বর্তমান সময়ে চলাচল করার জন্য বাইক খুব জনপ্রিয়।যারা অনেক ব্যাস্ত থকে তাদের জন্য বাইক খুব সহজ বাহন বলে আমি মনে করি।আমার বাইক অনেক ভালো লাগে তাই অনেক আগে থেকেই আমি অনেক রকম ব্রান্ডের বাইক ব্যাবহার করেছি যেমন ডিস্কভার ১০০, হাঙ্ক ১৫০ ইত্যাদি।আমি অনেক দেশ ঘুরেছি এবং আমি সর্বপ্রথম থাইল্যান্ডে ক্রুজার বাইক গুলো দেখি এবং আমার খুব ভালো লেগে যায়। আমি বাংলাদেশে এসে ঐ ধরনের বাইক খুজতে থাকি এবং একদিন চোখে পরে কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি এবং আমি তার কিছু দিন পর বাইকটি কিনে ফেলি । আমি মোঃ শাহারিয়ার রহমান পেশায় একজন চাকুরিজিবি আমি গত এক বছর তিন মাস যাবত কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি ব্যাবহার করছি এবং এই গত এক বছরে আমি অনেক গুলো পথ পাড়ি দিয়েছি। আজ মটরসাইকেল ভ্যালী আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে আমার গত এক বছরের অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। প্রথমবার রিভিউ দিচ্ছি তাই ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।
ইঞ্জিন
ক্রুজার বাইক হিসেবে বাইকটির ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী। আমি মাঝে মাঝে অনেক দূর পথ পাড়ি দেই সেইক্ষেত্রে বাইকটির ইঞ্জিন অনেক ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে আমাকে । অনেক ক্ষণ চলার পরও ইঞ্জিন বেশি গরম হয়না তবে বাইক থামার পর কট কট শব্দ করে।ইঞ্জিন অনেক স্মুথ এবং খুব ভালো ভাবে সাপোর্ট করছে আমাকে। বিশেষ করে ইঞ্জিনের শব্দ আমার কাছে অনেক ভালো লাগে । সব মিলিয়ে ইঞ্জিন অনেক ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে আমাকে।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
বাইকটি কেনার মূল কারণ ডিজাইন এবং আমার কাছে বাইকটির ডিজাইন ব্যাতিক্রম মনে হয়েছে অন্যান্য ক্রজার বাইকের তুলনাই।এই বাইকটির ডিজাইন অনেক ভালো এবং আকর্ষণীয়। বিশেষ করে বাইকটির আউটলুক খুব দৃষ্টিনন্দন এবং বাইকটির রং আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বাইকটির প্লাস্টিকের কোয়ালিটি অনেক ভালো তবে স্টিকার গুলোর মান অনেক খারাপ।কিছু দিন না যেতেই আমার বাইকের স্টিকার গুলো উঠে যাচ্ছে ফলে বাইকটির আউটলুক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাইকটির হ্যান্ডলবারের রং গুলো খুব তারাতারি উঠে যাচ্ছে।বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম তাই স্পীড ব্রেকারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ইঞ্জিনে ঘষা লাগে এই বেপারটি আমার আছে ভালো লাগেনি।সুইচ গুলোর কোয়ালিটি অনেক ভালো ।সব কিছু মিলে আমার কাছে বাইকটির ডিজাইনটি অনেক ভালো লেগেছে কিন্তু বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি সন্তুষ্টনা।
কন্ট্রোল ও কম্ফোরট
