে হয়েছে বা চালানোর সুযোগ হয়েছে কিন্তু আমি আজও মিস করি আমার সেই প্রথম হোন্ডা ৫০সিসি মোটরসাইকেলটিকে।
আমি মোঃ ওয়াহিদুল হুদা, অনেকেই ডালটন নামেই চেনে। পেশায় ব্যাংকার। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এর বগুড়া শাখার ম্যানেজার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। বতর্মানে আমি
Keeway Superlight 150cc ক্রুইজার মোটরসাইকেল ব্যবহার করছি। আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করছি এই মোটরসাইকেল ব্যবহার অভিজ্ঞতা।
আমার মোটরসাইকেল জীবন
বর্তমান বাইকটি ব্যবহারের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাইক ব্যবহার করতে হয়েছে, যেমন ১৯৯৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত Honda 70CC মোটরসাইকেল চালাই। ২০০৭ সালে কিনি Honda 70CC (সেকেন্ড হ্যান্ড)। সেটা ২০০৯ সালে বিক্রি করে কিনি Hero Honda Passion Pro, 100CC মোটরসাইকেল যা এখনও অত্যন্ত চমৎকার সেবা দিচ্ছে। ২০১৬ সালে কিনি Keeyway Superlight 150cc মোটরসাইকেল, যেটি এখন ব্যবহার করে চলেছি।
কেন এই মোটরসাইকেল কিনলাম?
প্রথমতই যেটা আমাকে আকৃষ্ট করেছে তা হলো বাইকটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। আমি বরাবরই Cruiser Series বাইকের প্রতি দূর্বল। এই বাইকটির Price, Getup, Configuration, Country of Origin সব কিছু বিবেচনা করে মনে হল এটা যেন আমার জন্যই তৈরী হয়েছে। হা হা হা।
কন্ট্রোল এবং কমফোর্ট
Cruiser Series বাইকগুলো মূলতঃ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার মতো করেই ডিজাইন করা হয়। আরামদায়ক বাইকিং এর জন্য Cruiser Series বাইকের বিকল্প নেই। আরামের কথা বললে বলব যাদের বাইক চালানোর নেশা আছে আমার মতো অথচ কোমরের সমস্যার জন্য বাইক থেকে দূরে আছেন, তাঁরা এটা ট্রাই করতে পারেন।আমি প্রায়ই রাজশাহী বগুড়া চলাচল করি আমার Hero Honda Passion Pro নিয়ে। পথে একাধিক চা বিরতি দিতে হয় কোমরের সমস্যার কারণে। অথচ সম্প্রতি Keeyway Superlight নিয়ে একটানা পথ চলেছি। বাসায় পৌছে মনে হয়নি প্রায় 120 কিলো টানা বাইক চালালাম! বুঝতেই পারছেন বাইকটি লং রাইডের জন্য পর্যাপ্ত আরামদায়ক। এছাড়াও যেহেতু মোটরসাইকেলটি বেশ ভারী আর মোটা চাকা, সামনে বড় ডিস্ক ব্রেক থাকায় কন্ট্রোলও খুব ভাল।
হেডলাইট
মোটরসাইকেলটির সামনে রয়েছে বড় এবং গোলাকৃতি হেডলাইট যার আলো বেশ উজ্জ্বল, ফলে রাতের বেলা রাইডে আলোরে স্বল্পতাজনিত কোন কষ্টই অনুভব হয় না।
ব্রেকিং
ক্রুজার বাইক ঘন ঘন ব্রেকিং এর কথা ভেবে তৈরী হয না, তবুও সামনের চাকায় ডিস্ক, পেছনে ড্রাম ব্রেক। দু’টোই খুব ভালভাবেই নিজ নিজ দ্বায়িত্ব পালন করে। মোটা চাকার কারনে স্কিড করে না কখনও।
ভালো দিক
- প্রথমতই গর্জিয়াস লুক
- স্টাইলিশ ডিজাইন
- ম্যাট কালো রং
- মোটা চাকা, বড় ব্রেক
- বড় ফুটরেস্ট
- বড়-চওড়া-নরম সীট
- আরামদায়ক হ্যান্ডেল এবং সুইচ
- শক্তিশালী ইন্জিন
খারাপ দিক
- পিলিয়নের(সহযাত্রী) জন্য দুটি সমস্যা। বেকরেস্ট নেই, ফুটরেস্ট আরামদায়ক নয়
- হুইলবেজ বেশি তাই শহরের মধ্যে চালাতে কিছুটা কষ্টকর। বাক নিতে, বাইক ঘোরাতে বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে।
প্রতিষ্ঠানের কাস্টোমার সার্ভিস
বাইকটির প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির কাস্টোমার সার্ভিসের সাহায্য নিতে হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথেই তারা বাইকের সমস্যা খুজে নিয়ে সমাধান করে দেয়।
এই বাইকটি কারা কিনতে পারেন?
আমার মতে Cruiser Series বাইকের একটা নিজস্ব গর্জিয়াস ব্যক্তিত্ব রয়েছে যা ফাঙ্কি স্পোর্টস বাইকের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। যাঁরা সচরাচর দূর পথে ভ্রমণ করেন. আমি বলব তাঁরা এই বাইক কিনতে পারেন এর আরামদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য। যেসব বাইকার বাইক নিয়ে ব্যস্ত রাস্তায় সার্কাস দেখাতে দেখাতে এবং নিরিহ পথচারির গায়ের ওপর পড়তে পড়তে কোনমতে পাশ কাটিয়ে বের হয়ে যান, তাঁদেরকে এই বাইক হতাশ করতে পারে। এটা মূলতঃ ঠান্ডা মাথার সৌখিন বাইকারদের জন্য।
প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং পছন্দ রয়েছে। ব্যক্তিভেদে পছন্দের হেরফের হবেই। আমার যেটি ভালো লেগেছে অন্যের সেখানেই খারাপ লাগতে পারে। তাই রিভিউতে আমার মতের সাথে অমিল হওয়া স্বাভাবিক। আমি চেষ্টা করেছি নিরপেক্ষ অবস্থায় থেকে মোটরসাইকেলটির ভালো-মন্দ দিক গুলো তুলে ধরার জন্য।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।