আমি শোভন বসু , বরগুনা জেলার বেতাগীতে আমার জন্ম । বর্তমানে ভোলা থাকি এবং বাংলাদেশ পুলিশ এ চাকরী করছি । আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার ২৪০০০+ কিমি রানিং Lifan KPR150 বাইকটির সাথে ৩ বছরের পথ চলার অভিজ্ঞতা ।
২০১৭ সালে ইউটিউবে বাইক বিডির Lifan KPR150 বাইকের রিভিউ দেখে কেপিআর ভাল লেগে যায় । ২০১৭ সালের ফ্রেরুয়ারীর ২১ তারিখ বরিশালের বাংলাদেশ মটরস থেকে টেস্ট রাইড না দিয়েই কিনে ফেলি স্বপ্নের Lifan KPR150 বাইক, আর আমার স্বপ্ন পূরন হয়৷
শোরুম থেকে আমার বাসার দূরত্ব ছিল ৫০ কিমি । শোরুম থেকে তেল নিতে পাম্পে চলে যাই প্রথম দিনেই ফুল ট্যাংক ফুয়েল নিয়ে যাত্রা শুরু করি বাড়ির দিকে । ফিলিংস এর কথা বলতে গেলে লাইফে এমন আনন্দময় মুহুর্তগুলো খুব কম ই পেয়েছি ।ব্রেকিং মেনে আস্তে আস্তে আরপিএম ৪/৫ এর মধ্যে রেখে অনেক আনন্দ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি নিজের বাড়ির দিকে ।
এরপর থেকে শুরু হয় কেপিআর এর সাথে পথ চলা । প্রথমে আমি নিয়ম মেনে ২,০০০ কিমি ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ করার চেষ্টা করি। আর আস্তে আস্তে যত দিন যেতে থাকে ততই এর পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করতে থাকলো । যতই দিন যায় ততই তার প্রেমে পড়ি ৷ আসলে কেপিআর ভালো লাগার কারন, এটা একটা স্পোর্টস বাইক আর আমার ছোট বেলা থেকেই স্পোর্টস বাইক পছন্দ তাই সাধ্যের মধ্যে কেপিআর ছিল আমার পছন্দ।
এরপর যারা এটা ইউজ করত তাদের কাছ থেকে বাইকটির মেইন্টেনেন্স এর ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে থাকলাম এবং যত্ন নিয়ে পথ চলতে থাকলাম ৷ যেহেতু বাইকটি ছিল আমার প্রথম বাইক তাই অনেক কিছুই ছিল আমার অজানা যেটা জানতে আমাকে সাহায্য করেছে ক্লাব কেপিয়ার বাংলাদেশ এর ভাই-ব্রাদার এবং এডমিন প্যানেলের ভাইরা । সব মিলিয়ে বাইকটি অসাধারণ ।
বাইকটিতে আমি এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি সিংগেলে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এবং পিলিয়ন নিয়ে ১২২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। বাইকটির সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর রেডি পিকাপ ০-১০০ এর রেস্পন্স যা অনেক গুলো ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এর বাইককে হার মানতে বাধ্য করবে এবং টপ স্পিডে বাইকটির কোন প্রকার ভাইব্রেশন ফিল করিনা এবং হাই স্পিডেও বাইকটি বেশ ভালো পার্ফরমেন্স দেয় ।
বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে বলতে গেলে আমি মনে করি এই সেগমেন্টের অসাধারন ব্রেকিং এর একটি বাইক । ডুয়েল ডিক্স সামনে ৩০০ এম এম এর ডিক্স এর ব্রেক কখনো আমাকে ব্রেক সল্পতা ফিল করায়নি । আর এ জন্যই নিশ্চিন্তে টপ স্পিড তুলতে পারি কারন আমি জানি আমার স্পিড যে কোন টাইমে কন্ট্রোল করার জন্য আমার বাইক প্রস্তুত ।
বাইটির কিছু ভালো দিকঃ
*প্রথমেই ভালো দিক বলতে গেলে বলতে হয় এর লুকস সত্যিই খুব সুন্দর এই বাজেটে সেরা লুকিং বলা যায়৷
*এরপর এর ইঞ্জিন যথেষ্ট পাওয়ারফুল
*১৪.৮ হর্স পাওয়ার ও ১৪ টর্ক
*লিকুইড কুলিং ইঞ্জিন। লিকুইড কুলিং হওয়াতে বাইকটা লং রানে কখনো পারফর্মেন্স ড্রপ করেনি ।
*বাইকটি পারফর্মেন্স এর পাশাপাশি মাইলেজ ও ভালো দেয় আমি হাইওয়েতে ৪৫ এবং সিটিতে ৩৮ এর মত মাইলেজ পেয়েছি৷ এত বেশি থ্রটল রেস্পন্সে এর বেশি মাইলেজ আমি আশা করিনা।