বাইকটির সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক এবং সিটের কোয়ালিটি অনেক ভালো। সিটে বসে সহজে বাইকটি কন্ট্রোল করা যাই। হ্যান্ডেলবারটি বড় হওয়ার কারনে ধরে এবং চালিয়ে অনেক আরাম পাওয়া যাই তবে শহরের মধ্যে বাইকটি কন্ট্রোল করতে একটু সমস্যা হয়। বাইকটি অনেক আরামদায়ক তাই দূরে কোথাও গেলে আমি কোনো রকম পেইন ফিল করিনা। বাইকটি খুব স্মুথ তাই আমি অনেক চালানোর পরও শরীরে কোন রকম ঝিঝি ফিল করিনা। কন্ট্রোল নিয়ে যদি বলতে হয় তবে আমি মনে করি বাইকটির কন্ট্রোল অনেক ভালো এবং দুর্দান্ত যদিও আমি অনেক স্পীডে বাইক চালাইনা তারপরও বাইকটির কন্ট্রোল অনেক ভালো লাগে আমার কাছে। আমি সর্বচ্চো স্পীড তুলছি ৮০ কিলোমিটার এর মাঝে বাইকটি আমাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। বেশ কয়েকবার আমি কষে ব্রেক করেছি তারপরও পেছনের চাকা স্লিপ করেনি। চাকা গুলো মোটা হওয়ার করনে কন্ট্রোল করতে অনেক সুবিধা হয়।গরমের দিন গুলোতে আমি প্রায় দিন অফিস থেকে আসার পর রাতের বেলাই বাইকটি নিয়ে ঘুরতে বের হই। রাতের বেলায় হাডল্যাম্পটি অনেক অনেক ভালো সাপোর্ট করছে আমাকে হাডল্যাম্পটি অনেক আলো দিতে সক্ষম তাই দুরের জিনিস গুলো দেখতে মোটেও সমস্যা হয়না। হাডল্যাম্পটির আউটলুকটি অনেক সুন্দর লাগে আমার কাছে। বাইকটির সাস্পেন্সন গুলো অনেক ভালো আমি অনেক খারাপ রাস্তায় বাইক চালিয়েছি তবুও তেমন ঝাঁকুনি বুজতে পারিনি সামনের ব্রেক ধরলের বোঝা যাই যে সামনের সাস্পেন্সন অনেক স্মুথলি খেলে । সব কিছু মিলে বাইকটির কম্ফোরট ও কন্ট্রোল আমার কাছে দারুন মনে হয়েছে।
সার্ভিস ও মাইলেজ
মাইলেজ নিয়ে আমি খুশিনা কারন আমি প্রায় ৪০ কিলোমিটার মাইলেজ পাচ্ছি ১৫০সিসি বাইক হিসাবে আমি মনে করি তেল খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে মাইলেজ আর একটু বাড়ানো গেলে ভালো হতো বলে আমার মনে হয়। আমি অনেকবার বাইকটি সার্ভিস করাতে নিয়ে গেছি।তাদের ব্যবহার অনেক ভালো কিন্তু অভিজ্ঞ কোনো সার্ভিস ম্যান না থাকার করনে ভালো মতো সার্ভিস করতে পারেনা।
দাম ও সব মিলিয়ে
কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি আমার অনেক সখের একটি বাইক। আমার কাছে দামটি ঠিক মনে হয়েছে কিন্তু হঠাত করে বাজারে বাইকের দাম কমে যাওয়াই আমি অসন্তুষ্ট। যেহুতু আমার সখের বাইক তাই সব মিলিয়ে আমার কাছে বাইকটি অসাধারন লাগে। যদি কেও আরামদায়ক বাইক কিনতে চাই তবে আমি মনে করি কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি দ্বিধা ছাড়া কিনতে পারে।কম্পানির কাছে আমার পরামর্শ যে তাদের বাইকের মালামাল গুলো সহযে পাওয়া যাইনা এবং বাইকের কুয়ালিটি আর একটু ভালো করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।পরবর্তিতে আমার কোন বাইক কেনার ইচ্ছা নাই। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
ভালো দিকঃ আউটলুক, কন্ট্রোল, কম্ফোরট
খারাপ দিকঃ তেল খরচ, রংএর কোয়ালিটি, স্টিকার কোয়ালিটি এবং ব্যাটারি কোয়ালিটি