শুরুটা হয়েছিলো ইয়ামাহা ৫০ সিসি বাইক দিয়ে এবং সেটা ছিলো আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে। ইয়ামাহা ৫০ সিসির ওই বাইক দিয়ে আমার জীবনে প্রথম বাইক চালানোর হাতে খড়ি হয়। তারপর যতই দিন যেতে থাকে বাইকের প্রতি আমার নেশা আরও বাড়তে থাকে। বাইকের নেশা এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে আমি এই পর্যন্ত প্রায় অনেক বাইক ব্যবহার করেছি তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বাইক হচ্ছে বাজাজ পালসার, হিরো হোন্ডা হাংক, হোন্ডা এইচ এস ১০০ সহ বিভিন্ন বাইক ব্যবহার করেছি। এসকল বাইক ব্যবহার করার পর ইচ্ছে হল যে স্পোর্টস বাইক ব্যবহার করবো। অনেক খুঁজাখুঁজির আমার কাছে একটি স্পোর্টস বাইক ধরা দিলো যার নাম লিফান কেপিআর।
লিফানের বাইক কেনার গল্প
আমার বাসা রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আমি ব্যাক্তিগত কাজে একটু ঢাকাতে গিয়েছিলাম এবং ঢাকা যাওয়ার আগে থেকেই আমার মনের মধ্যে ছিলো লিফান কেপিআর।ঢাকায় আমি ব্যাক্তিগত কাজ সেরে লিফানের শো-রুমে গিয়েছিলাম। আমার একটা অভ্যাস আছে যে বাইকের ইঞ্জিন ও থ্রটল না ঘুরিয়ে সাধারণত আমি বাইক কিনি না। লিফানের শো-রুমে গিয়ে তাদেরকে অনুরোধ করলাম যে বাইকের স্টার্ট দিয়ে দেখানোর জন্য কিন্তু তাদের বাইকের ফুয়েল ট্যংকারে কোন তেল ছিলো না বিধায় স্টার্ট দিয়ে দেখাতে পারেনি। শো-রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় একটা কেপিআর দেখতে পাই এবং সেই বাইকের মালিককে অনুরোধ করে স্টার্ট দেওয়াই । থ্রটল ঘুরিয়ে আমাকে আর কিছু দেখা লাগেনি বুঝলাম বাইকটা অনেক ভালো এবং বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য বললাম এবং কিনে ফেলি কেপিআর ১৫০ সিসি। এরপরে সেটা প্রায় ২১ হাজার কিমি চালাই তারপরে বাজারে আসে লিফান কেপিআর ১৬৫ সিসি। ১৬৫ ফাইভের দিকে বেশি মন টানছিল কারন লিফানের বাইকের উপর আমার অন্যরকম এক ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।
কেপিআর ১৬৫ কেনার গল্প
যখন বাইকটা বাংলাদেশে আসে তখন থেকেই উদ্দেশ্য ছিলো এটাই কিনবো। কেপিআর ১৬৫ এর টেস্ট রাইড প্রোগ্রামে গিয়ে বাইকটা রাইড করি এবং আগের ১৫০ বেঁচে দিয়ে রাজশাহীর নাহার মেশিনারিজ থেকে আমার পছন্দের ব্রান্ড লিফান কেপিআর এর ১৬৫ সিসি বাইকটা কিনি। আগের বাইকের থেকে গ্রাফিক্স ও কিছু ফিচারস পরিবর্তন করা আছে। আজকে আমি লিফান কেপিআর নিয়ে আমার প্রথম অনুভূতি ব্যাক্ত করবো।
ডিজাইন
১৫০ সিসির মতই ডিজাইন ও লুক রাখা হয়েছে কিন্তু কালার কম্বিনেশনটা ও গ্রাফিক্সের কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানে আমাদের দেশের দামী প্রিমিয়াম বাইকের প্রায় ৮০ ভাগ অনুভূতি এই বাইকে পেয়েছি।
ইঞ্জিন