*এর এলইডি প্রজেকশন হেড লাইট যা অন্যান্য বাইক হতে এটাকে আলাদা করে রেখেছে।
*এটার কন্ট্রোল ও ব্রেকিং সত্যি অনেক ভালো এবং এর সাথে এর কার্নারিং এভেলিটি ও খুব ভালো।
বাইকটির কিছু খারাপ দিকঃ
*টার্নিং রেডিয়াস কম।
*সিটি রাইডে অতিরিক্ত জ্যামে হিটিং ইস্যু ফিল করি।
*ব্যক্তিগতভাবে সিটিং পজিশনটা ভালো লাগে নাই ।
*রেয়ার মনো-শক এতটা ভালো লাগেনি।
*চেইন খুব দ্রুত লুস হয়ে যায়, ৫০০ কি.মি. পর পর চেইন টাইট দিতে হয়।
আমার বাইকে একবার পিছনের ব্রেকে সমস্যা হয় আমি সেটা সার্ভিস সেন্টারে জানাই । সার্ভিস সেন্টার থেকে আমাকে ব্রেকের ক্যালিপার খুলে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতে বলে । আমি ক্যালিপার কুরিয়ার করে পাঠাই এবং ১ সপ্তাহ পরে আমার সমস্যার সমাধান সহ কুরিয়ার এ ক্যালিপার আমার ঠিকানায় চলে আসে ।
বেশ কিছু লং ট্যুর করেছি । কুয়াকাটা ,খুলনা ,ঢাকা আরো অনেক জায়গায় ট্যুর করেছি । হাইওয়েতে এর পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করেছে। রেডি পিকাপ, আসাধারন ব্রেকিং, আর লিকুইড কুল ইঞ্জিনের পার্ফমেন্স অসাধারণ। লং রানে আমার ক্লান্তি ফিল হলেও আমার বাইকের পারফর্মেন্স ড্রপ পাইনি কখনোই।
লুকিং ব্রেক ও কন্ট্রোল এর দিক দিয়ে এটা এই সেগমেন্টে জোস একটা বাইক৷ আমার এই ২৪০০০+ কিমি এর মধ্যে ব্রেকিং পিরিয়ড এ আমি এটাতে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল Castorl 20w40 ব্যবহার করছি । এরপর থেকে আমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল Motul 7100 10w40 ব্যবহার করছি । দাম ১২০০ টাকা । ২২০০-২৫০০ কিমি পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । আজ পর্যন্ত নিরাশ করেনি বরং সেরা পারফরম্যান্স পেয়েছি। প্রতিবার ১ লিটার করে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি ।
এই বাইকটা আমাকে পথ চলতে কখনো নিরাশ করেনি এখন পর্যন্ত কখনো বড় কোন সমস্যায় পরতে হয়নি। বাইকের ইঞ্জিনে কোন প্রকার সমস্যা হয়নি এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের নাটগুলো নতুনের মত কখনো খোলার প্রয়োজন হয়নি।
আমার বাইকটিতে আমি কিছু মডিফাই করি । আমি বাইকটিতে স্টিকার মডিফাই করি এবং হর্নেটের সাস্পেন্সন লাগাই ।হাইওয়েতে আর একটু ভালো আলো পাওয়ার জন্য ফগ লাইট ইনেস্টল করি । সিকিউরিটি ডিভাইস লাগিয়েছিলাম পরে ব্যাটারির কথা চিন্তা করে খুলে ফেলি ।
বাইকটা আমি ৩ বছর ধরে রাইড করতেছি এবং এর মধ্যে আমি ২ বার এয়ার ফিলটার, একবার ক্লাচ কেবল, ২ বার স্পার্প প্লাগ, ১ বার চেইন স্পোকেট ও পিছনের ডিস্ক চেন্জ করেছি। ছোট খটো যত সমস্যা হয়েছে তার সমাধান ও পেয়েছি।
১,৮৫০০০/- টাকায় এই রকম একটা স্পোর্টস বাইক আমাদের আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাসেল ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড কে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং সেই সাথে ক্লাব কেপিয়ার বাংলাদেশ এর সকল এডমিন মডারেটর ভাইদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
এত হেল্পফুল ক্লাব পাওয়ার কারনেই কখনো পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি । ছোট খাটো সব সমস্যার সমাধান পেয়েছি হেল্পফুল কেপিয়ার ইউসারদের কাছ থেকে। আমি আমার বাইক নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। আরো অনেকটা পথ চলতে চাই Lifan KPR150 এর সাথে । ধন্যবাদ সবাইকে।