Lifan KP150 V2 বাইকটা আসলে খুব পরিচিত বাইক না। এমনকি অনেক লিফান রাইডারও এই বাইকটা চিনেন না।
অনেকেই এই বাইকটি কে KPT ভেবে ভুলও করে থাকেন, যদিও তা শুধু আমার ম্যাট ব্ল্যাক কালারটাই। যাই হোক ঢেকির কচকচানি অনেক হইল ভাই, এবার আসি আসল কথায়। সেটা হলো, এই বাইকের রিভিউ অথবা ব্যাবচ্ছেদ।
আগেই আসি ভাল দিক গুলোর ব্যাপারে, তারপর নাহয় খারাপ দিক গুলো নিয়ে গবেষনা করা যাবে।
আমি বাইক বের করেছিলাম ১৭/৭/২০১৭। আমার বাইকের বর্তমান ODO ২৩১৪৭ কিমি. মাত্র।
ডিজাইন ও আউটলুক
ডিজাইনের ক্ষেত্রে বলতে হয় এই বাইকের ডিজাইনটা একবারে যে অসাধারণ তা বলা যাবে না তবে কি যেন একটা আছে যা এই বাইককে ইউনিক করে তুলেছে। বাইকের আউটলুকে একটা ম্যাসকুলার লুক আছে যেটা অনেক কুল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই বাইকের ডিজাইনটা এমন ভাবে করা যাতে করে এটাকে কোনভাবেই রেসিং বলে মনে হয় না। যা সিটি এবং অফরোড রাইডের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
মিটার প্যানেলটা সুন্দর, এটাকে আরো আকষর্ণীয় করে তুলেছে এর White LED Panel.
কার কেমন লাগে জানি না ভাই তবে KP150 V2 এর সাইলেন্সারটা আমার কাছে চরম লাগে।
ব্যালান্স
বাইকের ব্যালান্স এর ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় FZ/Gixxer এর মত না বরং একটু হার্ড তবে বাইকের ওজনের কারনে চমৎকার। ঘাড় কম ঘুরে বলে অনেকের অভিযোগ আছে আমার ও ছিল প্রথমদিকে তবে এখন মনে হয় এইটাই বেটার কারন কম ঘোরার কারনে একেবারে কাত হয়ে যায় না যাতে করে ব্যালান্সটা ভাল থাকে, পড়ে যায় না।
মোট কথা ব্যালান্স ভাল তবে বিগিনারদের জন্য না।
ইঞ্জিন পারফরমেন্স
একটা কথা শুরুতে বলে নেয়া ভাল তা হলো KPR V1 & KP 150V2 এর ইঞ্জিন একই। অনেকেই বলেন আলাদা তবে আসলেও আলাদা না একই কারবুরেটর পর্যন্ত। শুধু চ্যাসিস টা আলাদা। এই বাইকের আর সব কিছু নিয়ে কথা বললেও এই একটা জিনিষ নিয়ে কোন কথা হইবে না।
টায়ার, চেইন সেট ও ব্রেকিং
সৎ মন্তব্যে এই তিনটা জিনিষেই দুনিয়ার যত সমস্যা আছে বলে মনে হয়।
১. স্টক টায়ার খুব একটা ভাল না সর্বোচ্চ ১৪০০০ কি.মি চালাইতে পারবেন। তাই পরে আমি চেঞ্জ করে ৯০/৯০-১৭ সামনে ও ১২০/৮০-১৭ পেছনে লাগিয়েছি।
ব্র্যান্ড - RALCO
২. চেইন স্প্রকেট সেট কম বেশী সব বাইকেরই ২০০০০ কি.মি. চলে যেখানে KP/KPR এরটা ১২-১৩ হাজারেই চেঞ্জ করতে হয়। আমারও চেঞ্জ করতে হয়েছে।
৩.আর ব্রেক প্যাড স্টকটা ভাল না একদমই ডিস্ক এ দাগ পড়ে যায়। তবে পরে চেঞ্জ করে স্টক যেটা লাগাইসি সেটার পারফরমেন্স অনেক ভাল।
শক এভজরভার
এই ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা অম্লমধুর বলাচলে। কারন সামনের শক এভজরভার আসলেও খুব ভাল। পেছনের শক-এভজরভার নিয়ে আমি ৭০০০ কি.মি. পর্যন্ত খুব প্যারায় ছিলাম। এমনকি না পারতে আমি ট্রিগারের শকও লাগাইসিলাম ওইটাও ভাল সার্ভিস দেয় নাই। পরে সার্ভিস সেন্টারের হালিম ভাইকে দিয়ে পেছনের স্টক শক-এভজরভারটা একটু মডিফাই করার ফলে এখন পর্যন্ত ভালই আছে।
পরিশেষে, কিছু কথা যা না বললেই নয়।
ভাল দিক
১. বাইকের ইঞ্জিনে এখনো কিছুই করা হয় নাই এমনকি ক্লাচের তারটাও চেঞ্জ করতে হয় নাই আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় ১৭ দিন পর বাইক স্টার্ট দিতে গিয়ে খুব ভয়ে ছিলাম। পরে দেখি ২য় সেলফ এই স্টার্ট হয়েছে।
২. আমি বাইকের ব্রেক ইন সঠিক ভাবে পার করেছি এবং প্রাণপ্রিয় Nurul Abser Rasel ভাইয়ার পরামর্শ মত ব্রেকইন পিরিয়ডএ হাল্কা এক্সেলারেশন বুস্ট দিতাম। যার ফলে আমার বাইক অন্য যেকোন বাইকের চেয়ে আলাদা তা আমি হলফ করে বলতে পারি। আর যারা আমার বাইক চালাইসেন তারা তো জানেনই।
৩. আমি এখন মবিল ইউস করি AXCL Lube এর ফুল সিন্থেটিক GTX-4T(10W-30). এই মবিল দিয়ে ২০০০-২৫০০ কি.মি. চালাই কোন সমস্যা ছাড়া।
৪. আমি আমার বাইকের টপ পেয়েছি ১৩২কি.মি./ ঘন্টা (যমুনা সেতু)
৫. সর্বোচ্চ একটানা রাইডিং ৪১৬ কি.মি চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে ভালুকা হয়ে ঢাকা (+/- ৭ ঘন্টা)
৬. মাইলেজ আসলে নির্ভর করে রাইডিং স্টাইলের উপর তাই বেশী কিছু বলব না। এভারেজ সিটিতে ৩৬-৩৭ আর হাইওয়েতে ৩৮-৪০ পাই।
৭. কিছুদিন আগে হরনেট এর হ্যান্ডেল ইন্সটল করেছি, কন্ট্রোলে অনেক চেঞ্জ এসেছে।
যা ডেভলপ করা প্রয়োজন উচিৎ
১. সিটটা KPR এর মত দুই পার্ট হলে অনেক ভাল হত।
২. পেছনের দিকটা আরেকটু উচু হলে ভাল লাগত দেখতে।
৩. পেছনের ব্যাক লাইট সহ অংশটা খুবই নাজুক, উন্নত করা প্রয়োজন।
৪. একটা ছোট্ট স্প্রীং এর কারনে বার বার স্টার্ট পড়ে যায়, এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
৫. চেইন স্প্রকেট সেট উন্নত না করলেই না।
৬. সিটিং পজিশনিং টা আরও একটু স্পোর্টি হতে পারত যদি পা দানি গুলো জাস্ট ২ ইঞ্চি পেছনে হত।
অনেক বড় লিখা লিখে ফেললাম ভাইয়েরা, আসলে অনেক শখের আর ভালবাসার বাইক তো তাই। সবাইকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।