ইঞ্জিন অবশ্যই আগের তুলনায় ভালো কারন ১৬৫ সিসি এফআই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। ইঞ্জিনের শব্দটা পূর্বের মডেলের তুলনায় অনেক ভালো এবং ইঞ্জিনের শব্দটা ও এক্সস্ট শব্দটা আগের তুলনায় বেশ ভালো। লিফানের ইঞ্জিনের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস আছে। প্রথম হিসেবে ইঞ্জিনটা সব বাইকের একটু গরম হবেই।
থ্রটল রেসপন্স
থ্রটল রেসপন একটু চালিয়ে বুঝেছি যে ১৫০ সিসির থেকে অনেক ভালো এবং হাইওয়ে তে কিংবা লং ট্যুরে অনেক সাপোর্ট দিবে।
গিয়ার শিফটিং
গিয়ার শিফটিং পূর্বের বাইকের অর্থাৎ ১৫০ সিসির প্রথম অবস্থায় একটু কড়া ছিলো এবং সেটা ৫০০০ কিমি পড় স্মুথ হয়ে যেত কিন্তু ১৬৫ সিসির গিয়ার শিফটিং প্রথম থেকেই অনেক স্মুথ।
বিল্ড কোয়ালিটি
বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে। কিন্তু পূর্বের লিফান কিপিআর ১৫০ এর স্ক্রু গুলো লুজ হতো তাড়াতাড়ি, আমি অবশ্য অন্য স্ক্রুগুলো পরে লাগিয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে লিফান আমাদের দামী প্রিমিয়াম বাইকের প্রায় অনেকাংশই অনুভূতি দিয়েছে তাই একটু সমস্যা মেনে নিতেই হবে আর না মানতে পারলে আমাদের দামী বাইকই কেনা উচিত।
হ্যান্ডেলবার
আমার জন্য স্পোর্টস হ্যান্ডেলবার পারফেক্ট। আপ রাইট হ্যান্ডেলবার আমার সাথে যায় না এবং আপরাইট হ্যান্ডেলবার থেকে আমি এটাই বেশি আরাম অনুভব করি।
ইলেট্রিক্যাল
ইলেকট্রিক্যাল সব বিষয় আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। প্রজেশন হেডল্যাম্প সহ অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল বিষয় অনেক ভালো লেগেছে।
ব্রেক ও সাসপেনশন
ব্রেকিং পূর্বের থেকে অনেক উন্নত করা হয়েছে। আগের ১৫০ সিসি তে হাই স্পীডে ব্রেক করলে তেমন সাপোর্ট পাওয়া যেত না কিন্তু আশা করি এটা অবশ্যই আমাকে যে কোন কন্ডিশনে ভালো সাপোর্ট দিবে। সাসপেনশন অনেক স্মুথ বিশেষ করে পেছনের মনোশক আগের তুলনায় অনেক উন্নত করা হয়েছে।
টায়ার
টায়ারের সাইজ ও গ্রিপ দুটাই অনেক ভালো ভালো।
মাইলেজ
যেহেতু এফআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তাই আশা করা যায় মাইলেজ অনেক ভালো দিবে। আমি এখনও মাইলেজ পরিমাপ করিনি তবে শোরুম থেকে বলেছিলো যে ৪০-৪২ পাওয়া যাবে।
সার্ভিস সেন্টার
রাজশাহীতে তাদের যদিও কোন সার্ভিস সেন্টার নাই তবে কোন সমস্যা পড়লে সেটা কতৃপক্ষ দ্রুত ঢাকা থেকে চলে আসে। এই বিষয়টা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
সিটি রাইড
শহরের মধ্যে জ্যামে পরে থাকলে একটু হাতের কব্জি ব্যথা করে কিন্তু হাইওয়েতে এই সমস্যা হয় না।
দাম
দাম নিয়ে এক কথায় যদি বলি তাহলে বলবো যে অসাধারন। এই দামের মধ্যে স্পোর্টস লুকিং বাইক খুবই বিরল। আর লিফানের প্রতি তো ভালো বাসা আমার আগে থেকেই আছে।
সব মিলিয়ে পরিশেষে আমি বলবো যে যারা ভালো মানের স্পোর্টস বাইক কম দামের মধ্যে কিনতে চান তারা অবশ্যই লিফান কেপিআর চেষ্টা করে দেখতে পারেন।আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।